আনারসের পাতা থেকে তৈরি হচ্ছে গবাদি পশুর খাদ্য
Published : ১৫:৫২, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
টাঙ্গাইলের মধুপুরকে বলা হয় আনারসের রাজধানী। মধুপুরের আনারস যেমন সুস্বাদু, তেমনি দেশজুড়ে ব্যাপক সুনাম ছড়িয়েছে।
বর্তমানে আনারসের পাতা দিয়ে বিভিন্ন পণ্যে তৈরি করা হচ্ছে। তবে এবার দেশে প্রথমবারের মতো আনারসের পাতা দিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ গবাদি পশুর খাদ্য তৈরি করা হচ্ছে। ভুষি মিকচার, পিলেট ফিড ও সাইলেজ এই ৩ প্রকার খাদ্য তৈরি করা হয়।
মূলত মিক্সার মেশিনেরের মাধ্যমে তরল প্রোটিন ও দানাদার জাতীয় খাদ্য মিশিয়ে পুষ্টিমান সম্পন্ন পশুখাদ্য তৈরি করে বিক্রি করা হয়।
উপজেলার আউশনারা উনিয়নে ‘ন্যাচারাল গ্রীন এগ্রো এন্ড ফিড মিলসে’ পরীক্ষামূলকভাবে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আনারসের পাতা থেকে গরুসহ বিভিন্ন গবাদি পশুর খাবার তৈরি করা হয়েছে বলে দাবি প্রতিষ্ঠানের মালিকের।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, স্বল্পমূল্যে আনারস পাতার তৈরি পশুখাদ্য একদিকে কৃষকদের সাশ্রয় করবে, ফলে গরুর মাংসের দামও কবে আসবে।
জানা যায়, এ প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ হালিমুর রহমান স্বল্পমূল্যে গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুর খাদ্য তৈরির পরিকল্পনা করেন ২০২১ সালে। পরবর্তীতে গবেষণার জন্য ২০২১ সালে মধুপুরে পরীক্ষামূলকভাবে আনারসের পাতা দিয়ে গরুর খাদ্য তৈরি কার্যক্রম শুরু করেন। ধীরে ধীরে তিনি এ প্রদ্ধতিতে তৈরি খাবার বিভিন্ন খামারীদের কাছে দিতে থাকেন।
বর্তমানে প্রতিদিন তার প্রতিষ্ঠানে ৪-৫ টান খাদ্য তৈরি হচ্ছে। আনারসের পাতার সাথে প্রয়োজনীয় তরল প্রোটিন সংমিশ্রণ করে সাইলেজ তৈরি করা হয়। আনারসের পাতায় দিয়ে তৈরি সাইলেজ মাত্র সাড়ে ৫ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করা হচ্ছে।
বর্তমানে বাজারের ভুট্টার সাইলেজ প্রতি কেজি ১৩-১৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেখানে আনারস পাতার সাইলেজ মাত্র ৫-৬ টাকাতে প্রক্রিয়া করে প্রান্তিক খামারিদের দিচ্ছেন এই প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে পিলেট ফর্মে ৪০-৫০ ভাগ আনারসের পাতা ব্যবহার করে ১৬% প্রোটিন যুক্ত খাদ্য তৈরি করে থাকেন যার মধ্যে ফাইবার, ফ্যাট এবং ক্যালসিয়াম যুক্ত থাকে।
আনারস পাতার এই দানাদার খাদ্য মাত্র ২৯.৯০ টাকা কেজি দরে প্রান্তিক খামারিদের দিচ্ছেন এবং এর সাথে অন্যন্য প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় পুষ্টমান নিশ্চিত করে দানাদার খাদ্য তৈরি করা হয়। বর্তমানে বাজারে অন্যান্য ফিডের এর দাম প্রতি কেজি ৫০ টাকায়।
সরিজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য আনারস পাতা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছে। ওই পাতাগুলো মেশিংয়ের মাধ্যমে প্রসেসিং করা হচ্ছে। অন্যদিকে সারিবদ্ধভাবে আনারসের তৈরি খাদ্যগুলো রাখা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা বলেন, প্রতিদিন ৪-৫ টন খাদ্য তৈরি করা হয়। আনারসের পাতা দিয়ে তৈরি গবাদি পশুর জন্য খাদ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রির জন্য যাচ্ছে। ১ টন খাদ্য তৈরি করতে আমাদের ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে।
ন্যাচারাল গ্রীন এগ্রো এন্ড ফিড মিলসে’র ম্যানেজার ছানোয়ার হোসেন বলেন, আনারসের পাতাগুলো কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করা হয়। পরে বিভিন্ন প্রদ্ধতিতে গরুসহ অন্যান্য গবাদি পশুর খাদ্য তৈরি করা হয়। আনারসের পাতার তৈরি খাদ্যগুলো গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন ফার্মে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রাণি সম্পদ অধিপ্তরের কর্মকর্তারা এই প্রতিষ্ঠানে কয়েক বার পরিদর্শন করেছেন এবং প্রতিষ্ঠানের মালিক তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে থাকেন।
ফরিদপুর থেকে আসা খামারি মোকাদ্দেস হোসেন মনির বলেন, গবাদিপশুর খাবার কেনার জন্য আমি এখানে এসেছি। এখানে আনারসের পাতা দিয়ে তৈরি কম দামে মান সম্মত খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে। আমি তাদের এ কার্যক্রম দেখে খুব খুশি।
এ ব্যাপারে ন্যাচারাল গ্রীন এগ্রো এন্ড ফিড মিলসে’র মালিক মোহাম্মদ হালিমুর রহমান বলেন, গরু খাদ্যের দাম কিভাবে কৃষকদের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে আনা যায় সে লক্ষে ৪ বছর ধরে কাজ করছি। গবেষণার মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে আনারসের পাতায় দিয়ে তৈরি স্বল্প মূল্যে গবাদিপশুর খাদ্য তৈরি করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে গরুর মাংসের দামও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। ক্ষুদ্র খামারি যারা গবাদি পশুর খাবার নিয়ে দুঃশ্চিতায় না পড়তে হয় সেদিক বিবেচনায় নিয়ে আমার এ গবেষনা মূলক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের গবেষণা এখনো চলমান রয়েছে এবং আগামীতে মাত্র ৪.৫০ টাকা কেজির মধ্যে পুষ্টিমান সম্পন্ন পশুখাদ্য প্রান্তিক খামারিদের দিতে সক্ষম হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।
বিডি/ও