কফি চাষে সফল উদ্যোক্তা মাটিরাঙ্গার ললিত মোহন 

কফি চাষে সফল উদ্যোক্তা মাটিরাঙ্গার ললিত মোহন 

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:

Published : ১৩:৪৭, ১৫ জুলাই ২০২৪

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার বাইল্যাছড়ি সাইনবোর্ড এলাকায় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে কফি প্রস্তুত ও বাজারজাত করার জন্য ললিত মোহন ত্রিপুরা নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন জয়া কফি হাউজ নামের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান। 

১৯৯৯ সালে সর্ব প্রথম তিন পার্বত্য জেলায় দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ও পুনর্বাসনের প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে ছয়শ কৃষক পরিবারকে কফি চাষে উদ্বুদ্ধ করে প্রতিজনকে ১০০টি চারা প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড। পরে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে আরো কফি গাছের চারা প্রদান করা হয়।

২০০৫ সালে তৃতীয় ধাপে পার্বত্য চট্রগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া রোবাস্টা জাতের ১০০টি চারা রোপন করেন কৃষক ললিত মোহন ত্রিপুরা। ইন্ডিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন আই ডি এফের কৃষি প্রজেক্টের সুপারভাইজারের সহযোগিতায় আরো ১৪০টি চারা রোপন করেন।এখন তার ৪০ শতক জায়গার উপর ২৪০টি চারা থেকে প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করছেন কফি ফল।
 
আই ডি এফ’র কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন কর্মশালার মধ্যে দিয়ে মানুষকে আত্মনির্ভরশীলতা ও আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তোলার বিভিন্ন বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। সেই প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে কফি চাষের উপর জোড় দেন ললিত মোহন ত্রিপুরা। 

পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকে এস এফ) এর সহযোগিতায় ও ইন্ডিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (আই ডি এফ) এর বাস্তবায়নে ও পরামর্শে মাত্র ২৪০টি চারা দিয়ে শ্রম ও নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে কফির ভালো ফলন করে তাক লাগিয়ে দেন এবং সে কফি ফল বাগান থেকে সংগ্রহ করে বিভিন্ন পদ্ধতিতে প্রসেসিং এর মাধ্যমে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি করেন কফি। পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন তিনি।

খাগড়াছড়ি পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে কফি প্রস্তুত প্রণালীর উপর শর্টকোর্স মেশিনারি ট্রেনিং নিয়েছেন তিনি। সেই ট্রেনিং পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আইডিএফ কৃষি প্রজেক্ট কর্তৃক কৃষি প্রণোদনা হিসেবে নগদ দু’লক্ষ টাকার চেক পেয়ে এবং নিজে ৬০ হাজার টাকা পুঁজি বিনিয়োগ করেন। কিনে ফেলেন কফির তৈরির মেশিনারি সকল সরঞ্জাম পাল্পপিং মেশিন, ডি-হালিং মেশিন, ও গ্রাইনিং মেশিন।

বাগান থেকে সংগ্রহ করা পরিপক্ব কফি ফলগুলো প্রথমে পাল্পপিং মেশিনের সাহায্য কফি ফলের খোসাগুলোকে ছাড়িয়ে নেন। ২৪ ঘন্টা গাজন পদ্ধতিতে রাখার পর ফল থেকে ছোট ছোট বীজগুলোকে বের করে নেয়া হয়। বীজ বের করার পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে প্রখর রোদে শুকানো জন্য রেখে দেন। শুকিয়ে যাওয়ার পর ডি- হালিং মেশিনের মাধ্যমে বীজের খোসা ছাড়িয়ে গ্রীণ কফি সংগ্রহ করে উত্তপ্ত তাওয়ার মধ্যে দিয়ে রোস্টিং করে এবং গ্রাইডিং মেশিনের সাহায্যে পাউডার করে তা পূর্ণাঙ্গ কফিতে রূপান্তরিত করা হয়।

এভাবেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে সদ্য বাগান থেকে তুলে আনা কফির পরিপূর্ণ স্বাদ দিতে নিজেই খুলে বসেন জয়া কফি হাউজ নামের একটি দোকান। যেখানে প্রতিদিন গড়ে ২০০-৩০০ কাপ কফি বিক্রি করেন। প্রতি কাপ কফির মূল্য ৩০ টাকা। দূরদুরান্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে কফি প্রিয় মানুষ প্রতিদিন বিকেল বেলায় ভিড় জমান এই কফি হাউজে।

ললিত মোহন ত্রিপুরা বলেন, এলাকায় কফি বিক্রির পাশাপাশি তিনি তার নিজস্ব উৎপাদিত কফি বাজারজাত করণে বিএসটিআই অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। বিএসটিআই কর্তৃক অনুমোদিত হলে বাজারজাত ও প্যাকেজিং করার কথাও জানান তিনি। 

তিনি বলেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা ও কৃষি প্রণোদনা পেলে নিজের কারখানায় উৎপাদিত প্রকৃতি স্বাদ ও গুণাগুণ পূর্ণ এই কফি সারাদেশে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। পাহাড়ে উৎপাদিত এই কফি চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়লে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরিসহ দেশের অর্থনীতিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সঠিকভাবে নিয়মমাফিক রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে কফি চাষ করতে পারলে ভালো ফলন সম্ভব। আর অর্থকারী ফসল হিসেবে কফি বিক্রি করে লাভবান হওয়া যায়।  

তবে দীর্ঘ ২ যুগ পর পাহাড়ে ও মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় পানীয় কফি। পাহাড়ের আবহাওয়া আর মাটি কফি চাষের উপযোগী হওয়ায় এখন অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকছেন কফি চাষে, পাচ্ছেন সফলতাও। পাহাড়ে উৎপাদিত অ্যারাবিকা ও রোবাস্টা দু’জাতের কফি দেশের চাহিদা মিটিয়ে এ কফি এক সময় দেশের বাইরেও রপ্তানি হবে বলে কফি চাষিদের প্রত্যাশা। 

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সবুজ আলী বলেন, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ১১.৫ হেক্টর জমিতে কফির আবাদ হয়েছিল আর উৎপাদন হয়েছিল ৩৫ কেজি। আর ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্র ১২০০ হেক্টর জমিতে আবাদের বিপরীতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ কেজি। এ উপজেলায় কফি চাষের সঙ্গে জড়িত আছেন প্রায় ১৩ চাষি।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement