টাঙ্গাইলে বন্যায় তলিয়ে গেছে জমির ফসল, দিশেহারা কৃষক
Published : ১৯:২১, ১৫ জুলাই ২০২৪
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে টাঙ্গাইলের নদ-নদীতে কয়েক সপ্তাহ ধরে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে ৬ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের ১০৮টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।
এসব এলাকায় ৪ হাজার ৬০১ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে বন্যার পানিতে। ফলে ২৯ হাজার ৩৩৫ জন কৃষকের ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। কৃষকের জমির ফসল পানিতে ভাসছে ও তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার কৃষকরা।
সরেজমিন টাঙ্গাইল সদরের রসুলপুর, গালা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। নৌকা ও কলা গাছের ভেলা ছাড়া কেউ বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। গ্রামগুলোর কৃষকদের ধান, পাট, তিল ও সবজি খেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকের পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। এছাড়া গবাদি পশু নিয়েও বিপাকে আছেন বানভাসি মানুষরা।
গালা গ্রামের কৃষক হুমায়ন সিকদার ও শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবারের বন্যায় আমার ধান ও পাটের খেত নিমজ্জিত হয়েছে। প্রায় লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। রসুলপুর গ্রামের কৃষক মহাদেব সাহা বলেন, বন্যার কারেণ ১২ দিন ধরে রসুলপুর বাজারে গবাদি পশু নিয়ে থাকছি। এখনো ত্রাণ সহযোগিতা পাইনি।
ফৈলারঘোনা গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, বাড়ির চারদিকে পানি। নিজের মোটরসাইকেল অন্যজনের বাড়িতে রেখে যাতায়াত করতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের গ্রামে কোনো সহযোগিতা আসনি। নিম্নআয়ের মানুষ যারা, তাদের অনেকেই অনাহারে দিন অতিবাহিত করছেন বলে জানতে পেরেছি।
গাবসারা ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের সফিকুল ইসলাম বলেন, গেল কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর সবচেয়ে বেশি বন্যা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমাদের চরাঞ্চলের তিল, পাট, আউশ ধানসহ বিভিন্ন সবজি পানিতে তলিয়ে পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। চারদিকে পানি আর পানি। এসব ফসল তলিয়ে যাওয়ায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়েছি।
কয়েড়া গ্রামের মজিবুর রহমান বলেন, ১ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের ঢেঁড়শ, মরিচ, পুঁইশাক ও পাটশাকসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেছিলাম। মুহুর্তেই পানিতে তা তলিয়ে পঁচে যাচ্ছে। এসব ফসল তলিয়ে যাওয়ার কারণে অবশিষ্ট আর কিছু রইল না। ঘুরে দাঁড়াতে কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে, চলমান বন্যায় অর্জিত ৮৯০ হেক্টর জমির আউশ ধানের মধ্যে তলিয়ে ও পঁচে গেছে ৫৮০ হেক্টর জমি, অর্জিত পাট ২ হাজার ৮৩৫ হেক্টর জমির মধ্যে তলিয়ে গেছে ২৮০ হেক্টর জমি, অর্জিত ১ হাজার ৬১০ হেক্টর তিলের মধ্যে তলিয়ে গেছে ১০ হেক্টর, অর্জিত ৩২০ হেক্টর জমির মধ্যে তলিয়ে গেছে ২০ হেক্টর ও অর্জিত ৫১০ হেক্টর বোনা আমনের মধ্যে তলিয়ে গেছে ২০ হেক্টর জমির ফসল।
এ ব্যাপারে ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোখলেছুর রহমান জানান, টানা ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে চলতি মৌসুমে প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান, তিল, পাট ও বোনা আমনসহ বিভিন্ন ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এ বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের কৃষি প্রণোদনা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কবির হোসেন বলেন, টাঙ্গাইলে কৃষকদের বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে তাদের সহযোগিতা করা হবে।
টাঙ্গাইল জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা ফাহিম হাসান বলেন, প্রতিটি উপজেলা জিআরের ২০ মেট্রিক টন করে চাল দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার করে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। নগদ অর্থ ও নৌকা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে, প্রয়োজন হলেই দেওয়া হবে।
বিডি/এন