লাভজনক বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি

লাভজনক বিলাতি ধনিয়া পাতা চাষ পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published : ১৫:৫৫, ৩০ অক্টোবর ২০২৪

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের একটি অন্যতম লাভজনক অর্থকরী মসলা ফসল বিলাতি ধনিয়া বা বাংলা ধনিয়া। এর পাতা ও কচি পুষ্পদণ্ড একাধারে সবজি, সালাদ এবং মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিলাতি ধনিয়া প্রধানত খরিফ মৌসুমের ফসল তবে বছর জুড়ে বিলাতি ধনিয়া পাতার চাষ করা যায়। তবে এই পাতার বীজ সাধারণত (খরিপ মৌসুমে) নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের দিকে বনলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

জমি ও চাষা পদ্ধতি:

জৈব সার সমৃদ্ধ সুনিষ্কাশিত দোআঁশ মাটি বিলাতি ধনিয়া বা চাসনি পাতার চাষের জন্য উত্তম। এই পাতার চাষাবাদের জমি ৪-৫ বার চাষ ওমই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে। কারণ বিলাতি ধনিয়া পাতার বীজ খুব ছোট হওয়ায় বড় আকারের ঢেলার মধ্যে গজানো সম্ভব হয়না। এছাড়া মাটিতে প্রয়োজনীয় রস বা জো থাকা অবস্থা থাকা বীজ বোনা উত্তম।

বপনের পূর্বে বেশি পরিমাণ পানিতে বীজ ৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং ভিজানো পানি চায়ের লিকারের মত লালচে রঙ ধারণ করে। ঘন ছাঁকনি বা পাতলা কাপড় দিয়ে বীজ ছেঁকে পানি ফেলে দিয়ে ৪ ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখতে হবে। পরে একই পদ্ধতিতে আবার ভিজাতে হবে এবং ছাঁকতে হবে। এভাবে ৬-৮ বার বিলাতি ধনিয়ার বীজ (৭২-৯৬ ঘণ্টা) প্রাইমিং করে গজানোর হার দ্বিগুন করা যায়।

বিলাতি ধনিয়া পাতা জাতীয় ফসল হওয়ায় এর জন্য ইউরিয়া ও পটাশ জাতীয় সার বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বীজ বপনের পূর্বে শতাংশ প্রতি ৮০ কেজি পচা গোবর বা আবর্জনা পচা সার ২০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৮০০ গ্রাম টিএসপি ও ৮০০-১০০০ গ্রাম এমওপি শেষ চাষের সময় বীজ বপনের ৪/৫ দিন পূর্বে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা গজানোর ৩০ দিন পর থেকে ১ মাস অন্তর অথবা প্রতি দুইবার ফসল সংগ্রহের পর প্রতি শতাংশে ২০০ গ্রাম হারে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগ করতে হবে। তবে ইউরিয়া উপরি প্রয়োগের পরপরই হালকা ঝরনা সেচ দিতে হবে। এতে সার ভালভাবে মাটিতে শোষিত হবে আর পাতায় লেগে থাকা ইউরিয়া দূর হয়ে পাতা পুড়ে যাওয়ার হাত থেকে ফসল রক্ষা পাবে।বিলাতি ধনিয়ার পাতা নরম, চওড়া ও মসৃণ হওয়ার জন্য জমিতে ছাউনী দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় প্রখর সূর্যালোকে পাতা শক্ত ও কাঁটাযুক্ত হয়ে যায় এবং দ্রুত ফুল উৎপাদনের ফলে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায়। বিলাতি ধনিয়ার জন্য সব সময় পর্যাপ্ত রস থাকতে হবে আবার গাছের গোড়ায় পানি জমতে দেওয়া যাবে না। এজন্য ঝরনা পদ্ধতিতে মাটির অবস্থা বুঝে (৪-৭ দিন পরপর) হালকা সেচ দেওয়া ভাল।

বিলাতি ধনিয়ার ক্ষেতে ছাউনি না দিলে প্রখর সূর্যালোকের কারণে ধনিয়ার পাতা শক্ত ও কাঁটাযুক্ত হয়ে যায়; আবার সূর্যালোক না পাইলে ফলন ভাল হয় না। মোট সূর্যালোকের ২০-৪০ ভাগ বিক্ষিপ্ত আলো বিলাতি ধনিয়ার জন্য যথেষ্ট। এজন্য বাঁশের তৈরি মাচায় নারিকেল পাতা, ছন, ধৈঞ্চা, কলাপাতা ইত্যাদি দিয়ে ছাউনি করা ভালো।

বিলাতি ধনিয়া আর্দ্রতা বেশি পছন্দ করে, তাই জমিতে রস থাকা উত্তম। তবে জলাবদ্ধতা হতে দেয়া যাবে না। বৃষ্টি সময়ে অতিরিক্ত পানি বের করে দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুকনো মৌসুমে ৭ দিন অন্তর অন্তর সেচ দিলে সবচেয়ে ভালো।

রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা:

সাধারণত বিলাতি ধনিয়া পাতায় তেমন রোগ ও পোকার আক্রমণ হয় না। তবে গোড়ায় পানি জমলে বা মাটি বেশি স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেলে গোড়া পঁচা রোগ ও পাতা ঝলসানো ছত্রাকজনিত রোগ দেখা দিতে পারে। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে এ রোগ দমন করতে হবে।

ফলন ও ফসল সংগ্রহ:

সাধারণত বিলাতি ধনিয়ার সম্পূর্ণ গাছ তুলে সংগ্রহ করা হয়। ১৫-২৫ সেন্টিমিটারের মতো পাতাসহ লম্বা গাছগুলো তুলে নেওয়া হয়।

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement