পলিথিন মুক্ত দেশ গড়লে সুদিন ফিরবে সোনালী আঁশে

পলিথিন মুক্ত দেশ গড়লে সুদিন ফিরবে সোনালী আঁশে

রংপুর প্রতিনিধি:

Published : ১৯:৪৬, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম ছিল সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের। রংপুর অঞ্চলের উৎপাদিত পাট দিয়ে তৈরি হতো কাপড়, শতরঞ্জি, পাপোশ, ব্যাগ, বস্তাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র।

বিশেষ করে নারীদের দক্ষ হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করা জিনিসগুলো নজর কাড়তো যে কোনো মানুষের। 

একটা সময় দেশব্যাপী সাড়া পাওয়ায় পাটের ব্যাপক চাহিদায় ভাগ্য বদলায় রংপুর অঞ্চলের কৃষকদের। আধুনিকতার ছোঁয়ায় বাজারে পলিথিনের আগমনের সময় থেকেই পাটের জগতে নেমে আসে অন্ধকার। এতে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কমতে থাকে চাষ ও পাট চাষির সংখ্যা।

পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আবারও ফিরতে পারে সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের সুদিন। রংপুর নগরীর টার্মিনাল থেকে মডার্ণ মোড় এলাকায় রাস্তার পাশেই রয়েছে কয়েকটি পাটের গোডাউন। পাট ট্রাকে তুলতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। পাটের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। 

পলিথিনমুক্ত দেশ গড়ার ঘোষণা চাষিদের মধ্যে নতুন স্বপ্ন জাগিয়েছে। এই সিদ্ধান্তে আবারও সুদিন ফেরাতে খুশি রংপুরের পাট চাষিরা। 

পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিনের ব্যবহার কমলে পাট পণ্যের ব্যাপক চাহিদা বাড়বে। এতে করে অতীতের ন্যায় আবারও ন্যায্য মূল্য পাবেন কৃষকরা। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কঠোরতায় কাপড় কিংবা কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন ক্রেতারা। 

আবহাওয়া অনুযায়ী, পাট চাষের জন্য রংপুর অঞ্চলের মাটি ও জমির ধরন বেশ উপযোগী। এই অঞ্চলের মাটিতে পাটের বাম্পার ফলন সম্ভব। আবারও উৎপাদন বাড়ালে দেশ-বিদেশে পাটের চাহিদা পূরণ সম্ভব বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ। 

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা প্রতি মণ পাট ২৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে পাটের বাজার ৩৫০০-৩৮০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অনেকেই আরও বেশি দামের আশায় পাট মজুদ করেছেন।

পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধের পাশাপাশি পাট চাষে আগ্রহ ও ন্যায্য দাম পেলেই পাট শিল্পকে ধরে রাখা সম্ভব। দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা প্রকল্পের অধীনেই দুই মাস পর ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হচ্ছে এর বাণিজ্যিক উৎপাদন। 

গত ২০ অক্টোবর এমন সিদ্ধান্তের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি)। এর উৎপাদন প্রযুক্তি-কৌশল ও উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে চায় সংস্থাটি। এতে বাণিজ্যিকভাবে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে সোনালী আঁশ।
 
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের পাট চাষি আলম মিয়া বলেন, জন্মের পর হাতে দ্যাকোছি পাটের আবাদ সুবাদ করে বাপ-দাদায়। পাছে পাছে হামরায় হাল ধরি ক্ষ্যাতোত।
 
পাট আবাদ করি দাম পাই না। সউগ কষ্ট হামার বিফলে যায়। এইতন করি ধরি আছি পাট আবাদ। এল্যা যদি আগের নাকান আবার দাম পাওয়া যায়, পাটের চাহিদা থাকে বাজারোত তাইলেতো কষ্ট কমবে। অনেক কৃষক আবাদ ছাড়ছে দাম পায় না জইনতে। 

সোনালী আঁশে সুদিনের আশায় রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, পাটের ন্যায্য মূল্য দিতে হবে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত প্রণোদনা দিতে হবে। পলিথিনমুক্ত দেশ গড়তে পাট চাষ বাড়াতে হবে। 

সেই সাথে বন্ধ পাটকলগুলোও চালু করতে হবে। এগুলো করা গেলে সোনালী আঁশের সুদিন ফিরবে। কৃষক লাভবান হলে আবার পাট চাষ শুরু করবে। 

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর কৃষি অঞ্চলের রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার ৫৪ বেল পাট।

রংপুর পাট চাষের জন্য উপযোগী অঞ্চল। চাহিদার সাথে উৎপাদন বাড়লে পাটের সুদিন ফেরানো সম্ভব।
 

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement