সফল কৃষি উদ্যোক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহিম
Published : ২৩:০৯, ১ নভেম্বর ২০২৪
সোনার হরিণ নামে খ্যাত সরকারি চাকুরি করা জন্য স্বপ্ন নেই তার। বরং ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন উদ্যোক্তা হবেন। নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্য আর কিছু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
এমন ভাবনা ছিল ছোট বেলা থেকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ভাবতেন কৃষি উদ্যোক্ত হব। দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অবদান করার চেষ্টা করবো।
এমন ভাবনা থেকে এক শিক্ষকের বাসার ছাদে মাল্টা চাষ দেখে অনুপ্রাণিত হন ফারাদুজ্জামান ফাহিম।
করোনা মহামারির মধ্যে যখন বাড়িতেই থাকতে হচ্ছিল, তখন শুরু করেন মাল্টা চাষ। মাল্টার ফলনের প্রথম বছরে সফলতা ধরা না দিলেও হতাশ হননি। চলতি মৌসুমে ১০ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা রয়েছে তার।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তরুণ উদ্যোক্তা ফারাদুজ্জামান ফাহিম।
মাল্টা চাষে বাজিমাত করেছেন তরুণ এই উদ্যোক্তা। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি ৪ জনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। ফারাদুজ্জামান ফাহিমের বাড়িনীলফামারীর ডোমার উপজেলার জোড়াবাড়ী ইউনিয়নের মির্জাগঞ্জ গ্রামে।
গ্রামের মির্জাগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফলে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে। এখন তিনি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত।
ফাহিমের বলেন, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সাড়ে ৩ একর জমিতে ৯২০টি মাল্টা ও ৪০টি কমলার চারা রোপণ করা হয়। রোপণের দ্বিতীয় বছর আশানুরূপ ফলন না পেলেও হতাশ হননি তিনি। ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন ফলনের প্রথম বছরে।
তবে চলতি বছরে আবহাওয়া অনুক‚লে ও ভালো ফলন হওয়ায় ১০ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রির সম্ভাবনার কথা জানান তরুণ এই উদ্যোক্তা। চলতি বছরে ইতোমধ্যে ৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন ফাহিম।
এ মাল্টা সহজলভ্য হওয়ায় প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক ভূমিকা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা চেষ্টা করছেন তিনি। ফারাদুজ্জান ফাহিম নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি সৃষ্টি করেছেন গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান।
তার মাল্টা বাগানে ৪ জন শ্রমিক প্রতিনিয়ত বাগান দেখাশোনা ও পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আছে। এছাড়াও মৎস্য খামার এবং মাঠ ফসলের বিভিন্ন প্রজেক্টে ১০ জনের অধিক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন।
এ বিষয়ে ফাহিম বলেন, ২০২১ সালে ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড পাবলিক কলেজে পড়াশোনার সময় এক শিক্ষকের ছাদ বাগানে মাল্টা চাষ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি, পরে সশরীরে বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন এবং স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে তৎকালীন উপজেলা কৃষি অফিসারের পরামর্শক্রমে মাল্টা বাগান করা হয়।
গাছের চারা রোপণের দ্বিতীয় বছরে বাগানে সেভাবে ফলন না হলেও হতাশ হয়নি। এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করা হয়েছে। আরও ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করা হচ্ছে।
বাগানে পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত মহির উদ্দিন বলেন, আমরা সব সময় বাগানে থাকি, বাগান দেখাশুনা করি। যদি কোনো গাছে সমস্যা দেখা দেয় ফাহিম যদি বাইরে থাকে তাহলে তাকে ফোন করে জানানো হয়। যদি মুখের কথায় সেটা বুজতে না পারে তাহলে ছবি তুলে পাঠানো হয়। এরপর তিনি ফোনে জানিয়ে দেয় কি কি করতে হবে।
দুলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেন, ফাহিম যখন শুরু করে আমরা মনে করেছি লেবুর বাগান করবে। এরপর যখন জানতে পারি, মাল্টা বাগান করবে আমরা ভেবেছিলাম ছোট একটা ছেলে সে কি পারবে করতে।
আমরা জানি আমাদের এলাকায় তো এসব হয় না। কিন্তু বর্তমান অবস্থা দেখে আমরা অবাক, এলাকায় এত সুন্দর মাল্টা হবে আমরা ভাবতেও পারি না। ৯ বিঘা জমির ওপর অসাধারণ এক মাল্টা বাগান করেছে ফাহিম। মাল্টা গাছগুলো দেখতে বেশ সুন্দর।
ফাহিম পরিশ্রমি ছেলে। ছাত্রজীবনে পরিবার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে যা দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করবে পাশাপাশি গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকারত্ব কমিয়ে নিয়ে আসবে।
যুবকরা যদি ফাহিমের মতো আগ্রহী হয়ে উঠে, তাহলে দেশে বেকারত্বের হার অনেকটাই কমে আসবে।
ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ফাহিম উপজেলার একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় ৩ একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন। তার বাগানে প্রায় ১০০০টি বারি মাল্টা-১ জাতের গাছ এবং ১৫০টির মতো কমলার গাছ আছে।
এ বছর প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছেন। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করেন। এছাড়া আমরা প্রায়ই তার বাগান পরিদর্শন করি। আমরা আশা করি, ফাহিমের মতো তরুণ উদ্যোক্তাদের হাত ধরেই বদলে যাবে দেশের কৃষি কার্যক্রম।
বিডি/ও