বীজ সংকটে রংপুরের আলুচাষিরা

বীজ সংকটে রংপুরের আলুচাষিরা

রংপুর প্রতিনিধি

Published : ২২:০৯, ২৪ নভেম্বর ২০২৪

গত বছর আলুতে কৃষকদের ভাগ্যবদলে এবারও স্বপ্ন বুনতে অধিক আগ্রহী কৃষকরা। মৌসুমের শুরুতেই আগাম আলুর চাষ শুরু করেছেন চাষিরা। কিন্তু কাজে নেমেই তারা পড়েছেন বীজ সংকটে। লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৬ হেক্টর জমিতে নির্ধারণ করা হলেও এবার আলুর আবাদ লক্ষ্য মাত্রার অধিক হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

গত বছর রংপুরের ৫ জেলায় ১ লাখ ৬০২ হেক্টর জমিতে আলু আবাদ করে ভাগ্য বদলেছিল কৃষকদের। এবারও দাম ভালো পাওয়ার আশায় আলু আবাদের আগ্রহ বাড়ায় চাহিদা অনুযায়ী জোগান সংকট বীজ আলুর। ফলে কেজিপ্রতি বীজ আলুতে গুনতে হচ্ছে বাড়তি ১৫-২০ টাকা। লাগামহীন আলুর দামের পর এবার বীজ বৃদ্ধির পরে এবার বীজ সংকটের আশঙ্কা করছেন রংপুর অঞ্চলের কৃষকরা। এরই মধ্যে এ অঞ্চলে আলুবীজের বরাদ্দ কমিয়েছে সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন।

হেমন্তের আমন ধান কাটার পর রংপুরে আলু রোপণের প্রস্তুতিতে বীজ কেনায় ব্যস্ত কৃষকরা। রংপুরের দুই একটি উপজেলায় আগাম আলু রোপণ শুরু হলেও ধানকাটা শেষ না হওয়ায় পুরোদমে ধুম পড়েনি মাঠে। এদিকে মৌসুমের শুরুতেই প্রতিকেজি বীজ আলুর দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা বাড়ায় ভরা মৌসুম নাগালের বাইরে দাম যেতে পারে বলে শঙ্কা কৃষকদের।

বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বলছেন, বিএডিসি থেকে আলু বীজের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ দশমিক ৩২ টন। চাষের জন্য আলুবীজের চাহিদা ১ লাখ ৬৭ হাজার টন।

ছয় বছরে রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলায় ৯ হাজার ২০২ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। কিন্তু বীজের বরাদ্দ কমেছে প্রায় ১ হাজার ৪২৮ দশমিক ৭৫৯ টন।

কৃষি অফিস তথ্য সূত্রে জানা গেছে, মোট আলু বীজের সাত ভাগের এক ভাগ বিএডিসিসহ বিভিন্ন কোম্পানি থেকে পাওয়া যায়। বাকি ছয়ভাগ খাবার আলুকেই বীজ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

হিমাগার মালিক সমিতি, স্থানীয় ব্যবসায়ী, কৃষক ও বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, মোট আবাদের ৩০ শতাংশ আলু বীজের প্রয়োজন হয়। রংপুর অঞ্চলে প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টনের মত বীজের প্রয়োজন হয়। সে ক্ষেত্রে বিএডিসি সরবরাহ করতে পারে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন। বড়-বড় কৃষক রোপণের বীজ আলু নিজেদের সংগ্রহে রাখলেও ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বীজ আলু ব্যবসায়ী পর্যায়ে সংগ্রহ করতে হয় কৃষকদের।

এদিকে বীজ আলুর দামে সিন্ডিকেটের অভিযোগে কৃষকদের মাঝে হাহাকার উঠেছে। নিরুপায় হয়ে বেশি দামে বীজ আলু সংগ্রহ করছেন। আলু বীজের বাড়তি দাম নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে কৃষক।

বীজ আলুর বাড়তি দাম নিয়ে কৃষকেরা অভিযোগ করে বলেন, ‘বাজারে আলুর নিয়ন্ত্রণ মধ্যস্বত্বভোগীর কাছে চলি গেইছে। এবার ন্যায্যমূল্য থাকি হামরা বাদ পড়ছি। আগের বার মৌসুমে ৬০-৭০ টাকা কেচিতে আলু আছিল। একবিঘা জমিতে বীজ আলু লাগে ২১৪ কেজি। এল্যা কেজিত আলুর দাম ২০-২৫ টাকা দাম বাড়ি গেইছে। কেজিত গড়ে ২৯ টাকা বাড়িয়া এক বিঘাত চার হাজার টাকা বেশি নাগবে৷ বিএডিসি বীজ আলু গত বছর আছিল ৫৫ টাকা, এবার হইছে ৬৫ টাকা, তার থাকিও বেশি দামে বিক্রি করেছে।

এ বছর বাজারে বিভিন্ন জাতের বীজ আলু বিক্রি হচ্ছে প্রকারভেদে ৭৫-১১৫ টাকা পর্যন্ত। যা গত বছরের চেয়ে বেশি হওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে কৃষকদের গুনতে হচ্ছে বাড়তি ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা।

আলু বীজের বাড়তি দাম নিয়ে ব্যবসায়ীরা বলেন, গত বছর আলুর বাম্পার ফলন ও দাম দ্বিগুণ পাওয়ায় এ বছর চাহিদা বেশি। তবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী অভিযানের ভয়ে বীজ আলুও আগাম বিক্রি করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল বলেন, এ বছর ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৬ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদ হতে পারে। তবে আলু বীজের অনেকে খাবার আলুকে বীজ হিসেবে বিক্রি করছেন। বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অনেকের আলু আবাদেরে ইচ্ছাও বেড়ে গেছে, তবে চাহিদার তুলনায় বীজ সংকটে দাম বেশি।

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement