কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সারের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ, বিপাকে কৃষক
Published : ২২:৫৮, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪
চলতি রবি মৌসুমের শুরুতে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিএডিসি ডিলার, সাব-ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করছেন। বিশেষ করে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) সার বেশি দামে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
বড়বাড়ী ইউনিয়ন বিএডিসি ডিলার মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স'র প্রোপাইটার রমজান আলী ও মাহবুবুর রহমানের দোকানে ৩দিন ঘুরেও পাইনি এক বস্তা সার। এমন অভিযোগ বড়বাড়ী গ্রামের কৃষক ফারাজুল ইসলামের।
কৃষকদের অভিযোগ, ডিলাররা কৃষকদের কাছে সার বিক্রি না করে অতিরিক্ত দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন। পরে সেই সার খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে কৃষকদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এরপরও চাহিদা মতো সার পাচ্ছেন না তারা। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সারের কোনো সংকট নেই বলে দাবি করছেন।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিনে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডিলার ও খুচরা সার ব্যবসায়ীরা টিএসপি প্রতি কেজি ২৭ টাকা, প্রতি বস্তা- ১৩৫০ টাকা, এমওপি প্রতি কেজি ২০ টাকা, প্রতি বস্তা- ১ হাজার টাকা, ডিএপি প্রতি কেজি ২১ টাকা, প্রতি বস্তা ১০৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
বিক্রেতারা দোকানে মূল্য তালিকা টানিয়ে রাখলেও সে অনুযায়ী বিক্রি করছেন না । প্রতি বস্তা সার সরকারি মূল্যের চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করছেন। কৃষকরা সার কিনতে গেলে ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা সংকটের কথা বলেন। তবে দাম বেশি দিলেই সার পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়াও বিক্রেতারা কৃষকদের বিক্রয় রসিদ দেন না। আর যেটা কৃষকদের দেন তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হয়। ডিলার/খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তারা এভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছে। সরকার অনুমোদিত এসব ডিলার/সাব-ডিলাররা সরকারি নির্দেশনা না মানায় দেখা দিয়েছে সারের কৃত্রিম সংকট। আর এতে বাড়বে কৃষি উৎপাদন খরচ।
উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের রুপগঞ্জ কাশিডাঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ফারাজুল ইসলাম বলেন, বড়বাড়ী ইউনিয়ন বিএডিসি ডিলার মেসার্স ভাই ভাই ট্রেডার্স;র প্রোপাইটার রমজান আলী ও মাহবুবুর রহমানের দোকান ও বিতরণ পয়েন্টে ৩দিন ঘুরেও পাইনি এক বস্তা টিএসপি সার।
এমন অভিযোগ বড়বাড়ীর আরও অনেক কৃষকের। এভাবে লাহিড়ী হাটের ডিলারদেরও বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে।
বড়বাড়ী ডিমাবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, বর্তমানে আলু, গম ও ভুট্টার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এ সময় টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার সংকট দেখা দিয়েছে। দামের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিলেই সার মিলছে।
বিএডিসি ডিলার ভাই ভাই ট্রেডার্সের মালিক রমজান আলী বলেন, সার নেই। চলতি মাসের বরাদ্দকৃত যে সার তুলেছিলাম, তা এলাকার প্রান্তিক চাষীদের স্লিপের মাধ্যমে দিয়ে শেষ হয়ে গেছে। এই একই অভিযোগ ফারাজুল ইসলামেরও।
দুওসুও ইউনিয়নের দুওসুও বানিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, ডিলাররা রাতারাতি সার নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের দিয়ে দিচ্ছেন। এজন্য আমরা সার পাচ্ছি না। বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা প্রশাসন যদি অভিযান চালায় তাহলে আর সারের কৃত্রিম সংকট থাকবে না।
এ বিষয়ে ডিলার রমজান আলী জানান, চলতি মাসে বরাদ্দ পেয়েছি, টিএসপি ৮ মেট্রিক টন, ডিএপি ৩২.২৫ ও এমওপি পেয়েছি ১২.২৫ মেট্রিক টন। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম পাওয়ার কারণে বাজারে সারের কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। যদিও আমি আমার বড় ভাই মাহবুবুর রহমানের লাইসেন্স বার্ষিক চুক্তিতে চালাই, তাতেও সামলাতে পারছিনা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এখন সারের কোনো ঘাটতি নেই। সারের বাজার ও মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং প্রকৃত চাষিদের মাঝে বিতরণ বিষয়ে গতকাল মিটিং করা হয়েছে। এরপরও কোথাও কোথাও সংকটের অজুহাতে বেশি দামে সার বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেব নাথ বলেন, বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। কৃত্রিম সার সংকটের কোনো সমস্যা নেই।
জেলা প্রশাসক ইসরাত ফারজানা বলেন,এ মুহুর্তে ঠাকুরগাঁওয়ে সারের কোন ঘাটতি নেই। রবি মওসুমে যতটুকু সার দরকার তার চাইতে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।তারপরও কোন ব্যবসায়ী অসৎ উদ্দেশ্যে সার মজুদকেরে কালো বাজারে বিক্রির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিডি/এন