গাইবান্ধায় কমলা চাষে সফল হচ্ছেন কৃষক
Published : ১৮:৫৩, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
কয়েক বছর আগেও কমলার গাছ চিনতেন না অনেকেই। কমলা ফল মানে মনে হতো বিদেশি ফল। এখন সেই কমলা চাষ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে। কমলা চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেক কৃষি উদ্যোক্তা।
পথের ধারে বাগান। প্রায় আড়াই বিঘা জমির বাগানে সারি বদ্ধ গাছ, দুই সারির মাঝে হাঁটাপথ। দুই পাশে গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে নজরকাড়া ছোট ছোট কমলা। গাছজুড়ে রসে টইটুম্বুর পাকা কমলার থোকা।
বাগানজুড়ে যেন রসালো চায়না কমলার রঙিন হাসি। বাগানে কমলা গাছে ঝুলে থাকা কমলা নেড়েচেড়ে দেখছেন দর্শানার্থীরা।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটিতে রয়েছে চায়নিজ কমলা বাগানটি। চীন দেশে ব্যাপক চাষ হয় বলে ফলটির এমন নামকরণ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপরহাটি ইউনিয়নের পূর্ব ছাপরহাটি এলাকার মলয় কুমার লিটন বাণিজ্যিকভাবে কমলা চাষ করছেন। ফলনও হয়েছে ভালো।
গাইবান্ধা শহর থেকে সুন্দরগঞ্জের ধর্মপুর বাজার থেকে দেড় কিলোমিটার পশ্চিম দিকে গেলে কমলা বাগানটি চোখে পড়ে। কমলা বাগানের উদ্যোক্তা মলয় কুমার লিটন বাজারে গানের সিডি/ক্যাসেট বিক্রি ও রেকর্ডিংয়ের ব্যবসা ছেড়ে গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা আর রজনীগন্ধার বাণিজ্যিক উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালে ৮০ শতাংশ জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন। ২০২০ সালে করোনা মহামারির প্রভাব পড়ে ফুল বাজারে।
ফুল ব্যবসায় করোনার ধাক্কা সামলে নিতে এবং মন্দা কাটাতে লিটন একই বছর কমলা চাষ শুরু করে। নিবিড় পরিচর্যায় ২০২২ সালে গাছে ফল আসে।
কমলা ছাড়াও বাগানে রয়েছে কাটিমন জাতের আম, বরই, সফেদা, জাম্বুরা। এছাড়া সাথী ফসল হিসেবে বাগানে ২ হাজার বস্তায় চাষ হচ্ছে আদা।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৭ উপজেলায় ৪ হেক্টর সমতল ভূমিতে কমলা এবং ৪৪ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। ছোট-বড় মিলিয়ে জেলায় কমলা ও মাল্টার ৫৭৬টি বাগানে গাছের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। মৌসুমে কমলা ও মাল্টার ফলন আসে প্রায় ৬৩৬ টন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৩ কোটি টাকা।
মলয় কুমার লিটনের বাগানে দেখা যায়, সারি সারি কমলা গাছের ভেতর হেঁটে বেড়ানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চারদিকে শুধু পাকা কমলার থোকা। বাগান থেকে দর্শনার্থী ও ক্রেতারা চায়না ম্যান্ডারিন জাতের সুমিষ্ট রসালো কমলা ক্রয় করছে। বাগান থেকে কমলা ক্রয় করায় বাজারের তুলনায় দামও কিছুটা কমে পাওয়া যাচ্ছে।
লিটন বলেন, ৩ সপ্তাহ ধরে বাগান থেকে কমলা বিক্রি শুরু হয়েছে। গাছ থেকে নিজ হাতে তোলা প্রতি কেজি কমলা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। বাগানে ১০০টি চায়না ম্যান্ডারিন কমলা ও অর্ধশতাধিক মাল্টা গাছ আছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ গাছে ফলন এসেছে।
চলতি বছর প্রায় আড়াই লক্ষ টাকার কমলা বিক্রি করেছেন এবং প্রায় সমপরিমাণ টাকার কমলা পাড়া-প্রতিবেশী ও বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থীদের উপহার দিয়েছেন।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাশিদুল কবির বলেন, ভালো ফলন পেতে কমলা চাষি লিটনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, লিটনের বাগানের চায়নিজ কমলার ফলন ভালো হয়েছে। এ জাতের কমলার জন্ম চীনে। বাজারে চায়নিজ কমলা নামে পরিচিত। স্থানীয় জাতের চেয়ে চায়নিজ কমলা মিষ্টি বেশি।
বিডি/ও