১৫ বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১২ গুণ
Published : ১০:২১, ১৮ নভেম্বর ২০২৪
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। গত আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটে। এ ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ব্যাপক লুটপাট আর অব্যবস্থাপনার কারণে সেই খেলাপি এখন দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকায়। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের টানা তিন আমলে দেশের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা। শতাংশে হিসাব করলে খেলাপি বাড়ার হার ১ হাজার ১৬৮ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। বর্তমানে দেশের ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। এর আগে গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে, গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ২৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ। একই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এ ছাড়া বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ।
অস্বাভাবিক খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক পদ্ধতি অনুসরণ করার কারণে খেলাপি ঋণ বেশি হয়েছে। আগে টার্ম লোনের গ্রেস পিরিয়ড ছয় মাসে ছিল, এখন তা তিন মাসে করা হয়েছে। ফলে খেলাপি ঋণের অঙ্ক বেড়েছে।’
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নীতি সুদহার বাড়া মানে ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়া। এমনিতেই ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ বেশি সুদ দিয়ে আসছিল। নীতি সুদহার বাড়ানোর ফলে সেটা আরও বেড়ে গেছে। এখন নতুন বিনিয়োগ তো দূরের কথা, টিকে থাকার সংগ্রাম করছে ব্যবসায়ী সমাজ। কোথায় কত টাকা খরচ হবে এবং কতটা মুনাফা হতে পারে, সেটা হিসাব করে আমরা বিনিয়োগ করি। কিন্তু মাঝপথে যখন ব্যাংকের সুদহার বেড়ে যায়, তখন সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যায়। কারণ কিস্তির পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মুনাফার হার কমে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের গলা টিপে হত্যা করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। এতদিন ছয়টি কিস্তি দিতে না পারলে একজন গ্রাহক খেলাপিতে পরিণত হতেন। গত সেপ্টেম্বর থেকে তিনটি কিস্তি পরিশোধ না করতে পারলে খেলাপি করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। আবার আগামী মার্চ (২০২৫) মাস থেকে একটি কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলেই খেলাপি করা হবে। এটি ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই খারাপ সংবাদ।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার। ওই সময়ে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দেশের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১ হাজার ৩৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ শেখ হাসিনার শাসনের প্রথম পাঁচ বছরে খেলাপি বেড়েছে ২২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা বা ১২৮ শতাংশ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে অর্ধেকের বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী টানা দ্বিতীয় বারের মতো আবারও ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ। এর পাঁচ বছর পর ২০১৮ সালের শেষে দেশের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর খেলাপি ঋণ বাড়ার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অবদান রাখে আরও ৪২ হাজার ৫৩৯ কোটি টাকা বা ৮৩ শতাংশ।
বিডি/এন