গবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি, আহত ৩০

গবিতে ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে মারামারি, আহত ৩০

গবি প্রতিনিধি

Published : ১৩:৫৬, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাভারে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) আন্ত:বিভাগ ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের মধ্যে দুই দফা মারামারির ঘটনায় আহত হয়েছেন প্রায় ২ডজন শিক্ষার্থী। এ কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফুটবল টুর্ণামেন্ট স্থগিত করেছে গবি প্রশাসন।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রথমে আইন ও বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি (বিএমবি) এবং পরে বিকালে আইন এবং রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আইন বনাম বিএমবি বিভাগের মধ্যকার ফুটবল খেলা চলাকালীন খেলা শেষের ১০ মিনিট আগে ২ খেলোয়ার পড়ে যাওয়ার ঘটনায় মারামারির সূত্রপাত ঘটে।

এ ঘটনায় বিএমবি বিভাগের এক খেলোয়াড়কে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে এবং আরও দুইজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহতদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ক্রীড়া কমিটি উক্ত ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিএমবি বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, ‘খেলার নির্ধারিত সময়ের ৪ মিনিট বাকী থাকা অবস্থায় মাঠের উত্তর পাশের গোলবারে আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা আক্রমণ করে, আক্রমণ ঠেকাতে বিএমবি বিভাগের একজন খেলোয়াড় এগিয়ে আসেন এবং বল নিয়ে গোল লাইনের বাহিরে চলে যান, বলটি তখন আউট হয়ে যায়, আইন বিভাগ কর্ণার কিক পায়। গোল লাইনের বাহিরে চলে যাওয়ার পরে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী স্লিপ করে তার গায়ের ওপর পরে যান। সে সময় ভদ্রচিত্তে ওই দুজন খেলোয়াড় তাদের মধ্যে কথা বলতে থাকেন। কিন্তু আইন বিভাগের উত্তেজিত দর্শকরা মাঠে প্রবেশ করে এবং খেলোয়াড়দের ওপর হামলা চালানোর জন্য আক্রমণ চালায়। ফলে, মাঠের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, হাতাহাতির এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিএমবি বিভাগের এক খেলোয়াড়কে (মুয়াজ) রড দিয়ে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে ফেলেন এবং মেয়েদের গায়েও হাত তুলেন৷ এরপর প্রায় ২ ঘন্টা বাকবিতন্ডা চলতে থাকে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে মাঠে কর্তব্যরত রেফারি, ক্রীড়া কমিটির সভাপতি ও সংশ্লিষ্টরা খেলাটি স্থগিত করেন।’

এ ঘটনা শিথিল হওয়ার ১ ঘন্টা না পেরোতেই দ্বিতীয় দফায় রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সাথে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মারামারির ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, প্রথম ঘটনার পর বিএমবি বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগ করলেও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠেই অবস্থান নেয়। পরবর্তী ম্যাচ রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের সাথে মেডিকেল ফিজিক্স এন্ড বায়োমেডিকেল ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। খেলোয়াড়রা মাঠে এসে মাঠ ছেড়ে দিতে বললে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মাঠ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। পরে তারা মাঠের পাশে অবস্থান নেয়। আইনের খেলোয়াড়রা মাঠে বল নিয়ে খেলার সময় পাশে থাকা রাজনীতির খেলোয়াড়দের গায়ে কাঁদা-পানি আসলে তারা আসতে খেলতে বলে। এসময় তর্কাতর্কির জের ধরে মারামারির ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হৃদয় বলেন, ‘ বিএমবির খেলোয়াড়রা মাঠ ত্যাগের পরও আইন বিভাগের খেলোয়াড়রা মাঠে ফুটবল খেলছিলো। রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী গোলবারের পাশে বসে ছিলো। বল থেকে গায়ে পানি ছিটে আসলে আইনের খেলোয়াড়দের ধীরে খেলতে বলা হয়। কিন্তু তারা তা মানতে অস্বীকৃতি জানায় এবং তর্ক শুরু করে। তর্কের এক পর্যায়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদেরকে মারধর শুরু করে।’

দ্বিতীয় দফায় মারামারির ঘটনায় দুই বিভাগের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষার্থীদের গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সোহাগ রানা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ২৫/৩০ জনের মত চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে দুইজনের ফ্রেকচার ধরা পড়েছে। এক জনের মাথায় সেলাই লেগেছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’

মারামারির ঘটনায় আহত আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সামিউল হক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে জানান, ‘তারা মাঠে খেলা দেখছিল, এক পর্যায়ে আইন বিভাগের এক খেলোয়াড় স্লিপ করে। এসময় এক খেলোয়াড় তাকে আঘাত করতে এগিয়ে আসে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীকে প্রশ্নের জের ধরে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। ঘটনাচক্রে সে নিজেও আহত হয়ে যায়। পরবর্তীতে প্রায় ২ ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকে পরে রেফারি সহ সংশ্লিষ্টরা আইন বিভাগের সাথে কথা না বলেই খেলা বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানায়। কিন্তু আইন বিভাগ অবশিষ্ট ৪ মিনিট পেনাল্টি কিকের দাবি করে। বিএমবি তা প্রত্যাখ্যান করে। পরবর্তীতে শিক্ষকদের নির্দেশে আইনের শিক্ষার্থীরা চুপ থাকেন এবং তারা নিজেরা এক কোণে ফুটবল নিয়ে খেলা করতে থাকে। যেখানে রাজনীতি ও প্রশাসনের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। দৌড়ানো দেখে তাদের একজন নিষেধ করলে। নিষেধ না শোনায় এবং কথায় প্রতিউত্তর করায় আবার কিঞ্চিৎ বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এসময় তারা আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। পরে একই বিভাগের অন্য শিক্ষার্থীরা এসে হামলে পড়েন।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘এ ঘটনায় আইন বিভাগের নারী শিক্ষার্থীরাও হামলার শিকার হন। এমনকি আইন বিভাগের শিক্ষকদেরকেও হুমকি প্রদান করা হয়।’

সার্বিক ঘটনার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির সদস্য জানান, ‘আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গ কারীকে কোনভাবে বরদাস্ত করা হবে না। কোন শিক্ষার্থী করলো সেটি দেখা হবে না। মাঠের মধ্যে যা হয়েছে সেজন্য রেফারির ছিল, তবে মাঠের বাইরে যা ঘটেছে তার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। অপরাধী কখনো কারো আত্মীয় হতে পারে না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আবু মুহাম্মাদ মুকাম্মেল বলেন, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত প্রশাসন খেলা স্থগিত করেছে। আগামীকাল মিটিংয়ে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা সবার আগে।এই পরিস্থিতিতে খেলা চালানো কঠিন। ‘

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো: আবুল হোসেন বলেন, ‘আজকের ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। খেলার মাঝে খেলোয়াড়দের উপর হামলার বিচার হবে। আমরা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এই বিষয় নিয়ে বসবো। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। যারা হাসপাতালে ভর্তি আছে এবং চিকিৎসা নিয়েছে সবার সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় সব খরচ বহন করবে।’

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement