ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখীতে ৬৫ হেক্টর জমির ফসল তছনছ

Published : ১৯:৪৯, ১৩ এপ্রিল ২০২৫
ঠাকুরগাঁওয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডব ও শিলাবৃষ্টিতে বাড়িঘরের পাশাপাশি ৬৫ হেক্টর জমির ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রোববার (১৩ এপ্রিল) রাত ৩ টার দিকে জেলায় আঘাত হানে কালবৈশাখী ঝড়।
রোববার সারাদিন জেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভুট্টা, পেঁয়াজ বীজ, আম, লিচু, পেঁপে, কলা, মরিচসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা দেওয়া তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁওয়ের ৫ উপজেলার ৪৬ হাজার হেক্টর ভুট্টা, ৫৪৭ হেক্টর পেঁয়াজ বীজ, এছাড়াও আম ও লিচু প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ৬৫ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা আকচা মুন্সিপাড়া গ্রামের কৃষক মো. রবিউল ইসলাম ১০ বিঘা জমিতে চাষ করেছিলেন পেঁপে। সব কিছু মিলিয়ে তার জমিতে গাছ ছিল ৪ হাজার। রাতে কালবৈশাখীর আঘাতে বাগানের প্রায় সব গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে।
এছাড়া, বিশেষ করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলাযর চাড়োল ইউনিয়নের কালো সোনা খ্যাত পেঁয়াজ বীজ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাড়োল গ্রামের নূর ইসলাম নামে একজন কৃষক জানান,আর ১০ দিন পার হলেই পিয়াজ বীজ সংগ্রহ করা শুরু হয়ে যেত বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায়।কিন্তু হঠাৎ কালবেশাখী ঝড়ে শত শত কৃষকের স্বপ্ন মাটিতে লুটে পড়েছে ।প্রায় ২ শ কৃষকের ৩৬০ বিঘা জমির পেয়াজ বীজ ক্ষেত বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে।
চাড়োল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সমর কুমার চ্যাটার্জি নুপুর বলেন,আমাদের এলাকার কৃষকদের আয়ের প্রধান উৎস্য হলো পেয়াজ বীজ।পেয়াজের বীজ উৎপাদন করে বেশিরভাগ কৃষক সাবলম্বী হয়েছে।কিন্তু এ বছর কালভেশাকী ঝড় কৃষকের স্বপ্ন ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে।যা কখনো পুষিয়ে নেওয়ার মতো নয়।
অন্যদিকে ভুট্টা ও মরিচ ক্ষেত ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে গেছে। আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়েছে। এমন অবস্থা কৃষকরা চরম উদ্বিগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কৃষক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, আমার পেঁপের বাগানে ৪ হাজার গাছ ছিল। প্রতিটি গাছে বাঁশের খুঁটি দেওয়া থাকা সত্ত্বেও বৈশাখী ঝড়ে বাগানের সাড়ে তিন হাজার গাছ ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে। আশা ছিল বাগান থেকে আরও ১০-১২ লাখ টাকা আয় করার কিন্তু আমার সেই আশা ও স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।
বেলাল হোসেন নামে একজন কৃষক বলেন, রাত তিনটা দিকে প্রচন্ড ঝড় ও বাতাস সহ শিলা বৃষ্টিতে আমাদের এই দিকে অনেকের বাড়ি ঘরের ক্ষতি হয়েছে। তার থেকেও ক্ষতি হয়েছে ফসলের। আম লিচু থেকে শুরু করে ভুট্টার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
মশিউর রহমান নামে আম ও লিচু চাষি বলেন, আমাদের এই দিকে রাতে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে আম ও লিচু ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি আমাদের ফসলের জন্য উপকারী হলেও শনিবার দিবাগত রাতে ঠাকুরগাঁওয়ে ঝড়ো হাওয়া ও শিলা বৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে আর ৫-৬ দিন গেলেই হয়তো পেঁয়াজ বীজ কৃষকরা মাঠ থেকে তুলতে পারতেন বা বীজ গুলো পরিপক্ক হতো। কিন্তু এমন সময় ঝড় শিলার কারণে পেঁয়াজ গাছ ভেঙে পড়ে গেছে। যা রিকভার করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, ঝড়ে বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫ হেক্টর জমি। তবে কোন ফসল কত পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। আগামী ৪-৫ দিনের মধ্যে ক্ষতির পরিমাণ হয়তো আমরা নির্ধারণ করতো পারবো।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল কুমার জানান,কালবেশাখী ঝড়ে কৃষকদের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করতে মাঠপর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছে।এছাড়া বিদ্যুৎসহ যে-সব সড়ক সংযোগ বিছ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তা দ্রুত চালু করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এনই