প্রতিদিন ১ লাখ মণ ধান কেনাবেচা হয় যে মোকামে

প্রতিদিন ১ লাখ মণ ধান কেনাবেচা হয় যে মোকামে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

Published : ১৮:৪৩, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

টানা ৩ মাসের সংকট কাটিয়ে আবারও জমজমাট হতে শুরু করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ধানের মোকাম। দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই মোকামে উঠতে শুরু করেছে নতুন বোরো ধান।

ফলে দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর আবারও সচল হয়েছে জেলার প্রায় আড়াইশ চালকল। তবে এবার সরকারিভাবে ধানের যে দর বেধে দেয়া হয়েছে- চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে তা কিছুটা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন চালকল মালিকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর পাড়ে শতবছরেরও বেশি সময় ধরে ধানের হাট বসছে। এটি পূর্বাঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে বড় মোকাম হিসেবে পরিচিত। মূলত এই মোকাম ঘিরেই গড়ে উঠে জেলার চালকলগুলো। ধানের মৌসুমে প্রতিদিন অন্তত ১ লাখ মণ ধান কেনাবেচা হয় মোকামে, বাকি সময় যা অর্ধেকে নামে। তবে চাহিদা মেটাতে মেঘনাপাড়ের এই হাট ছাড়াও ধান আনতে হয় দেশের অন্যান্য মোকাম থেকেও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চালকলগুলো থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার চাল বাজারজাত করা হয়। এখান থেকে সবচেয়ে বেশি পাঠানো হয় বিআর-২৯ ও বিআর-২৯ জাতের চাল। এ দুটি জাত মূলত চিকন চালের। এছাড়া মোটা ধান থেকে করা চাল মিলমালিকরা সরবরাহ করেন সরকারি খাদ্যগুদামে।

তবে, গেলো বছরের ডিসেম্বর থেকে আশুগঞ্জ মোকামে ধানের সংকট দেখা দেয়। সময়ের সাথে সাথে যা আরও প্রকট হয়। ফলে চালের বাজারও অস্থিতিশীল হয়ে উঠে। প্রত্যেক জাতের চালের বস্তায় (৫০ কেজি) দাম বাড়ে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে চলতি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে মোকামে নতুন বোরো ধান উঠতে শুরু করে।

বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে বিআর-৮৮ ও মোটা ধান। বিআর-৮৮ মূল চিকন জাত। ধীরে ধীরে মোকামে বাড়ছে ধানের সরবরাহ। এর ফলে দামও কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের ব্যবসায়ী হাতেম আলী জানান, হাওরের ধান এখনও পুরোপুরি কাটা শেষ হয়নি। বর্তমানে তারা ভেজা ধান নিয়ে আসছেন মোকামে। আগামী সপ্তাহ থেকে শুকনা ধানও আসবে। এবার ফলন যা হয়েছে, তাতে করে দাম স্থিতিশীল থাকবে বলে বলে জানান তিনি।

সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ী মঈন মিয়া জানান, ধানের সরবরাহ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর ফলে দামও আগের তুলনায় কমছে। তবে ভেজা ধান হওয়ায় চালকল মালিকরা ধান কিছুটা কম কিনছেন। শুকনা ধান এলে বেচাকেনা আরও জমজমাট হবে। বর্তমানে প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার মণ ধান কেনাবেচা হচ্ছে।

এদিকে, ধানের সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ায় আবারও সচল হয়েছে বন্ধ চালকলগুলো। যদিও সংকট পুরোপুরি না কাটায় পুরোদমে চাল উৎপাদন শুরু করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

আশুগঞ্জের এমপি এগ্রোফুডের ব্যবস্থাপক মো. হাসান জানান, ধানের অভাবে দুই মাস চালকল বন্ধ রাখতে হয়েছিল। বর্তমানে প্রতিদিন ৬০-৭০ টন চাল উৎপাদন হচ্ছে। ধানের সরবরাহ বাড়লে চালের উৎপাদনও বাড়বে। যদি ধান কম দামে পাওয়া যায়, তাহলে চালও কম দামে বাজারে সরবরাহ করা যাবে।

গত ২৪ এপ্রিল থেকে সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এবার বোরো মৌসুমে সরকার কৃষকের কাছ থেকে প্রতি কেজি ধান সংগ্রহ করবে ৩৬ টাকা দরে। তবে বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ধানের দাম কেজিতে অন্তত ১ টাকা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন চালকল মালিকরা।

জেলা চালকল মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. হাসান ইমরান বলেন, চালের দরের সাথে ধানের বাজারদরের মিল নেই। এখন যেসব ধান মোকামে আসছে, সেগুলো থেকে চাল কম হচ্ছে। বর্তমান দরে ধান কিনে চাল তৈরি করলে বড় লোকসান গুণতে হবে। এজন্য আমরা ধানের দাম কেজিতে অন্তত ১ টাকা কমিয়ে পুনর্নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় এবারের বোরো মৌসুমে চালের বাজারে খুব একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement