জন্মদিনে কি দিবেন? বোনের সাথে নিহত সেনা সদস্য তানজিমের শেষ কথা

জন্মদিনে কি দিবেন? বোনের সাথে নিহত সেনা সদস্য তানজিমের শেষ কথা

আব্দুল্লাহ আল নোমান, টাঙ্গাইল

Published : ২০:৪৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রতিদিনই দুই একবার করে ও আমাকে ফোন দিতো। কেমন আছি ও কেমন আছে এমন কথাই হতো বেশি। দেশ ও পরিবার নিয়ে ও অনেক পরিকল্পনা করতো। সে সব কথাও মাঝে মাঝে বলতো।

গত রাত সাড়ে ১০ টার দিকেও কল দেয়। এসময় বলে আপু একটা অপারেশনে যাচ্ছি। আপু ওখানে বড় একটা ডাকাত দলের সদস্যদের ধরতে। এরপর বলে সামনেই তো আমার জন্মদিন কি দিবা? আমি সেদিন ছুটিতে আসবো। এরপর ফোন কেটে দেয়। এভাবে কথা বলছিলেন কক্সবাজারে ডাকাতদলের ছুরিতে নিহত সেনা সদস্য তানজিম ছারোয়ার নির্জনের বোন তাসনুভা ছরোয়ার সূচি।

তিনি আরও বলেন, ভাগনীকে মিশন থেকে এসে একটা আই ফোন কিনে দিবো। ভাগনী সারাকে ফোন যে কিনে দেওয়া হলো না। সারা মামা তোমার কোন টেনশন নাই। তোমার মামা এখন সেনাবাহিনীতে চাকুরি করে। তোমার সমস্ত কিছুর দায় দায়িত্ব আমার।

লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জনের বাড়ি টাঙ্গাইলের সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের করের বেতকা গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের সারওয়ার জাহানের একমাত্র ছেলে।

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, স্বজনদের আহাজারিতে পুরো পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। বিলাপ করছে তার মা নাজমা আক্তার। শান্তনা দিতে গিয়েও কান্নায় ভেঙে পড়ছে প্রতিবেশিরা। তার মা বিলাপ করে বলছে ওআমার আত্মা ছিলো। আমার ৫টি আত্মাই ছিল ওর সাথে। ও যখন অপারেশনে যায় ওকে বলেছি তুমি দেশের জন্য ও দশের জন্য করিও। যেটি ভাল হয় সেটি দেখেশুনে করিও। এছাড়াও তিনি দুর্বৃত্তদের বিচারের দাবি জানান সরকারের কাছে।

বোন জামাই এনামুল হক বলেন, আমার শ্যালক সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তিনি আমার ছোট শ্যালকের মতই ব্যবহার করতো। তিনি ছোট বাচ্চাদের মত মোবাইলে গেমস খেলতো। আমার ছোট মেয়ের সাথে সারারাত মোবাইলে গেমস খেলতো।

এছাড়াও এখনো তাকে ভাত খাওয়ায় দেওয়া হতো। তিনি আরও বলেন ডিসেম্বরে মিশনে যাবো। এরপর বিয়ের জন্য প্রস্ততি নিবো। সেই বিয়েতে সেনা কুঞ্জে দুলাভাই বিয়ের সব আয়োজন করবো। আমার বিয়ের সমস্ত দায় দায়িত্ব দুলাভাই পালন করবে।

নিহতের বাবা সারওয়ার জাহান বলেন, আমার একমাত্র অবলম্বন ছিলো । তাকে হারিয়ে আজ আমি একা হয়ে গেলাম। এটার উচিৎ বিচার চাই।

এদিকে নির্জনের জানাজা শেষে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বোয়ালী মাদ্রাসা মাঠে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিহত নির্জনকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement