শারদীয় দূর্গোৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

শারদীয় দূর্গোৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

Published : ১৫:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে শুরু হয়েছে নানা আয়োজন। পূজাকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আয়োজকরা। 

ইতোমধ্যে খড় ও মাটি দিয়ে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রং তুলির শেষ আঁচরে প্রতিমা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত প্রতিমা শিল্পীরা।

তবে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ বছর সীমিত পরিসরে পূজার প্রস্তুতি নিয়েছেন আয়োজকেরা। পূজা উপলক্ষে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

জেলা শহরের বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ জেলার প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে চলছে প্রতিমার গায়ে রং তুলির আঁচর। নানা রঙ-এর তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন প্রতিমা শিল্পীরা। 

জানা গেছে, এ বছর জেলায় ১২৪৩টি মন্দিরে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে পূজার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে দেড়ি হওয়ায় প্রতিমা শিল্পীদের বেগ পেতে হচ্ছে। তাই নাওয়া-খাওয়া, ঘুম বাদ দিয়ে দেবীদূর্গার সাথে লক্ষী, গনেশ, কার্তিক ও সরস্বতির পাশাপাশি ধর্মীয় দৃশ্যপট ফুটিতে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। 

এ বছর এক-একজন প্রতিমা শিল্পীরা ৪-৬টি করে প্রতিমা তৈরি করেছেন। মুজুরি নিচ্ছে সর্বনিন্ম ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পযর্ন্ত।

তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বোগতির বাজারে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

ধর্মীয় পঞ্জিকামতে, এ বছর আগামী ২ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হবে। এরপর ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাঅষ্টমী, ১২ অক্টোবর মহানবমী ও ১২ অক্টোবর মহাদশমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে এবং সন্ধ্যায় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শারদীয়া দুর্গোৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।

এবার পৃথিবীতে দশভুজার আগমন হবে দোলায় চড়ে আর আনুষ্ঠিকতা শেষে কৈলাশে ফিরবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এবছর গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় ১২৯৪টি মন্ডেপে শারদীয়া দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৫১টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৯৩টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩২২টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৬টি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯২টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিমা শিল্পী রাজীব পাল বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবছর ভিন্ন রকম পরিবেশ চলছে। এই কারলে আমরা সেভাবে কাজ করতে পারছি না। প্রথমে কাজ ছিল না। এখন কিছু কাজ আসছে গতবছর ১০টা মন্ডপে কাজ করেছি এবছর ৬টায় করছি। তবে গতবারের তুলনায় মজুরি অর্ধেকে নেমেছে। আদি পেশা টিকিয়ে রাখতেই আমরা এ কাজ করে যাচ্ছি।

প্রতিমা শিল্পী কৃষ্ণ বিশ্বাস বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সব প্রতিমা গড়ার লক্ষ্যে কর্মব্যস্ত সময় পাড় করছি। এখন আমাদের নাওয়া-খওয়া আর ঘুম নেই। পূজার আগেই আমাদের কাজ শেষ করতে হবে।

প্রতিমা শিল্পী দিনেশ সেন বলেন, গত ৫ আগস্টের পর পূজার ব্যাপকতা কমে গেছে। কাজের যে স্প্রিহা আয়োজকদের ও নষ্ট হয়েছে, আমাদেরও নষ্ট হয়েছে। এই কাজে রুটি রুজি রোজগার হয় তাই কাজ করতে হয়, বাজেটও কমে গেছে। কাজ করে বেঁচে থাকাই কষ্টের। প্রথমে কাজ না পেলেও এখন শেষ দিকে এসে কাজের খুব চাপ পড়েছে।

সাম্প্রদায়ীক সম্প্রতির এ জেলায় সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সহযোগীতায় এবছর অনাড়ম্বরভাবে দুর্গোৎসব পালন করা হবে বলে জানালেন আয়োজকরা।

বাজার যুব সংঘের সভাপতি দীলিপ কুমার সাহা দীপু বলেন, প্রতিবছর মতো এ বছরও দুর্গাপূজা উপলক্ষে বড় কিছু করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু বাস্তবতার নিরিক্ষে তা করা সম্ভব হচ্ছে না।

আবহাওয়া ও ৫ আগস্টের পর দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের উপর অন্যায় অত্যাচার করা হয়েছে, তাই মানুষের মনে শান্তি না থাকায় অনুষ্ঠান সংক্ষিপ্ত করে পূজা করা হবে। 

কেন্দ্রীয় সার্বজনিন কালী বাড়ীর সভাপতি রমেন বিশ্বাস বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ অনেকটা অগ্রসর, পূজা করা হবে। কিন্তু মনের অবস্থা ভালো না। আবার কোন পরিস্থিতি আসে। আশাকরি সামনে ভালো হবে। পূজা আমাদের হবে তাই আমরা সেইভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের নিরাপত্তা দিবে। সেই সাথে আমাদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক থাকবে। আলেকসজ্জা, প্যান্ডেল, গেট নির্মাণ চলছে। পূজা, অর্চনা, চন্ডিপাঠ, ধর্মীয় আচার-আচরণ, প্রসাদ বিতরণসহ নানা আয়োজনে আমরা এ বছরের দুর্গোৎসব মহাসমারহে উদযাপন করব। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি মৃনাল কান্তি রায় চৌধুরী পপা বলেন, শারদীয়া দুর্গোৎসব আমাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এটি ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপানা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে আমরা উদযাপন করব। 

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পূজা অর্চনা পালন করবো। স্থানীয় ভাবে আমরা পূজার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। 

বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতে যে অন্তরবর্তি সরকার সংখ্যালঘুদের এই উৎসবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট থাকবে বলে আমরা আশা করি। মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে নিজস্ব পাহারার ব্যবস্থাগ্রহণের ব্যবস্থা করবেন। নিরাপত্তার জন্য মন্ডপে-মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। 

দেশের এই ক্রান্তিকালে মা দূর্গা যেন সহায় হন। দেশের শান্তি ফিরে আসে সেই প্রার্থণা আমাদের। শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব মুখর পরিবেশে আমরা দুর্গোৎসব উদযাপন করব।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা পূজা মন্ডপের তালিকা ঢাকা প্রেরণ করেছি। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আসন্ন শারদীয়া দুর্গোৎসবকে আমরা উৎসব মুখর করতে চাই।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে। তিনি ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সব ধর্মের মানুষের প্রতি আহ্বান জানন।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement