চট্টগ্রামে জাতিসংঘ পার্ক ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’ নামে উন্মুক্ত
Published : ০০:৪৮, ৪ জানুয়ারি ২০২৫
দীর্ঘ ১০ বছর পর নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত হয়েছে জাতিসংঘ পার্ক হিসাবে পরিচিত উদ্যানটি। আধুনিকায়ন শেষে শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এটি উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘ পার্ক নামের পরিবর্তে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যান’ পার্কটির নামে নতুন নামকরণ করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম এবং প্রকল্প বাস্তবায়নকারী গণপূর্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
উদ্বোধনকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, জুলাই-আগস্টের শহিদ ওয়াসিম আকরামের স্মরণে তার নামে চট্টগ্রামে একটা উড়াল সেতু এবং শহিদদের স্মরণে এখানে জুলাই স্মৃতি উদ্যান নামকরণ করা হলো। যারা অন্যায় অবিচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গত ১৫ বছর সংগ্রাম করেছে তাদেরও স্মরণ করছি। কখনই যেন ফ্যাসিবাদ ফেরত আসতে না পারে। আগামী প্রজন্ম যেন জুলাই আগস্টের শহিদদের ত্যাগের কথা মনে রাখতে পারে সেজন্যই এ নামকরণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্কটির আধুনিকায়নে ‘জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান’ প্রকল্পটি হাতে নেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। ওই প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন শেষে মাঠের মাঝখানে তৈরি করা হয় একটি দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা।
পার্কের চারপাশ ঘিরে তৈরি করা হয় ২৯৪০ বর্গফুট হাঁটার পথ (ওয়াকওয়ে)। স্থাপন করা হয়েছে বসার জন্য ৪৪টি বেঞ্চ, দুটি প্রবেশপথ, শিশু-কিশোরদের খেলার সরঞ্জাম, ব্যয়ামের জন্য হরাইজন্টাল বার ও মেটাল পেরগোলা, ড্রেনেজ সিস্টেম, ডাস্টবিন, টয়লেট ব্লক, আলোকায়নের জন্য কম্বাইন্ড লাইট ও স্ট্রিট লাইট, সিসিটিভি ক্যামরা, সোলার পাওয়ার সিস্টেম ও বজ্রনিরোধক।
এ ছাড়া পার্কজুড়ে নতুন করে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও ঘাস লাগানো হয়েছে। এতে এক সময়ের পরিত্যক্ত হয়ে পড়া পার্কটি আবার যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তবে পার্কের ভেতর দুটি সুইমিংপুল নির্মাণ, পার্ক ঘিরে রাজনৈতিক নেতারা ও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব, সুইমিংপুল দুটি ভাঙা, নতুন প্রকল্প গ্রহণ- সব মিলিয়ে পেরিয়ে গেছে এক যুগ। এ সময়ে উদ্যানটি অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
সূত্র জানায়, নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকাটি গণপূর্ত অধিদপ্তরের দায়িত্বে। ১৯৫৪ সালে আবাসিক এলাকাটির জন্য ৬৯ একর আয়তনের জমি বরাদ্দ দেয় সংস্থাটি। এর মাঝে ২ দশমিক ১৭ একর আয়তনের ওই উদ্যানের নাম শুরুতে ছিল ‘পাঁচলাইশ পার্ক’।
১৯৮৮ সালে মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মেয়র থাকাকালে গণপূর্ত অধিদপ্তর সংস্কার ও ব্যবস্থাপনার জন্য পার্কের দায়িত্ব দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের হাতে।
২০০২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাবে সে সময়ের মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী এই পার্কের নাম দেন ‘জাতিসংঘ পার্ক’। সেই থেকে পার্কটি এই নামেই পরিচিত।
পরে মেয়র মনজুর আলমের মেয়াদে ২০১২ সালে সিটি করপোরেশন পার্কে দুটি সুইমিং পুল ও একটি জিমনেশিয়াম নির্মাণ শুরু করলে সেখানে জনসাধারণের চলাচল বন্ধ থাকে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে সুইমিং পুল নির্মাণ শেষ হলেও সেটি খুব বেশিদিন ব্যবহার হয়নি। পরের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬ সালে বেসরকারি এক কোম্পানির কাছে পার্কটি ইজারা দিতে চাইলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
তারপর সিটি করপোরেশন ও গণপূর্তের দ্বন্দ্বে আরও কয়েক বছর গড়িয়ে যায়। তখন থেকে পার্কটি অব্যবহৃত ছিল। এভাবে অব্যবহৃত পড়ে থাকায় পার্কে জমেছিল আবর্জনা। মাঠজুড়ে ছিল বড় বড় গর্ত। একপর্যায়ে পার্কটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
বিডি/এন