পেঁয়াজ রপ্তানিতে শর্ত শিথিল ভারতের

পেঁয়াজ রপ্তানিতে শর্ত শিথিল ভারতের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

Published : ১১:৪৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রপ্তানি নিষিদ্ধ করার প্রায় ১০ মাস পর প্রতি মেট্রিকটন পেঁয়াজের ৫৫০ ডলারের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের শর্ত বাতিল করেছে ভারত। সেই সঙ্গে গত মে মাসে পেঁয়াজের চালানের ওপর আরোপিত ৪০ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করা হয়েছে। 

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানিমূল্য সংক্রান্ত শর্ত বাতিলের এ আদেশ জারি করে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড।

দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্য মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পেঁয়াজ রপ্তানির শর্ত বাতিলের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর আগে বর্ষা মৌসুমের পর ঘাটতির আশঙ্কায় দেশীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির লাগাম টানতে গত বছরের ডিসেম্বরে ভারতের সরকার পেঁয়াজের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পরে সেই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। 

তবে প্রতিবেশি ও বন্ধুপ্রতীম কিছু দেশের কূটনৈতিক অনুরোধের ভিত্তিতে সীমিত পরিসরে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল ভারতের সরকার।

এদিকে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের কৃষকরা ব্যাপক লোকসানের মুখোমুখি হন। সেই সঙ্গে বিশ্ববাজারেও পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধিতে এর প্রভাব পড়ে।

রপ্তানি নিষিদ্ধ করায় দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় কৃষকরা। 

প্রায় ৬ মাস পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি রাখার পর গত মে মাসে তা তুলে নেওয়া হয়। তবে সেসময় প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজের ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য ৫৫০ ডলার নির্ধারণ ও রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ করা হয়।

গতকাল দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের শর্ত বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয় পেঁয়াজের রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করে একটি নির্দেশ জারি করে।

শুক্রবার জারি করা আদেশে দেশটির কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য পণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (এপিইডিএ) বাসমতি চাল রপ্তানির ‘‘যেকোনও অবাস্তব মূল্য’’ সংক্রান্ত রপ্তানি চুক্তি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

ভারত বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পেঁয়াজ রপ্তানিকারী দেশ। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া, নেপাল ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ভারতীয় পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তবে মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশেও রপ্তানি হয় ভারতীয় পেঁয়াজ।

ডিসেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর থেকে দেশটির অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দামে ধস নামলেও বিশ্ববাজারে দাম বাড়ছে হু হু করে। এছাড়া বাংলাদেশের বাজারেও পেঁয়াজের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধি পায়।

উল্লেখ্য, ভারতের রাজনৈতিক অর্থনীতিতেও পেঁয়াজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি ফসল, বিশেষ করে ভোটের বেলায়।

১৯৮০ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ওই নির্বাচনকে ‘পেঁয়াজের নির্বাচন’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেসের সভানেত্রী ইন্দিরা গান্ধী। 

কারণ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল নয়াদিল্লিতে সে সময়ে আসীন কংগ্রেসবিরোধী সরকার। সূত্র: দ্য হিন্দু, রয়টার্স।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement