জিডিপি কী, যেভাবে হিসাব করা হয়
Published : ১৬:৩৯, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪
জিডিপি (গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট) নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (সাধারণত এক বছর) একটি দেশের মধ্যে উৎপাদিত এবং বাজারে বিক্রি হওয়া সব পণ্য ও পরিষেবার মোট আর্থিক মূল্যের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনৈতিক কার্যকলাপের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পরিমাপ হলো জিডিপি।
জিডিপি আমাদেরকে দেশের আর্থিক বৈষম্যের পরিমাপ জানাতে পারে না; এমনকি পরিবেশের ঝুঁকি কেমন অথবা জনগণ সুখে আছে কি নেই কোনোকিছুই এর মাধ্যমে জানা যায় না। কারণটা হলো জিডিপি’র মাধ্যমে শুধুমাত্র দেশের অর্থনীতির আকার জানা যায়। এটি অর্থনীতির আকারের একটা হিসাব মাত্র।
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন জানান, ১৯৩৪ সালের আগে জিডিপি-এর মতো কিছু ছিলো না। তবে গত শতাব্দীর প্রায় পুরোটা সময় একটি দেশের অর্থনৈতিক মূল্যায়নে জিডিপি গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। অর্থনীতির সূচক নিয়ে ব্রিটিশ আমলে সেভাবে গুরুত্ব দিয়েও বিবেচনা করা হয়নি। একটা দেশের আয়তন বুঝতে আমরা বর্গমাইল বা বর্গ কিলোমিটার হিসাব করলেই পেয়ে যাই। কিন্তু একটা দেশের অর্থনীতির আকার বা সাইজ কীভাবে বুঝব? একটি দেশের ভেতরে যত অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলছে, এটার সমষ্টিকে আমরা জিডিপি বলতে পারি। আপনি এক কাপ কফি বা চা খেলেন। এটাও জিডিপিতে সংযুক্ত হয়। সেলুনে চুল কাটতে গেলেন সেটার ভ্যালুও যুক্ত হয়। ডাক্তার দেখালেন সেটাও সংযুক্ত হয়। আর্থিক মূল্যের সব লেনদেন জিডিপিতে সংযুক্ত হয়।
জিডিপি কীভাবে হিসাব করা হয়
জিডিপি পরিমাপের সূত্র : জিডিপি = ব্যক্তিগত খরচ + মোট ব্যক্তিগত বিনিয়োগ + সরকারি বিনিয়োগ + সরকারি ব্যয় + (রপ্তানি-আমদানি)। এই হিসাবটা মূলত তিনটি পদ্ধতিতে করা হয়। ১. এক্সপেন্ডিচার মেথড (Expenditure Method) বা খরচ হিসাব করে। ২. আউটপুট বা প্রোডাকশন মেথড (Output or Production Method) ৩. ইনকাম (Income Method) বা আয় মেথড। সারা বিশ্বে এক্সপেন্ডিচার বা খরচের হিসাব করে জিডিপি বের করার পদ্ধতি বেশি ব্যাবহার করা হয়। এতে একটা সূত্র আছে : GDP = C + G + I + NX ‘সি’ মানে হলো “কনসাম্পশন”। মানে একটি দেশে যত মানুষ আছে সবাই ভোগের জন্য যে খরচ করে সেটা। আপনি চাল-ডাল কেনা, ডাক্তার দেখানো, ছেলেমেয়ের শিক্ষার পেছনে ব্যয় থেকে শুরু করে, সারা বছর যত ধরনের খরচ করেছেন সেটা। ‘জি’ মানে হলো “Government Expenditures”। ব্যক্তির হিসাব বাদ দিয়ে সরকার যে খরচ করে যেমন অবকাঠামো নির্মাণ, বেতন দেওয়া, পেনশন দেওয়া, বিভিন্ন যন্ত্রপাতি কেনাসহ যত খরচ করে সব। ‘আই’ মানে হলো “Investment”। সারাদেশে ব্যক্তিগত ভোগ বাদে বিভিন্ন খাতে যত সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ হয় তার সমষ্টি। আর সর্বশেষ ‘এনএক্স’ হলো “নিট রপ্তানি”। যদি রপ্তানি, আমদানির থেকে বেশি হয়; তবে জিডিপি’তে বেশি অংশ যোগ হয়; এর বিপরীত হলে বিয়োগ হয়। অর্থাৎ, জিডিপি’র মাধ্যমে একটি দেশে ঘটে যাওয়া আর্থিক লেনদেনের সাইজ জানা যায়। আর এর মাধ্যমেই বোঝা যায় কোন দেশের অর্থনীতি কতটা বড়। অনেকে মনে করেন, জিডিপি দিয়ে সবকিছু করে ফেলবেন। মনে রাখা দরকার, জিডিপি-এর হিসাবের ওপর অতটা প্রত্যাশা না করাই ভালো।
বিডি/এন