জ্বালানি তেলের প্রবিধানমালায় বিপিসির মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়
Published : ১০:৩৪, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
বিইআরসির জ্বালানি তেলের প্রবিধানমালার বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) মতামত চাওয়া হয়েছে। দীর্ঘ এক যুগ এভাবে নানা কায়দায় প্রবিধান ঝুলিয়ে রেখে নির্বাহী আদেশে নির্ধারণ করা হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও একই পথে চলায় অনেকেই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক সদস্য মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, ৪ মাসেও কেনো প্রবিধানমালা অনুমোদন হলো না সেটা বড় অবাক করার বিষয়। নাকি এখনও আমলারা নানা মারপ্যাচ দিয়ে বিষয়টি ধরে রাখতে চাইছে।
বিইআরসিকে কার্যকর করলেই সবথেকে বড় সংস্কার হয়ে যাবে। বিইআরসি শক্তিশালী হলে অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, প্রবিধানমালার বিষয়ে আমাদের মতামত চাওয়া হয়েছে। আমরা একটি কমিটি করে দিয়েছি, তারা কাজ করছে। আশা করছি এ মাসের দ্বিতীয়ার্ধে আমাদের মতামত দিতে পারব। ভালোভাবে মতামত দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছুটা সময় চেয়ে নেওয়া হয়েছে।
২০০৩ সালে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন পাশের মাধ্যমে নিরপেক্ষ ও আধাবিচারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিইআরসি গঠন করা হয়। বিইআরসি মূলত ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এ পর্যন্ত ১৩টি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আরও ১২টি প্রবিধানমালা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ঝুলে রেখেছে মন্ত্রণালয়।
আইনে সকল ধরণের জ্বালানির দাম নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়া হলেও প্রবিধানমালা ঝুলে থাকায় শুধুমাত্র গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করে আসছিল বিইআরসি। ২০২৩ সালে হঠাৎ করেই আইন সংশোধন করে নির্বাহী আদেশে দাম সমন্বয় (কম/বেশি) করার বিধান যুক্ত করা হয়। তারপর থেকে নির্বাহী আদেশে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ করায় কার্যত বেকার হয়ে পড়ে রেগুলেটরি কমিশন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রথম সপ্তাহেই ঘোষণা দেয় নির্বাহী আদেশে আর বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হবে না। সে অনুযায়ী আইনে সংশোধনী এনে বিইআরসির হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু জ্বালানি তেলের বিষয়টি বিগত সরকারের মতো হাতেই রেখে দিয়েছে। আগের মতোই পেট্রোলিয়ামের বিধিমালা অনুমোদন না হওয়ায় ধোয়া তুলে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসেও ডিজেল, পেট্রোল, অকটেনের দাম সমন্বয় করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
আইনে বলা হয়েছে সকল ধরণের এনার্জির মূল্য নির্ধারণ করবে বিইআরসি। ৩৪(৩) ধারায় বলা হয়েছে বিইআরসি প্রবিধানমালা প্রণয়ন করবে। তবে শর্ত থাকে যে, প্রবিধানমালা প্রণয়ন না করা পর্যন্ত সরকার প্রজ্ঞাপন দ্বারা নির্ধারণ করতে পারবে।
গণমাধ্যমকে ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেছেন, আমরা বিইআরসিকে ভবিষ্যতে শক্তিশালী ও কার্যকর দেখতে চাই। এখন পর্যন্ত বিইআরসি ইস্যুতে সরকারের অবস্থান আমাদের কাছে খুব একটা পরিষ্কার নয়। আগের সরকারের পথ ধরেই তারাও জ্বালানি তেলের দাম নির্ধারণ করছে। আগের সরকারের সুরেই কথা বলছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, প্রয়োজন হলে যেভাবে এলপিজির দর (রিট দায়েরের মাধ্যমে) ঘোষণার আদেশ আদায় করে নিয়েছি। জ্বালানি তেল প্রশ্নে সেই পথে হাটতে পিছপা হবে না ক্যাব।
বিইআরসি চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ বলেছেন, আমি যোগদানের আগে থেকেই প্রবিধানমালা মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে। আমি যোগদানের পর এগুলো অনুমোদনের বিষয়ে জোর দিচ্ছি। তবে জ্বালানি তেলের পৃথক তিনটি প্রবিধানমালা (বিতরণ, সঞ্চালন ও খুচরা বিক্রয়) না করে একত্রে করার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা ৩টি একত্রে করে পাঠিয়ে দিয়েছি। আশা করছি শিগগিরই অনুমোদন পাওয়া যাবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিপিসি নিজে তেল আমদানি করে, আবার কোম্পানি ও ডিলারের মাধ্যমে বিপণন করে। তারাই যদি দাম নির্ধারণ করে তাহলে ভোক্তার স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব না। দ্বৈত স্বত্তা হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে বিপিসি। হয় তারা রেগুলেট করবে না হলে তারা বিপণন করবে। এখন যা হচ্ছে সম্পূর্ণ আইনের পরিপন্থী।
বিডি/এন