আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত গ্লোরি গার্লস টেক ফেস্ট ১.০-এর উদ্বোধন

Published : ১৩:০৬, ২৫ এপ্রিল ২০২৫
প্রাণবন্ত পরিবেশ আর সম্ভাবনাময়ী কণ্ঠে মুখরিত ছিল গ্লোরি গার্লস টেক ফেস্ট ১.০-এর উদ্বোধনী দিনটি। রাজধানীর স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বসুন্ধরা শাখায় ২৪ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রকল্প প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাবিকুন নাহার রিম্মী, হেড অফ কমিউনিকেশন ফারহানা ইসলাম এবং গ্লোরি গার্লস টীম লিডার স্নিগ্ধা দে।
এই আয়োজনের মাধ্যমে এক নবযাত্রার সূচনা হয়— প্রযুক্তির অঙ্গনে নারীদের সক্রিয় ও নেতৃত্বমূলক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার প্রত্যয়ে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রহমান নিপুর দূরদর্শী পরিকল্পনা ও অদম্য চেষ্টায় তৈরি হয় "গ্লোরি গার্লস" নামক একটি ভিন্নধর্মী প্ল্যাটফর্ম, যেখানে মেয়েরা প্রযুক্তিকে কেবল পাঠ্যবিষয়ের অংশ নয়, বরং সম্ভাবনার বাস্তব রূপ হিসেবে দেখতে শেখে। তাঁর নেতৃত্বে এই আয়োজনটি রূপ নেয় একটি অনুপ্রেরণাদায়ী উদ্যোগে, যা মেয়েদের জন্য প্রযুক্তিতে আত্মবিশ্বাস, দক্ষতা ও স্বপ্ন গড়ার পথ করে দেয়।
স্কুলের দিবা শাখার প্রধান শিক্ষিকা ডালিয়া নার্গিস বলেন, এই আয়োজনটি ছিল এক ধরনের আহ্বান— যেখানে মেয়েরা কেবল শ্রোতা নয়, বরং হয়ে ওঠে উদ্ভাবক, নির্মাতা এবং প্রযুক্তিনির্ভর ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক। আয়োজনের মূল ভাবনা ছিল, প্রযুক্তি যদি কল্পনার সাথে যুক্ত হয়, তবে তৈরি হয় নতুন নেতৃত্ব, নতুন সম্ভাবনা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীর প্রযুক্তি শিক্ষায় সম্পৃক্ততা এখনো অনেকাংশে সীমিত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্রীদের সংখ্যা প্রায় ৩৯ শতাংশ হলেও, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ মাত্র ১৮ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
বিশ্ব ব্যাংকের ২০২৩ সালের এক জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে প্রযুক্তি-ভিত্তিক চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ মাত্র ১৩ শতাংশ। এছাড়াও, দেশের প্রায় ৭৬ শতাংশ তরুণী কখনো কোনো প্রোগ্রামিং কোর্স বা সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট প্রশিক্ষণে অংশ নেয়নি। এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে, নারীদের জন্য প্রযুক্তির জগতে প্রবেশের পথ এখনো চ্যালেঞ্জে পূর্ণ।
এই বাস্তবতা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন সময়োপযোগী, প্রেরণাদায়ী এবং হাতে-কলমে শেখার সুযোগ।
গ্লোরি গার্লস টেক ফেস্ট ১.০ ছিল এমনই একটি আয়োজন, যেখানে প্রযুক্তি-প্রেমী মেয়েরা তাদের দক্ষতা প্রদর্শনের সুযোগ পেয়েছে এবং নতুন কিছু শেখার অনুপ্রেরণা লাভ করেছে।
এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কেবল একটি দিন উদযাপন হয়নি— এটি ছিল নারীর সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি ও সম্মান জানিয়ে, ভবিষ্যতের প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশে নারীর নেতৃত্বের ভিত্তি স্থাপনের একটি ক্ষণ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, উদ্যোক্তা ও তরুণী শিক্ষার্থীরা, যাঁদের প্রত্যাশা ছিল একটি নতুন দিনের সূচনা।
আইসিটি অলিম্পিয়াড বাংলাদেশের ফাউন্ডার ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহরিয়ার খান বলেন, “এই আয়োজন শুধুমাত্র একটি ইভেন্ট নয়, এটি মেয়েদের জন্য প্রযুক্তিতে আত্মবিশ্বাস তৈরি করার একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। যেখানে বিশ্বাসের হাত ধরে প্রযুক্তির পথচলা শুরু হয়, সেখানেই জন্ম নেয় নতুন নেতৃত্ব। এই আয়োজন আমাদের মেয়েদের প্রযুক্তি-আত্মবিশ্বাসের উৎস।”
উদ্বোধনী দিনের মধ্য দিয়ে ফেস্টটির শুভ সূচনা হলেও, সামনের দিনগুলোতে আয়োজনের অংশ হিসেবে থাকছে প্রযুক্তি প্রদর্শনী, ইনোভেশন চ্যালেঞ্জ, কর্মশালা এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে কুইজ প্রতিযোগিতা— যা মেয়েদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বিকাশে সরাসরি অবদান রাখবে। অনুষ্ঠানের অতিথী হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডিকোস্টালিয়ার ডিরেক্টর সাবিলা ইনুন, ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান ডা: তানজিবা রহমান সহ অরুতাস বিডির সিইও অরুপা দত্ আরো বেশ কয়েকজন নারী তথ্যপ্রযুক্তিবিদ।
এই আয়োজনের মাধ্যমে নারীর প্রযুক্তি ক্ষমতায়নে তাদের প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করেছে। তারা বিশ্বাস করে, প্রযুক্তির সাথে কল্পনার সংযোগ ঘটলে, গড়ে ওঠে গ্লোরি গার্লস-এর মতো নতুন প্রজন্ম, যারা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার অগ্রনায়ক হবে।
এএম