যে-সব সংকটে ধুঁকছে রাবিপ্রবি

যে-সব সংকটে ধুঁকছে রাবিপ্রবি

রাবিপ্রবি প্রতিনিধি  

Published : ১৩:৪০, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) প্রতিষ্ঠার পর কেটে গেছে দীর্ঘ দশ বছর। ২০১৪ সালে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী ভবন তৈরি হয়নি।  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং গবেষণার সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই জাতীয় সংসদে ‘রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) আইন’ পাস করে তৎকালীন সরকার। শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নানা সংকটে ভোগা বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে অস্থায়ী ভবনে। নিয়োগ দেওয়া হয়নি পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তা। বর্তমানে পাঠদানসহ বিভিন্ন কাজ চলছে কেবল ৩০ জন শিক্ষক দিয়ে। প্রায় ১০ বছরের বেশি সময় পার হলেও ভূমি অধিগ্রহণ ছাড়া কোনো কাজই দৃশ্যমান হয়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্টরা জানান, চলতি বছরের (২০২৪) জুন মাসে সয়েল টেস্ট কাজের পরিদর্শন করেন তৎকালীন উপাচার্য। পরবর্তী সময়ে শিক্ষকদের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের পরে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদত্যাগের পরে কার্যত কোনো উন্নয়ন দেখা যায়নি। বরং গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারবিহীন এই বছর পার করলো রাবিপ্রবি।

সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী এম.আকতারুজ্জাম অপু বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে আমরা ২ জন ভিসি পেয়েছি। কিন্তু এখনো শিক্ষক সংকট, শ্রেণীকক্ষ সংকট, যানবাহন সংকটসহ অনেক সংকট রয়ে গেছে। এসব সমস্যার সঙ্গে সেশনজট তো আছেই। এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার কোনো ব্যবস্থা নেই। কম্পিউটার ল্যাব রুম আছে একটি। তাও সব বিভাগের জন্য, যার বেশিরভাগ কম্পিউটারই নষ্ট। সিএসই বিভাগের জন্য কোনো আলাদা কম্পিউটার ল্যাব রুম নেই।’

অপু আরও বলেন, ‘ল্যাব সংকটের কারণে প্র্যাকটিকাল জ্ঞানে ঘাটতি নিয়েই শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকার কবে সঠিক ব্যবস্থা নেবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সবসময়ই অবহেলিত কেন! কবে এই অবহেলা থেকে মুক্তি পাবে রাবিপ্রবি, তা আমাদের সব শিক্ষার্থীর প্রশ্ন।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা শুধু উন্নয়নের আশ্বাস পাই। কিন্তু কোনো উন্নয়ন দেখতে পাই না। নতুন বছরে আমাদের একটাই দাবি, সংকট নিরসনে যেন প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে আমাদের সমস্যাগুলো লাঘব করে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বল্প জনবল ও শিক্ষক সংকটে নানা সমস্যায় জড়াতে হয় রাবিপ্রবিকে। শিক্ষক সংকট থাকায় বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে অল্প ও বৃহৎ পরিসরে সেশন জট লেগেই আছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো পায়নি কোনো অধ্যাপক। এমনকি ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগে নেই কোনো শিক্ষক ও ল্যাব।  কোনো শিক্ষক না থাকায় বর্তমানে এই বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের লেকচারার (বাংলাদেশ স্টাডিজ) শাহেদ সরোয়ার।

রাবিপ্রবির বর্তমান সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক  ড. নিখিল চাকমা বলেন, ‘আগামী বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে টেন্ডার হয়েছে। ২০২৬ সালে কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করছি।’

এসময় শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যার বিষয়ে নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে নিখিল বলেন, ‘আমরা প্রথমে শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষার্থীদের প্রধান সমস্যা নিয়ে কাজ করবো। এরপর ধাপে-ধাপে অন্যান্য সমস্যা নিয়ে কাজ শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক সমস্যা নির্মূল করা গেলে অন্যান্য দিকে খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।’

শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে নিখিল আরও বলেন, ‘শিক্ষক সংকট রাবিপ্রবির অনেক দিনের সমস্যা। আমরা এই বিষয় নিয়ে ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করেছি। নতুন বছরে এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে বলে আমি আশাবাদী। শিক্ষার্থীরা যেন কোনো সেশন জটে না পড়েন, তার দিকে নজর রেখে  আগামী মাসে একটি আলোচনার আয়োজন করেছি। আশা করছি, সেখানে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।’

এনই

শেয়ার করুনঃ
Advertisement