৪ বছর পর আলোর মুখ দেখছে ‘মেকআপ’
Published : ২০:৪৭, ১০ জানুয়ারি ২০২৫
৬০’র দশকের নায়কের বেশভূষায় কোমরে হাত দিয়ে একটা অটোরিকশায় দাঁড়িয়ে আছেন। প্রথম দেখায় ঠিক চেনা যায় না। কারণ এভাবে আগে তাকে দেখা যায়নি। তিনি তারিক আনাম খান।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তার এমন একটি ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন পরিচালক অনন্য মামুন। এ ছবি ঘিরেই আলোচনায় আসে ‘মেকআপ’।
সেই সিনেমাকে পরে প্রদর্শনের অযোগ্য বলে রায় দেয় তৎকালীন সেন্সর বোর্ড। ৪ বছর পর সিনেমাটি অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। আজ ২৩টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘মেকআপ’।
পরিচালক অনন্য মামুন বলেন, ‘সিনেমাটি নিয়ে ৪ বছরের জার্নি ছিল যুদ্ধের মতো। পৃথিবীর কোনো দেশে সিনেমাকে নিষিদ্ধ করে না। সেখানে আমাদের সামাজিক ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়।’
২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে সেন্সরে জমা পড়ে মেকআপ। তারপর একের পর এক সেন্সর বোর্ডের বাধার মুখে পড়ে।
সেন্সর বোর্ড থেকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ১৫টি দৃশ্যের সংলাপে তাদের আপত্তি রয়েছে। ২০ মিনিটের মতো দৃশ্য কেটে ফেলার কথা বলা হয়েছিল। পরিচালক অনন্য মামুন সংশোধন করে ফেব্রুয়ারিতে সেন্সরে পুনর্বিবেচনার জন্য সিনেমাটি জমা দেন। সিনেমাটি পর্যবেক্ষণে রাখে সেন্সর বোর্ড।
মার্চের শুরুতে সেন্সর বোর্ডের তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন ‘মেকআপ’ বিষয়েরবলেন, ‘এটি দেখে বোর্ডের মনে হয়েছে, সেন্সর নীতিমালার পরিপন্থী কিছু বিষয় এখানে আছে। যে কারণে আমরা ছবিটি পর্যবেক্ষণে রেখেছিলাম।
সম্প্রতি সিদ্ধান্ত হয়েছে, ছবিটি অপ্রদর্শনযোগ্য। এটা হলে মুক্তি পাবে না।’ বলা যায়, এভাবে সিনেমাটিকে একরকম ‘নিষিদ্ধ’ করে বোর্ড।
সে সময় অনন্য মামুন বলেছিলেন, ‘একটা ছবিকে এভাবে আটকে দেওয়াটা চলচ্চিত্রশিল্পের ওপর আঘাত। এভাবে ভালো ছবি হবে না। এভাবে কোনো শিল্প হয় না।’
মামুনের দাবি, সে সময় দায়িত্বে থাকা সেন্সর বোর্ডের একজন সদস্যের খামখেয়ালিপনার কারণে তাঁর সিনেমাটি আটকে ছিল।
উদ্দেশ্যহীনভাবেই তার সিনেমার নামের আগে ‘অশ্লীল’, ‘প্রদর্শন অযোগ্য’ তকমা জুড়ে দেওয়া হয়েছিল। ‘দর্শকদের সুস্থ ধারার সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য আমরা সিনেমাটি বানিয়েছিলাম।
সিনেমাটি নিয়ে আমাদের কোনো ব্যবসায়িক চিন্তা ছিল না। অথচ একের পর এক হয়রানি হতে হয়েছে, যা ছিল পুরোটাই উদ্দেশ্যহীন,’ বলেন মামুন।
ছবিটির বিরুদ্ধে কী অভিযোগ ছিল, জানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, ‘একটা সিনেমায় দু–চারটি জায়গায় আপত্তি থাকতে পারে। সেটারও ব্যাখ্যা আছে। কিন্তু আমাদের সিনেমায় যেখানে ভালগার কিছু নেই, অশ্লীল সংলাপ নেই, সেখানে বলা হলো, আমরা শিল্পীদের ছোট করেছি, ভালগার অনেক দৃশ্য রয়েছে। যা নাকি শিল্পীদের ছোট করবে। আমার জানামতে এমন দৃশ্য ছিল না।’
৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর বদলে যায় বোর্ডের নাম ও সদস্য। সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডের কাছে নতুন করে আবেদন করে অবশেষে আলোর মুখ দেখছে মেকআপ।
মামুন বলেন, ‘সিনেমাটি উদ্দেশ্যহীনভাবে আটকে রাখা হয়েছিল, এটা তারা বুঝতে পেরেছেন। এটাই আমাদের সাকসেস। কারণ, বর্তমানে সিনেমাটির মাত্র ১ মিনিট ২০ সেকেন্ড কর্তন করা হয়েছে, যা একদমই স্বাভাবিক।’
‘মেকআপ’ সিনেমায় চলচ্চিত্র তারকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান। ছবিতে তার নাম শাহবাজ খান। সিনেমাটির চিত্রনাট্য পড়ার সময় এবং পরে শুটিং ও ডাবিংয়ে সবকিছুই ঠিকঠাক মনে হয়েছিল এই অভিনেতার কাছে। পরে সিনেমাটি আটকে গেলে সংশয়ে পড়ে যান এই তারকা।
তারিক আনাম খান জানান, তার নিজের কাছে সংলাপে আপত্তিকর কিছু ছিল না। সিনেমার চিত্রনাট্য রচনার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি।
তারিক আনাম খানের কাছে গল্প প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বললেন, ‘দুজন নায়ক–নায়িকার সিনেমার প্রতি আগ্রহের গল্প এখানে তুলে ধরা হয়েছে। অতি সাধারণ একটা জায়গা থেকে তারা এসেছেন। এই প্রেক্ষাপটের মধ্য দিয়ে মিডিয়ার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথা বলা হয়েছে।
সেই সময়ে আমি যত দূর শুনেছিলাম, কেউ কেউ ধরে নিয়েছিলেন, মিডিয়াকে ছোট করা হয়েছে। সামান্য কারণেও তোলপাড় হয়। এখন আর সেগুলো নিয়ে কথা বলতে চাই না। সিনেমা দীর্ঘদিন পর দর্শকদের কাছে যাচ্ছে। দর্শক সিনেমাটি দেখুক, কথা বলুক, এটাই চাই।’
দর্শক ও বোর্ডের সদস্য হিসেবে সিনেমাটি পছন্দ করেছেন সেন্সর সার্টিফিকেশন বোর্ডের সদস্য কাজী নওশাবা আহমেদ। সিনেমা ও তারিক আনাম খানের অভিনয়ের ভূয়সী প্রশংসা করলেন তিনি।
জানালেন, সিনেমাটির যে সংস্করণ তাদের কাছে জমা দেওয়া হয়, সেখানে বাতিল হওয়ার মতো তেমন কিছু পাননি তারা।
নওশাবা বলেন, ‘একজন অভিনয়শিল্পীর উত্থান-পতনের গল্পে যা প্রয়োজন, সেগুলোই রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট পয়েন্ট অব ভিউ থেকে সিনেমাটির গল্প দেখানো হয়েছে।
সেখানে আমাদের মনে হয়েছে, সিনেমাটি দর্শক কেন দেখবেন না? আটকে থাকার মতো কোনো লজিক পাইনি। পরিচালক যা দেখিয়েছেন, সেগুলো প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় আমরা সনদ দিয়েছি।’
‘মেকআপ’-এ তারিক আনাম খান ছাড়াও প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন জিয়াউল রোশান ও নিপা আহমেদ।
বিডি/ও