নতুন প্রজন্মের সংস্কারের হাওয়া লেগেছে ইটাকুমারী জমিদার বাড়িতে
Published : ১৫:২৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রজা বিদ্রোহ ছিল একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন।
১৭৮৩ সালে তৎকালীন ফতেপুর পরগনা তথা বর্তমান রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ইটাকুমারীর জমিদার শিবচন্দ্র রায় আরেক ব্রিটিশবিরোধী নারী দেবী চৌধুরানীকে সঙ্গে নিয়ে ঐতিহাসিক প্রজা বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে দিনাজপুরের কৃষক নেতা নূরুল দীনও আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন।
ওই আন্দোলনের মাধ্যমে তিনি ইংরেজদের জানান দিয়েছিলেন, তৃণমূল থেকেও বড় পরাশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
জমিদার শিবচন্দ্র রায় বেঁচে নেই। তবে তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িটি, যা বর্তমানে ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। জমিদার বাড়িটি ছিল তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার দ্বিতীয় নবদ্বীপ।
শিক্ষা-সংস্কৃতির বাতিঘর হিসেবেও ইটাকুমারীর খ্যাতি সেসময় গোটা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাড়িটি ছিল একসময় প্রজা বিদ্রোহের সূতিকাগার।
সেই বাড়িটি দিন দিন অবহেলা, অযত্নে ও সংস্কারের অভাবে ময়লা, আবর্জনা, লতাপাতা, জঞ্জালে ভরে গিয়ে যেন ভুতূড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছিল। সন্ধ্যা হলেই যেখানে বসতো মাদকের আড্ডা।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সেই ময়লা, আবর্জনা, লতাপাতা, জঞ্জাল পরিষ্কার করে জমিদার বাড়িটিকে স্বরূপে ফিরিয়েছেন একঝাঁক তরুণ। শিক্ষার্থীরা শপথবাক্য পাঠ করার মধ্য দিয়ে শুরু করে পরিষ্কার অভিযান।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সংগঠন প্রজন্ম পীরগাছার উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বিডি ক্লিনের প্রায় ২শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী ওই অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
বিডি ক্লিনের উপজেলা সমন্বয়ক মেহেদী হাসান মুরাদ বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক থেকে তারা পীরগাছা উপজেলাকে সারা বাংলাদেশের মধ্যে মডেল উপজেলা হিসেবে গড়তে চান।
প্রজন্ম পীরগাছার আহ্বায়ক ডা. আকিব ফয়সাল ইসতি বলেন, দেবী চৌধুরানী ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে স্মরণ করে এখানে প্রতিবছর নাপাইন্ডীর মেলা নামে একটি মেলা বসে।
তিনি যুদ্ধে জয়লাভ করতে না পারলেও তার আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিদ্রোহের মানসিকতা সৃষ্টি করতে পেরেছিলেন। তার স্মৃতিবিজড়িত স্থান এই ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি। এই ইতিহাসকে তারা সংরক্ষণ করতে চান।
প্রজন্ম পীরগাছার সদস্য আতিফ ইফতেশাম ও শামীম আহসান বলেন, ইটাকুমারী জমিদার বাড়ি নিয়ে তাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা বিডি ক্লিনের সহযোগিতায় এটা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছেন।
এই বাড়িতে তারা নাগরিক সভার আয়োজন করে পীরগাছার উন্নয়নে বিভিন্ন রূপরেখা তুলে ধরবেন। ম্যাগাজিন প্রকাশ করবেন। তারা বাড়িটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক পুরাকীর্তি হিসেবে স্বীকৃতি, জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এদিকে তরুণদের এ কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
তারা বলেন, ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটি এতদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। নতুন বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম এখন এটি সংস্কার করছে। নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয়।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, জমিদার বাড়িটি বর্তমানে প্রাইভেট দেবোত্তর হিসেবে আছে। এটা নিয়ে সরকারের মামলা চলছে। মামলা ফয়সালা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই বাড়িটিকে নিয়ে সুন্দরভাবে কাজ করবেন করা হবে।
বিডি/ও