জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন বাক প্রতিবন্ধী কায়িফের

জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন বাক প্রতিবন্ধী কায়িফের

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

Published : ১৪:৩৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট নিয়ে বিরাট স্বপ্ন সানজিদ আহসান কায়িফের (১৭)। এলাকার বিভিন্ন টুনামেন্টে খেলে অনেক প্রশংসা ও কামিয়েছে। বিভিন্ন ক্রিকেটারদের ছবি তার বাসায় টানানো। স্বপ্ন একদিন জাতীয় দলে খেলবে সে।

বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হাসান মাহমুদের সাথেও ছবি আছে কায়িফের। জানলে অবাক হবেন, কায়িফ একজন বাক প্রতিবন্ধী! অথচ তার সঙ্গেই পেরে ওঠে না শারীরিকভাবে সুস্থরা!

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার পৌর ১২ নং ওয়ার্ডের ন্যাশনাল লাইফ ইন্সুরেন্সে কর্মরত বাবা মোঃ কামাল উদ্দিন এবং লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সে কর্মরত কোহিনূর আক্তারের প্রথম সন্তান ছিল কায়িফ। 

জন্ম থেকেই তাদের ফুটফুটে শিশু ছেলেটি বাক প্রতিবন্ধি। ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন তারা। কিন্তু এখন তারা সেই ছেলেকে নিয়ে রীতিমতো গর্ব করেন।

কারণ তাদের ছেলের বিশেষ একটি গুণ আছে। শারীরিকভাবে সক্ষম ছেলেদের থেকে কোনদিক দিয়েই পিছিয়ে নেই কায়িফ। 

নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি সে ক্রিকেট খুবই ভালো খেলে। তার বাবা-মা মনে করেন, কায়িফ ভালোভাবে প্রশিক্ষণ পেলে ক্রিকেটে খুব ভালো করবে এবং দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে।

কায়িফের বাবা মোঃ কামাল জানায়, প্রথম থেকে সে যখন কথা বলতে পারে না, শুনতে পারে না, তাকে নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ ছিল না। সে ছোটবেলা থেকেই আমাকে না বলে খেলতে চলে যেত। তারপর তার মা আমাকে বলতো তার খেলাধুলায় আগ্রহ থাকলে ও এটাই করুক। তারপরে বড় হতে থাকলে তার খেলাধুলার ব্যাপারে আগ্রহ আরো বাড়তে থাকে। 

পরে আমরা তাকে জেলা স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণের জন্য দেই। সেখানে মনির ভাই তার খেলা দেখে বলে কায়িফ আরো ভালো করবে। তাকে যেন পরিবার থেকে সার্পোট দেওয়া হয়। আমরা তাকে পুরো সার্পোট দিচ্ছি। এখন ভালো কোনো জায়গায় তাকে যদি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, কেউ যদি এগিয়ে আসে, আশা করছি কায়িফের জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলার স্বপ্ন পূরণ হবে।

তার মা কোহিনূর আক্তার জানান, ছোটবেলা থেকেই আমি দেখেছি, পড়াশোনার পাশাপাশি কায়িফ ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

বিভিন্ন ক্রিকেট টুনামেন্টে খেলে অনেক মেডেল নিয়ে এসেছে। তার আগ্রহে ও এর ছোট ভাইয়ের উৎসাহে ২০১৮ সালে তাকে আমরা স্টেডিয়ামে ভর্তি করি। ওইখান থেকে সে বিভিন্ন স্থানে খেলতে যায়।

নোয়াখালীতে খেলে সে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছে। ক্রিকেটের প্রতি তার এত অস্থিরতা, এত ভালোবাসা যে আমরা বকা দিলেও সে ঝড়-তুফান উপেক্ষা করে খেলতে যায়। 

কায়িফের খেলার প্রশংসা করে তার সাথে জেলা স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণ নেওয়া তার বন্ধুরা বলে, সে ভালো অফ স্পিন বোলিং এবং ব্যাটিং ও ভালো করে। আমাদের এই ব্যাচে সব থেকে ভালো প্লেয়ার কায়িফ।

প্রতিবন্ধি হওয়ায় তার গুরুত্ব একটু দেওয়া হয়। তবে সে এইবার ডিস্টিক বোর্ড থেকে খেলবে। বিসিবির কোনো টুনামেন্টে সে এখনো খেলে নাই। তবে সামনে বিসিবির টুনামেন্টে খেলবে।

লক্ষ্মীপুর জেলা ক্রিকেট কোচ মোঃ মনির হোসেন বলেন, কায়িফ কথা বলতে না পারলেও সে একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ ক্রিকেটার। গত ২-৩ বছর আগে সে আমাদের জেলা স্টেডিয়ামে প্রশিক্ষণ নিতে আসে। সে অত্যন্ত প্রতিভাবান, সে ডান হাতে অফ স্পিন বল করে।

যারা শারীরিকভাবে সক্ষম কায়িফ তাদের থেকে কেনো অংশে কম না। মেধায় সে অনেক এগিয়ে। কায়িফকে নিয়ে অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের গেম ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বরত রাসেদ ভাইকে বধির টিমে যে প্রশিক্ষণ হয়, সেখানে কায়িফকে অংশগ্রহণের কথা বলি।

আমি আরো বিভিন্ন জেলা কোর্সদের সাথে ওর কথা বলি, যদি সে বধির টিমে যেতে পারে তাহলে সে তাকে প্রমাণ করার সুযোগ পাবে, ইন্টারন্যাশনালি বধির টিমের খেলার সুযোগ আছে। বধির টিমে যাওয়ার জন্য তার যোগ্যতা আছে আমরা দেখি তাকে সেখানে সুযোগ করে দেওয়া যায় কিনা।

আমাদের জেলা থেকে সে এইবার খেলবে এইখানে ভালো করলে বিভাগীয় পর্যায়ে খেলতে পারবে। আশা করি, সে ভালো খেলে লক্ষ্মীপুর জেলার মুখ উজ্জ্বল করবে।

কায়িফ ইশারায় তার ভাব প্রকাশ করলে তার ছোট তাওহীদুল ইসলাম সায়িফ বলেন, ক্রিকেটের প্রতি তার অনেক ভালোবাসা। সে ভালো খেলে লক্ষ্মীপুর জেলার মুখ উজ্জ্বল করতে চায়। প্রথমে সে বোলিং করতো, তারপর স্টেডিয়ামে এসে তার ব্যাটিং এর প্রতি আগ্রহ জন্মায়। 

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement