হাজারো চড়ুইয়ের কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিতো গোপালগঞ্জের শহরতলী

হাজারো চড়ুইয়ের কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিতো গোপালগঞ্জের শহরতলী

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:

Published : ২৩:১৪, ২০ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামীণ জনবসতিতে চড়ুই পাখির দল হরহামেশাই দেখা গেলেও শহরের যেন এক অস্তিতহীন গল্প। গাছপালাসহ আবাস কমে যাওয়ায় চিরচেনা চড়ুই পাখির দেখা মেলাই যেন ভার। তবে গোপালগঞ্জে দেখা মিলছে হাজার হাজার চড়ুই পাখির। 

বিকেল থেকে চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখোরিতো হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। পর্যাপ্ত খাবার, নিরাপদ আবাসস্থল পাওয়ার পাশাপশি নিধন না করায় চড়ুই পাখির বিস্তার লাভ করেছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। 

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জ-টেকেরহাট সড়কের গোপালগঞ্জ শহরতলীর এলাকা হরিদাসপুর খেয়া ঘাট। এই এলাকার এখন চড়ুই পাখির স্বর্গরাজ্য। 

আগের মতো বাসা-বাড়ির জানালা বা ছাদে এখন আর চড়ুই পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায় না গেলেও সূর্যাস্তের আগে দলবেঁধে ছুটে আসে চড়ুই পাখিরা। প্রতিদিন বিকাল হলেই দলবেঁধে ছুটে আসে হাজার হাজার চড়ুই পাখি।

বিদ্যুতের তারে ও গাছের ডালে বসে বিকেল থেকে সন্ধ্যা পযর্ন্ত চলে উড়াউড়ি আর নাচানাচি। যেন তাদের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। মনে হয় যেন তারা সুখ-দুঃখের গল্প করছে একে অপরের সঙ্গে।

চড়ুই পাখির কলরবে মুখোর হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সড়কের নিরন্তর যান চলাচলের শব্দও যেন ছাড়িয়ে যেতে পরেনি তাদের কলরব।

কয়েক বছর ধরেই এই এলাকাটি চড়ুই পাখির দখলে রয়েছে। রাত হলেও ওই এলাকার বিভিন্ন গাছে রাত্রিযাপন করে চড়ুই পাখিগুলো।

পর্যাপ্ত খাবার, নিরাপদ আবাসস্থল পাওয়ার পাশাপশি নিধন না করায় চড়ুই পাখির বিস্তার লাভ করেছে। পরিবেশবান্ধব এ চড়ুই পাখি নিধন না করে রক্ষণাবেক্ষণের ফলে বেড়েছে চড়ুই পাখি। 

ফলে এলাকাবাসীসহ সড়ক দিয়ে চলাচলরত পথিকও থমকে দাঁড়ায় চড়ুই পাখি দেখতে। এমন দৃশ্য দেখে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন সবাই। কেউ কেউ ক্যামেরা কিংবা অন্য মাধ্যমে ফ্রেমবন্দি করে রাখতে দেরি করেন না। চড়ুই পাখির এই মিলনমেলা দেখে তারা আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে থাকেন।

স্থানীয় নাসিরুল আহম্মেদ বলেন, হরিদাসপুর খেয়া ঘাট এলাকায় অভায়াশ্রমের মত থাকায় বিগত ৮ বছর ধরে চড়ুই পাথি এখানে অবস্থান করেছে। নিরাপদ বাসস্থান মনে করা এবং এলাকাবাসী না মারায় দিন দিন চড়ুই পাখির সংখ্যা বাড়ছে।

বিকেল হলেও বৈদ্যুতিক তাড়ে ও বিভিন্ন গাছে উড়াউড়ি করে। কিচিরমিচির শব্দে পুরো এলাকা মাতিয়ে রাখে। আবার রাত হলেই গাছে ফিরে যায়। আমাদের অনেক ভালো লাগে।

পথচারী আবু লাইস শেখ বলেন, আমি সাতপাড় থেকে গোপালগঞ্জ শহরে যাচ্ছিলাম। পথে হরিদাসপুর খেয়া ঘাট এলাকায় পৌঁছালে হাজার হাজার চড়ুই পাখির উড়াউড়ি দেখে এখানে দাঁড়িয়ে যায়। এদের উড়াউড়ি, নাচানাচি দেখে আর কিচিরমিচির শব্দে খুই ভালো লাগলো।

সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কৃষ্ণ চন্দ্র ভট্টাচায্য বলেন পাখি নিধনের ফলে কমে গেলেও করোনাকালীন সময়ে পর থেকে বেড়েছে চড়ুই পাখি।

এ পাখি শুধু ফসলের উপকার করে তা নয় এটি চিত্তবিনোদনেরও একটি অংশ। আমরা যদি বাড়ী পাশে একটি ফলজ প্রজাতির গাছ রাখি তাহলে সেখানে বহু প্রজাতির পাখি আসবে।

দিনের শেষে পাখিরা যখন নীড়ে ফিরে আসবে তখন তাদের কলতান শুনে মনে প্রশান্তি আসবে। এসব পাখি একদিকে প্রাকৃতির সম্পদ যেমন তেমনি অপরদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দয্য।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপশি এই প্রাকৃতির সম্পদ ও প্রাকৃতিক সৌন্দয্য টিকেয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement