আন্দোলন বদলে দিলো বন্ধুত্বের ধারণা
Published : ১৫:১২, ৪ আগস্ট ২০২৪
আজ বন্ধু দিবস। আগস্টের প্রথম রোববার এ দেশে দিবসটি পালিত হয়। বন্ধু কথার সাথেই মিছে থাকে একটা আলাদা টান-বিশ্বাস-ভালোবাসা। বন্ধুত্ব বিষয়টি যে ঠুনকো নয়, তা আবারও প্রমাণ করে দিলো দেশে চলমান আন্দোলন।
বন্ধুত্ব উদ্যাপনের এ দিনে ক্যাম্পাসগুলো বন্ধ, অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে না। এমনকি ক্যাম্পাস খুললেও কারও কারও সঙ্গে দেখা হবে না আর।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর দিন পনেরো পর হুট করেই হলছেড়ে যেতে বলা হলো। সাধারণত উৎসবের ছুটি ছাড়া এভাবে হল ছাড়তে হয় না। এবার হল ছাড়ার সময় উৎসবের আনন্দের জায়গা নিল ভয়-ক্ষোভ।
শেষবারের মতো বন্ধুদের আলিঙ্গনের সময় কেঁপে যায় বুক। সবাই সবাইকে আবার সুস্থভাবে দেখতে পাবে কিনা, সেই ভয়-দুশ্চিন্তা। আগের মতো সেই হাসি, গানে, আড্ডায়, কার্ড খেলায় দিনে আর যদি দেখা না হয়!
তারপর বহু বন্ধু আহতের খবর, বহু বন্ধু আটক হয়। বন্ধ হয় ইন্টারনেট। সব মিলিয়ে একটা দমবন্ধ পরিবেশ। এরই মধ্যে নতুন করে বন্ধু চেনালো এ অন্দোলন।
যার সঙ্গে মাসে একবার কথা হতো, সেও ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে, ‘ঠিক আছিস তো? সাবধানে থাকিস।’ এই কথাটুকু ‘দ্বিধা’ ভেঙে দিল পুরোপুরি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকা এই প্রজন্ম বন্ধুত্ব-সম্পর্ক বোঝে না বলে যে এত দিন প্রচার হয়েছে, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেই ধ্যান-ধারণা ভেঙে পড়ল। এই আন্দোলন প্রমাণ করে দিল, এই প্রজন্মের বন্ধুত্ব ঠুনকো কোনো বন্ধুত্ব নয়।
কেউ আহত হলে দশজন দৌড়ে আসছে। কেউ আটক হলে সবাই ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছে। যে শান্ত ছেলেটা কোনো দিন গলা উঁচু করে না, সে-ও চিৎকার করে বলছে, ‘আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই। দিতেই হবে।’ একটা আন্দোলন শুধু শত্রু বাড়ায় না, বন্ধুও বাড়ায়।
যখন দেশ স্বাভাবিক হবে, ক্যাম্পাসগুলো খুলে যাবে, আবার সবাই ফিরে যাবে ক্লাসে, তখন হারানো বন্ধুরাও থাকবে-আড্ডায়, গল্পে, স্মৃতিতে আর মধ্যরাতের নীরবতায়। থাকবে তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষাও।
পরের বন্ধু দিবসে আর কেউ বলবে না, বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধু হয় না। সবাই জানবে, এ দেশে একটা আন্দোলন হয়েছিল। সেই আন্দোলনে এ দেশের বহু ছেলেমেয়ে বুক পেতে দিয়েছিল গুলির সামনে।
আর সেই গুলির মুখে কেউ তার বন্ধুকে ছেড়ে যায়নি। একসঙ্গে স্লোগান দিয়েছে, ‘বুকের মধ্যে ভীষণ ঝড়; বুক পেতেছি, গুলি কর।’
নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সম্পন্ন মহাপাত্র জানান, ‘আন্দোলনে আসার সাহসটুকু পাচ্ছিলাম আমার বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে। আমরা ৭-৮ জন বন্ধু যুক্ত হই আন্দোলনে। কয়েকজন আহত হলেও আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ি। যে বন্ধুর সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় না, কথা হয় না সেও আমার পাশে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আন্দোলন করছিল।’
বিডি/ও