দুপুরে সন্তানের জন্ম, রাতে ডেঙ্গুতে মারা গেলেন মা

বছর খানেক আগে বিয়ে করেন শান্তা সূত্রধর ও সাগর দাশ। সাগর-শান্তার কোলজুড়ে জন্ম নেয় একটি মেয়ে শিশু। সেই খুশিতে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়।

কিন্তু দুপুরের সেই উচ্ছ্বাস রাত গড়াতেই রূপ নেয় বিষাদে। সন্তান জন্মের ৮ ঘণ্টার মাথায় দুধের শিশুকে রেখে মারা গেলেন শান্তা। 

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে হৃদয় বিদারক এ ঘটনা ঘটে।

মূলত সপ্তাহ খানেক আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। এরই মধ্যে সন্তান জন্ম দেওয়ার পর নানা শারীরিক জটিলতায় শান্তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় তার পরিবার। 

মৃতের পরিবারের সদস্যরা জানান, গত ৭ সেপ্টেম্বর শান্তাকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গর্ভে সন্তান অবস্থায় শান্তার ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল পরিবার। সোমবার দুপুরে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। 

পরে শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে শুরু করায় শান্তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) হস্তান্তর করা হয়। সেখানে রাতেই মৃত্যু হয় তার।

সাগর দাশের মামাতো ভাই আকাশ দে জানান, বাচ্চা হওয়ার পর আমাকে ফোন করে দাদা মিষ্টি নিয়ে যেতে বলেন। পরে আমি হাসপাতালে গিয়ে বউদির সঙ্গে কথা বলি। তিনি তখন ওয়ার্ডে ছিলেন। তখনো কথা বলছিলেন। 

সন্ধ্যা থেকে তার অবস্থা খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানেই রাতে মারা যান।

এদিকে ৪ দিন ধরে ডেঙ্গুর সঙ্গে লড়াইয়ের পর একই দিনে প্রাণ হারান শাকিলা আক্তার নামের আরেক নারী। মৃত্যুর আগে তিনিও খুব করে সন্তানদের দেখতে চেয়েছিলেন। বিশেষ করে দেড় বছরের দুধের শিশু মিমের কথা বলছিলেন বারবার।

শাকিলার পরিবার জানায়, ৭ দিন ধরে জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন শাকিলা। বাড়িতেই আক্রান্ত হন। ৩ দিন আগে চকরিয়ায় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাকে। পরে অবস্থার অবনতি হলে শাকিলাকে সোমবার সকালে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।

শাকিলার বোন মারুফা জানান, বোনের পেটে পানি জমে গিয়েছিল। তার অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। তাই চট্টগ্রামে নিয়ে আসি। সেখানেই মারা যায় সে। তার বাচ্চাগুলো এখনো খুব ছোট। ছোট দুটি বাচ্চা বুঝতে পারছে না ওদের মা নেই।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে নতুন করে ১২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এবং মারা গেছেন ২ জন। 

চলতি বছর এ নিয়ে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে চলতি সেপ্টেম্বরেই প্রাণ হারান ৪ জন। এ বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭১৪ জন।