ই-কমার্সে প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

ই-কমার্সে প্রতারণা থেকে বাঁচার উপায়

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৩:০৯, ২৭ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যবহার করে যে সব প্রতিষ্ঠান ই-বাণিজ্য করছে,   সেগুলোর মধ্যে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যে-সব প্রতারণামূলক কার্যক্রমের অভিযোগ থাক, সেগুলো থেকে উত্তরণের কিছু উপায় রয়েছে। দক্ষহাতে বিষয়গুলো সামলাতে পারলে যে-কোনো ধরনের প্রতারণা থেকে বাঁচা সহজ হবে।  

বাংলাদেশে ই-কমার্সে সাধারণত যেসব প্রতারণা বা  জালিয়াতির অভিযেগা ওঠে, সেগুলো হলো:  
 * বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা বিজ্ঞাপন: কিছু কোম্পানি গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য পণ্যের বৈশিষ্ট্য, গুণগত মান  নিয়ে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দেয় এবং নিম্নমানের পণ্যে ডিসকাউন্ট বাড়িয়ে বিক্রি করে।
 * প্রতারণাপূর্ণ মার্কেটিং: বিভ্রান্তিকর কৌশলগুলো ব্যবহার করা, যেমন হিডেন চার্জ, অস্পষ্ট শর্তাবলি অথবা ক্রেতাদের প্রলুব্ধ করার জন্য বোনাস বা গিফটের মিথ্যা প্রোলভন দেখানো।
 * ডেটা গোপনীয়তা লঙ্ঘন: গ্রাহকের সম্মতি বা নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গ্রাহকের তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা, যার ফলে গ্রাহকের ব্যক্তিগত এসব তথ্য যে-কোনো সময় চুরি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
 *  ডেলিভারি সমস্যা: গ্রাহকদের কাছ থেকে পেমেন্ট গ্রহণ করা সত্ত্বেও সময়মতো বা একেবারেই পণ্য ডেলিভারি  করতে ব্যর্থ হওয়া।
 * নকল বা নিম্নমানের পণ্য বিক্রি করা: অরিজিনাল পণ্যের ফটো ব্যাবহার করে নকল পণ্য ডেলিভারি করা।
 * অন্যায্য রিটার্ন এবং রিফান্ড নীতি: কঠোর এবং অযৌক্তিক রিটার্ন এবং রিফান্ড নীতি প্রয়োগ করা, যা কিনা গ্রাহকদের রিফান্ড বা এক্সচেঞ্জ পাওয়া কঠিন করে তোলে।
 * মূল্য বৃদ্ধি: জরুরি পণ্যের জন্য অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করা, বিশেষ করে সংকট বা উচ্চ চাহিদার সময় এই কাজ গুলো বেশি করা হয়।
 * ডার্ক প্যাটার্ন ব্যবহার করা: গ্রাহকদের মাইন্ড চেঞ্জ করার  করতে কিছু ফেইক ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন ব্যবহার করে যেন কাস্টমার অপছন্দীয় কোনো প্রোডাক্ট কিনতেও অকৃষ্ট হয়। 

নকল পণ্যের তালিকা
   * নকল আইটেম: নকল পণ্যের তালিকা তৈরি করে সেগুলো কাস্টমারকে আকৃষ্ট করতে আবার ডিস্কাউন্ট মুল্যে বিক্রি করে।  
   * বিভ্রান্তিকর পণ্যের বিবরণ: বিক্রেতারা  ক্রেতাদের প্রতারিত করার জন্য পণ্যের বৈশিষ্ট্য অথবা গুণকে অতিরঞ্জিত করে তুলে ধরার চেষ্টা করে।
 

ফিশিং স্ক্যাম
   * ভুয়া ওয়েবসাইট: জালিয়াতি করার জন্য এমন ওয়েবসাইট  তৈরি করে যা কোনো বৈধ ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এর মত দেখতে হয়। এর মাধ্যমে কাস্টমার এর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন লগইন  করার তথ্য  এবং ক্রেডিট কার্ডের বিবরণ চুরি করে।
   * ফিশিং ইমেইল: তারা নামকরা কোম্পানির নাম ব্যাবহার করে  প্রতারণামূলক ইমেইল পাঠায়,  যার মাধ্যে কোন লিংকে ক্লিক করিয়ে সব কাস্টমার এর ডিভাইসে হ্যাকার এক্সেস নিয়ে নেয়।
 

 ডেলিভারি জালিয়াতি:
   * পণ্যের ডেলিভারি না করা : কিছু বিক্রেতা টাকা অগ্রীম নিয়ে পরে আর পন্য ডেলিভারি করে না।
   * নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ: কাস্টমার এমন পন্য পান যার কোয়ালিটি  বিজ্ঞাপনে দেখানো পন্যের সাথে কোন ভাবেই মিলে না।

পঞ্জি স্কিম:
   * বিনোয়গকারীদের সাথে প্রতারণা: প্রতারণাকারীরা অবাস্তব রিটার্ন এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করে এবং নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে  পূর্বের টাকা পরিশোধ করে।

সামগ্রিকভাবে এই সমস্যাগুলি কাটিয়ে উঠতে, ভোক্তা এবং ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে হবে:

ভোক্তা সচেতনতা: জালিয়াতির সাধারণ কৌশল এবং কীভাবে সেগুলি চিহ্নিত করা যায় সে সম্পর্কে ভোক্তাদের শিক্ষিত করুন।
* কেনাকাটা করার আগে বিক্রেতা এবং পন্যটির কাস্টমার রিভিও নিয়ে যাচাই করতে তাদের উৎসাহিত করুন।
* তাদের এমন কেনাকাটা  সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিন যার তথ্য গুলো সত্য বলে মনে হয় না।
 কঠোর নিয়মাবলি: লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা এবং স্বচ্ছতার মান সহ ই-কমার্স ব্যবসার জন্য আরও কঠোর নিয়মাবলী বাস্তবায়ন করা। প্রতারণা  মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী ভোক্তা সুরক্ষা কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা।

সুরক্ষিত পেমেন্ট গেটওয়ে: 
* সংবেদনশীল আর্থিক তথ্য সুরক্ষার জন্য  নিরাপদ পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করা।
*  বিক্রেতাকে যাচাই করে নেওয়া।
 * বিক্রেতাদের বৈধতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য দুই তিন স্তরের কঠোর যাচাইকরণ প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা।
* বিক্রেতাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং গ্রাহকদের প্রতিক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে রেটিং এবং তা পর্যালোচনা করার জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করা।

কাস্টমার সাপোর্ট :  
*সমস্যা দ্রুত সমাধানে স্ট্রং কাস্টমার সাপোর্ট এর ব্যাবস্থা করা।
* যোগাযোগের একাধিক মাধ্যম, যেমন ফোন, ইমেল এবং লাইভ চ্যাট প্রদান করা।

* ডেটা গোপনীয়তা ও সুরক্ষা
 গ্রাহকের তথ্য সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী ডেটা সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রয়োগ করুন।
* সকল সমস্যা সঠিক ভাবে সমধান হচ্ছে কিনা তা নিয়মিত পর্বেক্ষন করা।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা
প্রতারকদের তদন্ত ও বিচারের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করুন।
* ভবিষ্যতের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সন্দেহ জনক যে কোন তথ্য শেয়ার করে রাখুন।

সর্বোপরি একটি যুগ উপযোগী আধুনিক ই-কমার্স ব্যবসার নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরী যেখানে ভোক্তা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর দু'পক্ষেরই স্বার্থ সুরক্ষা হবে, তাছাড়া দুপক্ষই কোনরকম নিয়মের ব্যত্যয় ঘটালে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসো।  

এই কৌশলগুলো গ্রহণ করে, ভোক্তা এবং ই-কমার্স ব্যবসায়ী উভয়ই বাংলাদেশে একটি নিরাপদ এবং আরও বিশ্বাসযোগ্য ই-কমার্স পরিবেশ তৈরি করে একসঙ্গে কাজ করতে পারবে।

এনই

শেয়ার করুনঃ
Advertisement