পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বসছে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান

Published : ১৫:৪৫, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
তেহরানের পরমাণু লক্ষ্য নিয়ে কয়েক দশকের অচলাবস্থা নিরসনে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান। শনিবার (১৯ এপ্রিল) রোমে এই বৈঠক হতে যাচ্ছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ওমানের মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি ও ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ পরোক্ষ আলোচনা করবেন। সপ্তাহ খানেক আগে মাস্কটে প্রথম দফা আলোচনা হয়েছে, যাকে গঠনমূলক বলছে উভয়পক্ষই।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে কিছু ইরানি কর্মকর্তা ধারণা করার পর তেহরান দ্রুত চুক্তির প্রত্যাশা করছে না।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এ সপ্তাহে বলেছেন, তিনি ‘অতিরিক্ত আশাবাদী বা হতাশাবাদী নন’।
ট্রাম্প শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, “পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে ইরানকে বিরত রাখার পক্ষে আমি। তারা পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না। আমি চাই ইরান হোক মহান, সমৃদ্ধশালী ও অসাধারণ।”
২০১৫ সালে ইরান ও ছয় শক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে বাতিল করেন। পাশাপাশি তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা ফেরান। ট্রাম্প জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ইরানের ওপর 'সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগের কথা বলে আসছেন।
ওয়াশিংটন চাইছে, ইরান অতি সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করুক, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির লক্ষ্যে উৎপাদন করা হচ্ছে বলে তারা বিশ্বাস করে।
তেহরান বরাবরই বলে আসছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ৷ তারা বলছে, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বদলে তারা কিছু বিধিনিষেধ নিয়ে আলোচনা করতে ইচ্ছুক। তবে ২০১৮ সালের মতো ওয়াশিংটন যে আর পিছু হটবে না, তার নিশ্চয়তা চায় তারা৷
২০১৯ সাল থেকে ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের প্রশ্নে ২০১৫ সালের চুক্তিকে উপেক্ষা করার পাশাপাশি অনেক বেশি পরিমাণ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করে। বেসামরিক জ্বালানি কর্মসূচির জন্য প্রয়োজনের তুলনায় ওই মজুদ অনেক বেশি বলে পশ্চিমারা বিশ্বাস করে।
ইরানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ইরানের অপরিবর্তনীয় শর্তের মধ্যে রয়েছে- কখনোই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সেন্ট্রিফিউজগুলো অপসারণে সম্মতি না দেওয়া, সম্পূর্ণভাবে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ না করা এবং ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত মাত্রার নিচে ইউরেনিয়ামের মজুত কমিয়ে না আনা। ক্ষেপণাস্ত্রের মতো প্রতিরক্ষা সক্ষমতা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি নয় ইরান।
তেহরান ও ওয়াশিংটন উভয়েই কূটনীতি চালিয়ে যাওয়ার কথা বললেও দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসা বিরোধের বিষয়ে তাদের মধ্যে এখনো বিস্তর ব্যবধান রয়েছে।
উইটকফ ও আরাকচি গত সপ্তাহে প্রথম দফার বৈঠক শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেন। তবে ২০১৫ সাল থেকে দুই দেশের কর্মকর্তারা সরাসরি আলোচনা করেননি এবং ইরান বলেছে যে, রোমের আলোচনাও ওমানি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির একটি পক্ষ রাশিয়া এখন ‘সহায়তা, মধ্যস্থতা এবং যেকোনো ভূমিকা পালনের’ প্রস্তাব দিয়েছে, যা ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উপকারী হবে।
এএম