ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার মনোনীত সদস্যদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ

ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার মনোনীত সদস্যদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

Published : ১৭:৩৪, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট-ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন মনোনীত প্রার্থী। কারো কারো বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগও রয়েছে। জানুয়ারিতে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর তার মনোনীত প্রার্থীদের মার্কিন সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। যদিও  রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সিনেট। তারপরও মন্ত্রিসভার এই প্রার্থীরা দ্বিদলীয় শুনানিতে তীব্র প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন।

ট্রাম্পের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে মনোনীত পিট হেগসেথের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) পুলিশ জানিয়েছে, পেন্টাগনের মনোনীত প্রার্থী হেগসেথ ২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ায় যৌন হয়রানির একটি অভিযোগের তদন্তের আওতায় ছিলেন।

আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী হেগসেথ ফক্স নিউজের উপস্থাপক। তাকে কখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। তিনি কোনও অন্যায় করার কথা অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্পের মুখপাত্র স্টিভেন চুয়াং বলেছেন, হেগসেথ সব অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস জানিয়েছে, মিনেসোটা ন্যাশনাল গার্ডের সাবেক সদস্য হেগসেথকে একসময় তার সহ-সামরিক সদস্যরা ‘অভ্যন্তরীণ হুমকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। কারণ তার বাহুর উপরের অংশে একটি ট্যাটু আঁকা রয়েছে। আর সেখানে লেখা রয়েছে ‘ঈশ্বর তা চান।’ বাক্যটি সাদা-শ্রেষ্ঠত্ববাদী ধারণার সঙ্গে যুক্ত। এটি মধ্যযুগের খ্রিস্টান ক্রুসেডারদের একটি স্লোগান।

সিবিএসকে অবসরপ্রাপ্ত মাস্টার সার্জেন্ট ডেরিকো গেইথার বলেছেন, ‘ট্যাটুটির চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল।’ হেগসেথ অবশ্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।

নির্বাচিত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স হেগসেথের পক্ষে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, এই ল্যাতিন বাক্যটি কেবল একটি খ্রিস্টান স্লোগান। তিনি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) কে ‘জঘন্য খ্রিস্টান-বিরোধী সাম্প্রদায়িকতার’ জন্য অভিযুক্ত করেছেন। কারণ এপিই প্রথম এই ট্যাটুর খবর প্রকাশ করেছিল।

হেগসেথকে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভিষেক অনুষ্ঠানে ওয়াশিংটন ডিসিতে কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। চলতি বছর প্রকাশিত একটি বইয়ে তিনি বলেছেন, তার ট্যাটুর কারণেই তাকে এই দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছিল।

ট্রাম্পের নতুন অ্যাটর্নি জেনারেল ম্যাট গেটজও নৈতিক তদন্তের মুখে রয়েছেন। কংগ্রেসম্যান হিসেবে তার সময়কালে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প তাকে মার্কিন বিচার বিভাগের নেতৃত্বের জন্য মনোনীত করেন। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদে ফ্লোরিডার কংগ্রেস সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করেন গেটজ।

পদত্যাগ করায় কংগ্রেস তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। অথচ ওই প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে যৌন অসদাচরণ, অবৈধ মাদক ব্যবহার এবং প্রচারণা তহবিলের অপব্যবহার সম্পর্কিত অভিযোগ করা হয়েছিল।

প্রতিবেদনটি গোপন রাখার অনুরোধ করেন রিপাবলিকান হাউজ স্পিকার মাইক জনসন। যদিও বিভিন্ন দল বিশেষ করে গেটজের বিরুদ্ধে হাউজ এথিক্স কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়া দুই নারীর একজনের আইনজীবী এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে আইনপ্রণেতাদের চাপ দেন। ওই আইনজীবী জো লেপ্পার্ড সিবিএসকে বলেন, তার এক ক্লায়েন্ট ২০১৭ সালে ফ্লোরিডায় গেটজকে একটি নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে দেখেছিলেন। তবে গত বছর বিচার বিভাগের তদন্তে গেটজের বিরুদ্ধে অভিযোগ খারিজ করা হয়।

এদিকে টিকাবিরোধী ও চিকিৎসাশাস্ত্রে ষড়যন্ত্রের তাত্ত্বিক হিসেবে পরিচিত রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিয়েছেন ট্রাম্প। ভ্যাকসিন বিষয়ে সংশয় পোষণের জন্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন কেনেডি জুনিয়র।

চিকিৎসা–সংক্রান্ত বিভিন্ন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দেওয়ার ইতিহাস আছে কেনেডির। তিনি টিকার বিরোধিতা করে থাকেন। তার দাবি, শৈশবে দেওয়া টিকাগুলো শিশুদের প্রতিবন্ধী করে দেয়। তবে এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেখাতে পারেননি তিনি। কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাকে প্রাণঘাতী বলে উল্লেখ করেন কেনেডি জুনিয়র।

তার নিয়োগে বিশ্বব্যাপী ভ্যাকসিন নির্মাতা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম শুক্রবার ব্যাপকভাবে কমে গেছে। 

আমেরিকান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান জর্জ সি বেনজামিন বিবিসিকে বলেছেন, কেনেডির ভ্যাকসিন সম্পর্কিত সমালোচনা ‘দেশের স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিশাল ক্ষতি’ করেছে। বেনজামিন আরও বলেছেন, কেনেডি এই পদের জন্য সম্পূর্ণভাবে ভুল ব্যক্তি।

ট্রাম্প নিজে এখনও তার মনোনীত প্রার্থীদের সমালোচনার বিষয়ে সরাসরি কিছু বলেননি। এফবিআই পরিচালক এবং ট্রেজারি সেক্রেটারি পদগুলোর প্রার্থী এখনও ঘোষণা করা হয়নি। এখনও নতুন প্রশাসনের জন্য নতুন ব্যক্তি নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন ট্রাম্প। সূত্র: বিবিসি

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement