অস্ত্র জমা দিচ্ছে আসাদের সেনারা
Published : ১৬:৫৩, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
কোনো ত্রাণ বা ব্যাংক থেকে টাকা তোলার লাইন নয়। অস্ত্র জমা দেওয়ার লাইন। দলে দলে সিরিয়ার সশস্ত্র গ্রুপের কাছে অস্ত্র জমা দিচ্ছেন আসাদ সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও সেনারা। গেল ৮ ডিসেম্বর বিদ্রোহীদের টানা ১২ দিনের আকস্মিক অভিযানে দেশ ছেড়ে পালান দীর্ঘ দুই দশকের বেশি সময় ধরে স্বৈরশাসন চালান বাশার আল আসাদ। তারপরই ভেঙে পড়ে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর কমান্ড।
আসাদ দেশ ছাড়ার পর ক্ষমতার দখল যায় হায়াত আল তাহরির আল শাম তথা এইচটিএস নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে। এরপরই সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এইচটিএস যোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র জমা দিতে থাকেন। এর জন্য কোথাও কোথাও দীর্ঘ লাইনও দেখা যায়।
ক্ষমতার পালাবদলের পর বিভিন্ন স্থানে আসাদ বাহিনীর সেনাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয় এইচটিএস। সেই ঘোষণা মোতাবেক সিরিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ টারতুসের আসাদের রাজনৈতিক দল বাথ পার্টির আঞ্চলিক সদরদপ্তরে অস্ত্র জমা দিতে আসেন সাবেক সেনা সদস্যরা। সেখানে অস্ত্র জমা নেয়ার কাজ করছে স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আহরার আল শাম। এর আগে, আসাদ বাহিনীর সেনাসদস্য ও আসাদ সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর যোদ্ধাদের তুরতুসে বাথ পার্টির কার্যালয়ে নিজেদের অস্ত্র জমা দয়ার নির্দেশনা দেয় গোষ্ঠীটি।
সিরিয়ান সেনাবাহিনী একজন কর্মকর্তা, সাবেক মেজর আলি হাবাবা গণমাধ্যমকে বলেন, বিদ্রোহীরা যখন ক্ষমতা দখল করতে আসে তখন আমি দারা শহরে দায়িত্বরত ছিলাম। তারা কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই আমাদের সরে যেতে নির্দেশ দেয়। আমরাও কোনো লড়াই না করে সেনা প্রত্যাহার করি। এখন এখানে এসেছি বিষয়গুলো মীমাংসা করতে, আমরা আশা করি দেশের জন্য এটি একটি ভালো পদক্ষেপ হবে।
বিদ্রোহীরা ক্ষমতা দখল করার পর সিরিয়ার অবস্থা ভালো বলেও মন্তব্য করেন সাবেক সেনাসদস্যরা। আসাদ বাহিনীর সেনারা অস্ত্র সমর্পণ ও মীমাংসা বিষয়ে সহযোগিতা করছে বলে জানান আহরার আল শামের কর্মকর্তারা।
সাবেক সেনাসদস্য আলী মারুফ বলেন, আমি এখানে বিষয়গুলো মীমাংসা করতে এসেছি। এখানে কোনো ভয় নেই, পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভালো। আমরা এখন নিজেদের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারছি, যা আগে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে চেপে রাখতে হতো।
অস্ত্র জমা দিতে এসে সেনাসদস্যদের ওপর আসাদ সরকারের সময়ে চলা নিপীড়ন ও বৈষম্যের গল্পও তুলে ধরেন অনেক সেনাসদস্য। এ সময় তারা আসাদ সরকারকে উৎখাতের জন্য বিদ্রোহীদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানান।
সিরিয়ান সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য ইব্রাহিম বলেন, যারা আমাদের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল এবং আমাদের সব কিছু থেকে বঞ্চিত করেছিল সেসব স্বৈরাচার থেকে মুক্তি পেয়ে আমরা আমাদের অবস্থান ঠিক করতে এসেছি। এখন, আমরা কাজ করতে পারি এবং আমাদের পরিবারের জন্য জীবিকা নির্বাহ করতে পারি। আগে, আমাদের সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল, এমনকি সামরিক ছুটিও দেওয়া হতো না। আসাদ সরকার আমাদের পরিবারের কাছে আসার জন্য মাসে মাত্র দুদিন ছুটি দিত, এমন অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমরা বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম। সম্মানিত মুজাহিদিনদের ধন্যবাদ, তাদের জন্য আমাদের বিষয়গুলি সহজ হয়ে গেল।
আসাদের হাত থেকে মুক্তি পেলেও বিশ্লেষকরা মনে করছেন সিরিয়ার পুনর্গঠন এখনো বহুদুর। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিতে পুনরায় সচল করতে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তা এবং আসাদ বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করতে পারে সীমান্তবর্তী প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক।
বিডি/এন