ইউক্রেন যুদ্ধ: এক বছরে ৪ লাখ সেনা হারিয়েছে রাশিয়া

ইউক্রেন যুদ্ধ: এক বছরে ৪ লাখ সেনা হারিয়েছে রাশিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

Published : ১২:৫৬, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

৩ বছরে পা দিতে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এরই মধ্যে রণক্ষেত্রে বিশাল একটি অংশ দখল করেছে রাশিয়া। তবে তার জন্য বড় মাশুলও গুনতে হয়েছে পুতিনকে।

কারণ এই দীর্ঘ যুদ্ধে ইউক্রেনের মতো রুশ সেনাদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নিতান্তই কম নয়। আর এ নিয়ে এবার চাঞ্চল্যকর এক দাবি করেছে কিয়েভ।

সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের কমান্ডার-ইন-চিফ অলেক্সান্ডার সিরস্কি সোমবার বলেছেন, শুধু ২০২৪ সালে যুদ্ধক্ষেত্রে ৪ লাখ ২৭ হাজার সেনা হারিয়েছে রাশিয়া।

এর আগে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছিল, গত বছর যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ৪ লাখ ৩০ হাজার সেনা আহত অথবা নিহত হয়েছে। সংখ্যার বিচারে এটি রাশিয়ার ৩৬টি মোটরচালিত ব্রিগেডের সমতুল্য। ইউক্রেন বলছে, ২০২৪ সালে রুশ সেনা হতাহতের সংখ্যা ২০২২ ও ২০২৩ এর মোট ক্ষতির সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।

কিয়েভ বলছে, গড়ে প্রতিদিন ১১৮০ জন রুশ সেনা হতাহত হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, বছরের শেষের দিকে রাশিয়ার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কারণ, এই সময়ে রুশ বাহিনী তাদের আক্রমণ বাড়িয়েছে।

ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বলেছে, রুশ বাহিনীর সর্বোচ্চ মাসিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে নভেম্বর এবং ডিসেম্বরে – যথাক্রমে ৪৫,৭২০ এবং ৪৮,৬৭০। কারণ, এই সময়ে রাশিয়া দোনেৎস্কে তাদের আক্রমণ তীব্র করেছে।

এর আগে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পূর্বাঞ্চলে এখনো রুশ সেনাদের অগ্রগতি ঠেকিয়ে রাখছে ইউক্রেনের সেনারা। তবে কুরাখোভ শহরের কাছে রুশ অবস্থান দ্বারা আটকা পড়েছে অনেক সেনা। লাগাতার যুদ্ধে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছে সৈন্যরা।

ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিবিসি। প্রতিবেদনে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কমান্ডার ও সৈনিকের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে যুদ্ধে স্বজন হারিয়েছেন, বাড়ি ছেড়েছেন অথবা বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এমন ইউক্রেনীয় নাগরিকদের মন্তব্যও তুলে ধরা হয়।

রুশ সামরিক অভিযানের পর ইউক্রেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া ৩১ বছরের কমান্ডার সুরাত বিবিসির প্রতিবেদককে জানান, যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি মনে করেছিলেন এটি তিন বছর চলতে পারে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এ যুদ্ধ আগামী ১০ বছর লড়তে হবে।

আরেক সেনাসদস্য জানান, আলোচনার মাধ্যমে কেবল যুদ্ধ সাময়িকভাবে থামতে পারে, তবে আগামী এক-দুই বছর পর তা আবারও ইউক্রেনের ঘাড়ে ফিরে আসবে। ইউক্রেনের এক সেনা জানান, ইউক্রেনবিহীন পৃথিবীতে বেঁচে থাকার পরিবর্তে তিনি জয়ের জন্য মৃত্যুকে বরণ করতেও রাজি আছেন।

ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ডেনিপ্রোতে ক্রামগত রুশ ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনে চলছে। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, ইউক্রেনের উচিত এখনই যুদ্ধ থামিয়ে আলোচনায় আসা। এমনকি বিভিন্ন জরিপে নাগরিকরা যুদ্ধের পরিবর্তে আলোচনাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। বিশেষ করে নারীরা মনে করছেন এই যুদ্ধে সামরিকভাবে কেউ জয়ী হতে পারবে না।

ডেনিস নামে একজন নারী বলেন, ইউক্রেনের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারিভাবে স্বীকার করা সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। তিনি মনে করেন, যুদ্ধে ৪ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় নিহত এবং আহত হয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, আরও বেশি মানুষের মৃত্যু সমস্যার সমাধান করবে না। তিনি বলেন, আমরা যুদ্ধবিরতি চাই, আমরা আরও অনেক বছর ধরে যুদ্ধ চালাতে পারব না।

বলা হচ্ছে, উভয়পক্ষের আলোচনায় ইউক্রেনের নারীদের সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, যারা যুদ্ধে তাদের বাবা, ভাই, স্বামী ও সন্তানদের হারিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এমনকি শান্তির জন্য ইউক্রেনকে তার ভূমি রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হতে পারে।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement