রক্তশূন্যতা-কোষ্ঠকাঠিন্য সারাবে কলমি শাক
Published : ১৬:৩৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পুষ্টি গুণে অনন্য কলমি শাক একটি আঁশজাতীয় খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে খাদ্য উপাদান। এই শাক দামে সস্তা ও সহজলভ্য, কিন্তু পুষ্টিতে পরিপূর্ণ।
তবে কলমি শাক গ্রাম বাংলার অতি পরিচিত সাধারণ শাক হলেও আজকাল শহরের মানুষরাও খেতে পছন্দ।
পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কলমি শাক রাখলে সরাসরি অনেক উপকার পাওয়া যেতে পারে। কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম, লোহা ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান।
হেলেঞ্চা, থানকুনি, কচু ও পুঁইশাকের চেয়ে কলমিশাকে থায়ামিন অর্থাৎ ভিটামিন বি-১ রয়েছে অনেক বেশি পরিমাণ।
১০০ গ্রাম কলমিশাকে ১.৮ গ্রাম আমিষ, ৯.৪ গ্রাম শর্করা, ০.১৪ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.৪ মিলি গ্রাম ভিটামিন বি-২ অর্থাৎ রিবোফ্লোবিন, ৪২ মিলি গ্রাম ভিটামিন-সি, ১০৭ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.৯ মিলি গ্রাম লোহা, ১০ হাজার ৭৪০ মাইক্রো গ্রাম ক্যারোটিন ও খাদ্য শক্তি রয়েছে ৪৬ কিলোক্যালরি।
এই শাকটি খেলে মুক্তি মিলবে বেশ কয়েকটি রোগ থেকে। যেমন-
১. রক্ত শূন্যতায়
কলমি শাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে লৌহ থাকায় রক্তশূন্যতার রোগীদের জন্য খুব উপকারী। সারা দেহে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ ঠিক রাখতে এই শাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে কলমি শাকে উপকার মিলতে পারে। কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে।
৩. সর্দি কাশি সারতে
কলমি শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। তাই সর্দি-কাশির সমস্যা থাকলে খেতে পারেন। তবে খুব বেশি সময় ধরে রান্না না করাই ভালো।
৪. বসন্ত রোগে
কলমি শাক বসন্ত রোগের প্রতিষেধক ও প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে।
৫. দাঁত ও মাড়ি মজবুত রাখতে
কলমি শাকে থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি থাকায় আমাদের দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত করে।
৬. এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে
কলমি শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে।
৭. লিভার ভালো রাখে
লিভার ভালো রাখতে কলমি শাক বেশ কার্যকরী। এটি জন্ডিসের ক্ষেত্রেও সমানভাবে কাজ করে। গবেষণায় দেখা গেছে, কলমি শাকে থাকা কিছু উপাদান লিভার থেকে ক্ষতিকর পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
৮. জ্বালাপোড়া কমায়
জ্বালাপোড়া করলে কলমির রস করে ৩ বা ৪ চামচ পরিমাণ ৩ সপ্তাহ খেলে ওই জ্বালা কমে যায়। আর হাত-পা বা শরীর জ্বালা করলে কলমি শাকের রসের সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে এক সপ্তাহ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৯. হার্ট ভালো রাখে
কলমি শাকে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন রয়েছে। সেইসঙ্গে এই শাকে আরও থাকে প্রচুর ভিটামিন সি। শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে এই দুই উপাদান। যে কারণে দূরে থাকে হৃদরোগের মতো অসুখ। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত কলমি শাক খান তাদের হার্টের রক্তনালির ভেতর চর্বি বা ময়লা জমে না। হার্ট ভালো রাখতে এই শাক নিয়মিত খেতে পারেন।
১০. ক্যান্সার থেকে দূরে রাখে
ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি রোগকে দূরে রাখতেও কাজ করে কলমি শাক। এই শাকে থাকে ১৩ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে সব ধরনের ফ্রি র্যাডিকেলস বের করে দেয়। ফলে শরীরে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধির আশঙ্কা কমে। তাই ক্যান্সারের প্রতিরোধে এই শাক খেতে হবে।
১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো থাকলে ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসজনিত অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়। এই কাজে আপনাকে সাহায্য পারে কলমি শাক। এই শাকে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। সরাসরি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে কাজ করে এই ভিটামিন। যে কারণে সংক্রামক অসুখ থেকে দূরে থাকা সহজ হয়।
বিডি/ও