কখন বুঝবেন সম্পর্কে বিচ্ছেদ প্রয়োজন
Published : ১৫:৩২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪
ভালোবেসে একে অপরে সম্পর্ক তৈরি করে। সম্পর্কে যেমন সুখ আছে, তেমনই আছে বিচ্ছেদের কষ্টও। ভালোবাসার মানুষটিকে যেমন বলতে হয় সে কথা, তেমনই কোনো সম্পর্ক কখন আর ভালোবাসার নেই তাও বুঝতে হয়।
অনেক সম্পর্কেই তিক্ততা চলে আসে। এই রকম পরিস্থিতিতে সম্পর্কটা টেনে হিঁচড়ে আর না আগানোই ভালো। এতে দুজন আলাদা হয়েও সুখে থাকা সম্ভব। যদিও ভালোবাসলে কেউ কেউ খুঁজে পান না ইতি রেখাটি।
কীভাবে বুঝবেন সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যাওয়াই এক মাত্র পথ। চলুন জেনে নেওয়া যাক-
১) মানসিক বা শারীরিক নিগ্রহের শিকার
যদি কেউ কোনো সম্পর্কে থাকাকালীন মানসিক বা শারীরিক নিগ্রহের শিকার হন, দ্বিতীয় বার না ভেবে বেরিয়ে আসুন। পুরুষ হন বা নারী, সঙ্গী যদি কোনো ভাবে মৌখিক, অর্থনৈতিক, শারীরিক বা মানসিক নিগ্রহ করেন তবে অবিলম্বে সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে এসে সাহায্য নিন বিশেষজ্ঞদের।
২) সহানুভূতি কমে গেলে
সহানুভূতি একটি পরিপূর্ণ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে, যা মানসিক সংযোগ এবং বোঝাপড়া বৃদ্ধি করে। সহানুভূতি কমে গেলে মানসিক ব্যবধান পূরণ করা কঠিন হয়ে যায়। যদি আপনার সঙ্গী অনবরত আপনার অনুভূতি এবং সংগ্রামকে উপেক্ষা করে বা প্রত্যাখ্যান করে, তবে বুঝে নেবেন আপনাদের মানসিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এরপর সে পাশে থাকলেও আপনি সব সময় শূন্যতা অনুভব করবেন। সমর্থন এবং ভালোবাসার বদলে পাবেন কেবল উপেক্ষা। এমন অবস্থায় যদি তার প্রতি আপনার প্রেম থাকেও, তবু ব্রেকআপ করা উচিত।
৩) আপনাকে বুঝতে ব্যর্থ হলে
সে যদি আপনাকে আর কোনোভাবেই বুঝতে না চায় বা বুঝতে ব্যর্থ হয় তাহলে আরেকবার ভেবে দেখুন। আপনার একারই কেবল দায় নয় তাকে সবকিছু বোঝানো। সবকিছুর ব্যাখ্যা করতে গেলে আর নিজের কাজটি ঠিকভাবে করতে পারবেন না। ভুল বোঝাবুঝি চলতে থাকলে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হবে। আপনার একার প্রচেষ্টায় সম্পর্ক খুব বেশিদিন সুন্দর রাখা যাবে না, যদি না তার দিক থেকে কোনো প্রচেষ্টা না থাকে। সে যদি উদ্দেশ্যমূলকভাবেই আপনাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে তাহলে দূরে সরে আসাই উত্তম হবে।
৪) স্বপ্ন ভিন্ন হলে
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মাঝে পরিবর্তন আসতে পারে। অনেক অর্জন অনেক সময় দু’জনের পথ ভিন্ন করে দেয়। কারণ স্বপ্ন কিংবা লক্ষ্যের মিল না থাকলে একই পথে বেশি দূর হাঁটা যায় না। তখন পথ ভিন্ন হয়ই। হতে পারে মতেরও অমিল। এত অমিল নিয়ে সম্পর্কে থাকতে গেলে বাড়ে কেবল তিক্ততা। নষ্ট হয় পারস্পারিক সম্পর্ক। তাই এমনটা হলে ব্রেকআপই ভালো। অন্তত সম্মান বজায় থাকবে।
৫) উপস্থিতি একাকিত্ব ঘোচাতে পারে না
শারীরিকভাবে পাশাপাশি থাকলেই সবাই মানসিকভাবে ঘনিষ্ঠ হয় না। সঙ্গীর পাশে থাকা সত্ত্বেও যদি একাকিত্ব অনুভব করেন তবে বুঝতে পারবেন এটি মানসিক ঘনিষ্ঠতার অভাব। ভালোবাসার সম্পর্কের বৈশিষ্ট্যই হচ্ছে তা আপনাকে একাকিত্ব অনুভব করতে দেবে না। এভাবে চলতে থাকলে বুঝে নেবেন সম্পর্ক শেষ হয়ে যাচ্ছে। আপনারা দুজনেই হৃদয়ের চারপাশে দেয়াল তৈরি করেছেন এবং এই ব্যবধান আর পূরণ করতে পারবেন না।
৬) সম্পর্কে গতিহীনতা
সম্পর্কের উন্নতির জন্য যত্ন এবং উন্নতির প্রয়োজন। যদি গতিহীন হয়ে পড়ে, যদি সেই সম্পর্কের আর কোনো লক্ষ্য-উদ্দেশ্য না থাকে তবে তা আর কত দূর নিয়ে যাবেন? গতিহীনতা সম্পর্কের স্বাভাবিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এটি দু’জনেরই ব্যক্তিগত এবং যৌথ বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই এমনটা দেখলে নতুন করে ভাবতে পারেন।
৭) অনুভূতি হারিয়ে গেলে
ভালোবাসার ঠিক বিপরীত হলো নিরুত্তাপ থাকা। যদি সঙ্গীর ভালো-মন্দের ওঠা নামা বা দৈনন্দিন যাপন আপনার মনে কোনো রকম দাগ না কাটে তাহলে বুঝতে হবে সম্পর্কের কোথাও দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এমনও হতে পারে আপনি যে কথাগুলো বলতে চাইছেন, শুনতে চাইছেন তা আপনার সঙ্গী কিছুতেই আর বুঝতে পারছেন না। যদি উল্টোটাও সত্যি হয়, তা হলে বুঝতে হবে বিচ্ছেদের সময় হয়তো এসে গিয়েছে।
৮) ভালোবাসা না থাকা
এত কিছুর পরেও শেষ কথাটি হলো ভালোবাসা। মানুষ আর যাই বুঝুক না বুঝুক, ভালবাসার অনুভূতি আছে না নেই তা স্পষ্ট বুঝতে পারে। যদি দু’জনের কারো মধ্যে এই ভালোবাসা না থাকার অনুভূতি এসে থাকে, তাহলে সেই সম্পর্ক রাখারও বিশেষ মানে থাকে না। তবে মনে রাখতে হবে প্রত্যেকটি সম্পর্ক আলাদা। স্বতন্ত্র তার সমীকরণও। কাজেই এক সঙ্গে থাকা এবং না থাকা দুটি সিদ্ধান্তই নিন নিজের ও সঙ্গীর ভালো থাকার কথা ভেবেই।
৯) মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে হচ্ছে
যদি দেখেন সম্পর্ক ধরে রাখতে নিজের মূল্যবোধ বিসর্জন দিতে হচ্ছে, তবে সেই সম্পর্কের থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো। মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা আদপে নিজের কাছে প্রতিনিয়ত মিথ্যে কথা বলে চলার সামিল।
বিডি/এন