নতুন ‘রাজনৈতিক দল’ গঠন নিয়ে যা বললেন শিক্ষার্থীরা

নতুন ‘রাজনৈতিক দল’ গঠন নিয়ে যা বললেন শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published : ১৯:১২, ১৬ আগস্ট ২০২৪

বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে। কিন্তু এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। এর পরিবর্তে এই জায়গায় সংস্কার আনতে নতুন দল গঠনের চিন্তাভাবনা করছেন তাঁরা।

ছাত্র আন্দোলনের চার শিক্ষার্থী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্যই করেছেন। ছাত্র আন্দোলনের এসব শিক্ষার্থী আশা করছেন, বিগত ১৫ বছর যা হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। এই ১৫ বছরে ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে শক্ত হাতে দমন-পীড়ন করেছেন শেখ হাসিনা।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এভাবেই চলে। সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে জুনেই রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনে শুরু হয় দমন-পীড়ন। পরে তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়, ক্ষমতাচ্যুত হয় শেখ হাসিনা সরকার। রয়টার্স বলছে, এর আগে সহিংসতায় বাংলাদেশে অন্তত ৩০০ মানুষ মারা যায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এটি সবচেয়ে বেশি নিহতের ঘটনা।

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকেই শুরু হয় সরকারবিরোধী আন্দোলন। ‘জেন জি’ হিসেবে পরিচিত তরুণেরা মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, সরকারি আমলা ও মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়, ক্ষমতায় আসে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টা হন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর উপদেষ্টা পরিষদেও রয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়ক।

বিগত তিন দশকের বেশির ভাগ সময় হয় আওয়ামী লীগ, নয়তো বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। এই দুই দলের সর্বোচ্চ নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার বয়স এখন সত্তরের বেশি। এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা দেশে সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এমনটাই বলেন মাহফুজ আলম নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি সরকার এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে লিয়াজোঁ করতে গঠিত কমিটির প্রধানের দায়িত্বে আছেন। 

আইনের শিক্ষার্থী ২৬ বছর বয়সী মাহফুজ আলম বলেন, এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করতে চায় শিক্ষার্থীরা। এর আগে পরিকল্পনার ব্যাপারে কোথাও বিস্তারিত জানানো হয়নি।

মাহফুজ এ ব্যাপারে বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষ আসলেই ক্লান্ত–বিরক্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।’ 

সমন্বয়ক তাহমিদ চৌধুরী এ নিয়ে বলেন, তাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এর মূল ভিত্তি হবে অসাম্প্রদায়িকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

তবে, অর্ন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুজন ছাত্র প্রতিনিধি এ ব্যাপারে খোলাশা করে কিছু বলেননি। এমনকি কোন পলিসি নিয়ে তাঁরা কাজ করতে চাইছেন, সেটাও জানাননি। তবে, নির্বাচন কমিশনে ব্যাপক সংস্কারের কথা বলছেন।

নাহিদ ইসলাম এ নিয়ে বলেন, ‘এই আন্দোলনের স্পিরিট ছিল মূলত নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার আর থাকবে না। তা নিশ্চিত করতে গঠনগত সংস্কার দরকার। এতে কিছু সময় তো লাগবেই।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে বলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

এরই মধ্যে শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিয়োগ প্রাপ্তরা প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও পুলিশ প্রধানের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছেন কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে, রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে। কেননা এতদিন এই রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রাখা হতো।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। ‘ক্ষুদ্রঋণ’ ইস্যুতে তিনি বিশ্বে বেশ আলোচিত। এমনকি তাঁর এই থিওরি কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, যিনি যা চান তা বাংলাদেশে করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক এ ব্যাপারে রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখন অজানা নদীতে এসে পড়েছি। সেটা আইনগত ও রাজনৈতিকভাবেও। এই অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কেমন হবে তাও বলা যাচ্ছে না। কেননা এই সরকার আইন মেনে হয়নি।’    

রয়টার্স বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় ৩০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। এর মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশ্লেষক রয়েছেন।

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় এ নিয়ে রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল কোথাও যাচ্ছে না। তাদের উৎপাটন করা যাবে না। এখন হোক কিংবা পরে, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীল অবস্থা আনতে পারবে না।’

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement