গণতন্ত্র-ভোটাধিকার থাকলে সংবিধান সংকটে পড়ে না
Published : ২২:২১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪
দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট আইন সভা থাকবে। উচ্চকক্ষের নাম জাতীয় পরিষদ, নিম্নকক্ষ জাতীয় সংসদ। সংসদ নির্বাচন হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে ৩০০ আসনে। জাতীয় পরিষদের ২০০ আসন হবে সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে। আইন সভার মেয়াদ হবে ৪ বছর। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী কেউ দুই বারের বেশি নির্বাচিত হতে পারবেন না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং বিচারক নিয়োগে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। ল’ রিপোর্টার্স ফোরামের (এলআরএফ) সাবেক সভাপতি ও দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ উদ্দিন এই খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করেন।
এতে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা আলোচনায় যোগ দেন। আলোচনা সভায় সংবিধান সংস্কার, দুই কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য, গণভোট, নির্বাচনব্যবস্থা, সরকারব্যবস্থাসহ নানা বিষয়ে প্রস্তাব উঠে আসে। এতে বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র ভোটাধিকার থাকলে সংবিধান সংকটে পড়ে না। তাই সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা আবারও ফিরে আনার প্রস্তাব করেন তারা। সংসদ ছাড়া সংবিধান সংশোধনের সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর জোর দেওয়া হয়।
খসড়া প্রস্তাবের ওপর শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন হলে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিচারপতি এমএ মতিন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার ও গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। এছাড়া ব্যারিস্টার সারা হোসেন, সাংবাদিক সোহরাব হাসান, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম, ব্যারিস্টার মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান খান, অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, আইনের শিক্ষক সাইমী ওয়াদুদ ও রাজা দেবাশীষ রায় বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসান জাবেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ফোরামের সেক্রেটারি মনিরুজ্জামান মিশন, যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর হোসেন, কোষাধ্যক্ষ মনজুর হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম নূর মোহাম্মদ, দপ্তর সম্পাদক সাকিল আহমাদ, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, প্রশিক্ষণ সম্পাদক জাবেদ আখতার এবং ফোরামের সদস্য শামীমা আক্তার, মো. ইয়াছিন ও আবু নাসের প্রমুখ।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী একটা ভয়ানক সংশোধনী। এর মাধ্যমে আমাদের সংসদকে চরমভাবে কলুষিত করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের এক-তৃতীয়াংশ পরিবর্তন করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। একই সঙ্গে এক সংসদ আরেক সংসদের হাত-পা বেঁধে দেওয়া কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল হলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসবে না। এটা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি আছে। সেটাকে সমাধান করতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ঠিক থাকলে সমুন্নত থাকে সংবিধান। এই সংবিধানের মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, পাঁচ বছর পরপর জনগণ তার স্বাধীন সার্বভৌম ক্ষমতা যেন প্রয়োগ করতে পারে।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, যারা সংখ্যালঘু, শুধু ধর্মীয় সংখ্যালঘু না, যারা ভিন্নমতের, যারা ভিন্ন গোষ্ঠীর তাদের অধিকার তো রক্ষা করতে হবে। সেটার জন্যই কিন্তু সংবিধান।
আহসানুল করিম বলেন, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাটাকে ডিফাইন্ড করা দরকার, যেন তিনি ওয়ানম্যান শো না হন। তিনি যেন নিজেকে সর্বশক্তিমান মনে না করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রয়োজন নেই। বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্বে তিনি কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত থাকতে পারবেন না। এমন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া দরকার।
সাবেক বিচারপতি এমএ মতিন বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। আর ত্রয়োদশ সংশোধনী রিস্টোর করতে হবে। যদিও বিষয়টি সাব জুডিস ম্যাটার। এ বিষয়ে কোনো কথা বলব না। এটা বলতে পারি যদি কেয়ারটেকার সরকার আসে তাহলে সেটারও কিছু মডিফিকেশন লাগবে।
বিচারপতি দস্তগীর হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শয়তান পালিয়ে গেছে। সংবিধান নিয়ে কথা বলতে হবে। তাহলেই সমাধান আসবে। কোনো সমালোচনা করলেই ধরে নিয়ে যায়, গুম হয়ে যায়, আয়নাঘরে নিয়ে যেত। এমন লেখাপড়াহীন-দুর্নীতিপরায়ন পার্লামেন্ট চায় না। এমপি হতে মিনিমাম সার্টিফিকেট থাকতে হবে।
সাংবাদিক কামাল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে পার্লামেন্টে দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলাম বলে, বা দল থেকে পদত্যাগ করলাম বলে, সংসদ-সদস্য পদ চলে যায়। কিন্তু ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তা হয় না। কারণ জনগণ তাকে নির্বাচিত করে সংসদে পাঠিয়েছে। তিনি তখন স্বতন্ত্র সদস্য হিসাবে থাকতে পারেন। এমন কি অন্য দলেও যোগ দিতে পারেন।
বিচারক মাসদার হোসেন বলেন, সংবিধানকে বারবার ব্যক্তি স্বার্থে ম্যালাফাইড উদ্দেশ্যে সংশোধন করা হয়েছে। বেসিক স্ট্রাকচার নিয়ে যা বলা আছে, তা ভয়াবহ। এতগুলো জীবনের বিনিময়ে যে নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি-তা সবাই মিলে জনমত সৃষ্টি করে ঠিক করতে হবে।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, সংবিধানের মধ্যে দণ্ড বিষয়ক তথ্য থাকার প্রয়োজন নেই। উচ্চকক্ষ, নিুকক্ষ সংবিধানে থাকার বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ বলেন, পুনর্লিখন করি আর সংস্কার করি সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকা উচিত। ভাষাগত বহুমাত্রিকতা, জাতিগত বহুমাত্রিকতা ৭২ সালের সংবিধানে যথাযথভাবে আসেনি। আদিবাসীদের অধিকারের বিষয় সংবিধানে থাকা উচিত।
খসড়ায় যা আছে : খসড়ায় বলা হয়েছে, জাতীয় পরিষদ হবে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ও আইনপ্রণয়ন সভা, যা অর্থনৈতিক নীতি, জাতীয় নিরাপত্তা নীতি, বৈদেশিক সম্পর্কের নীতি এবং জাতীয় ঐক্য ও সংহতি বিকাশে পথরেখা প্রণয়ন করবে। জাতীয় বাজেট (অর্থবিল) ছাড়া জাতীয় সংসদে পাশ হওয়া আইন চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে জাতীয় পরিষদ। জাতীয় সংসদে বাজেট উত্থাপনের ৬ মাস আগে জাতীয় পরিষদে প্রাক-বাজেট আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় পরিষদের মেয়াদ হবে ৪ বছর।
জাতীয় সংসদ : জাতীয় সংসদের আসন সংখ্যা থাকবে ৩০০। কোনো সংরক্ষিত মহিলা আসন থাকবে না। তবে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ১০ ভাগ নারী সদস্যকে মনোনয়ন দিতে হবে। সরকার গঠন, সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং অর্থ বিল পাশের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে থাকবে। এর বাইরে রাষ্ট্রের সব আইন প্রণয়ন জাতীয় সংসদের প্রাথমিক অনুমোদনের পর জাতীয় পরিষদ চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে। জাতীয় পরিষদ এবং সংসদ নিজেদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা নিজেরাই বৃদ্ধি করতে পারবেন না। কোনো শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবেন না। তাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির আবেদন সাংবিধানিক আদালত বিবেচনা করবেন।
নাগরিকের অধিকার : প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়েছে, আদালতের অনুমতি ব্যতিরেকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দণ্ড হতে পারে-এমন অপরাধে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে আদালতের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করবে-এমন সন্দেহজনক কোনো ব্যক্তি ছাড়া কাউকে আটক রাখা যাবে না। তবে সন্দেহের উপযুক্ত ভিত্তি থাকতে হবে। আদালতে হাজিরের সময় প্রতিবেদনে উপযুক্ত কারণগুলো উল্লেখ করতে হবে। অহেতুক হয়রানি করা যাবে না। আদালতের অনুমতি ছাড়া নাগরিকের গৃহে প্রবেশ ও তল্লাশিতে পুলিশের অধিকার থাকবে না।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা : জাতীয় পরিষদের যেসব রাজনৈতিক দলের অরাজনৈতিক সদস্য আছেন তাদের এক জন করে প্রতিনিধি নিয়ে ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন’ বিষয়ক একটি সার্চ কমিটি গঠিত হইবে। ওই কমিটিতে সংসদের সরকারি দলের নেতা এবং বিরোধীদলীয় নেতা অথবা তাহাদের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন। জাতীয় পরিষদের অধ্যক্ষ এই সার্চ কমিটির সভাপতি হইবেন। তাহারা ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় পরিষদের একজন নির্দলীয় সদস্যকে প্রধান উপদেষ্টা হিসাবে এবং পনেরো জন উপদেষ্টার মধ্যে দশজন নির্দলীয় জাতীয় পরিষদ সদস্যকে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করিবেন। সুপারিশ পাওয়ার পর রাষ্ট্রপতি প্রধান উপদেষ্টা এবং দশজন উপদেষ্টাকে নিয়োগ দেবেন।
তারা ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা ও দশ উপদেষ্টার তালিকা চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হইলে কমিটির সদস্যদের দুই-তৃতীয়াংশ মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা এবং দশজন উপদেষ্টা নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা অন্যান্য উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে অবশিষ্ট পাঁচজন উপদেষ্টা নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে লিখিতভাবে সুপারিশ করিবেন। তাহারা জাতীয় পরিষদ অথবা জাতীয় সংসদের নির্দলীয় সদস্যদের মধ্য থেকেও হইতে পারিবেন অথবা আইনসভার বাহিরে সমাজের আস্থাভাজন ব্যক্তিদের মধ্য থেকেও হইতে পারিবেন। তবে তাদের কেউই কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হইতে পারিবেন না। জাতীয় সংসদের কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন না। দুই-তৃতীয়াংশ মতের ভিত্তিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হলে কমিটির সভাপতি রাষ্ট্রপতি সাংবিধানিক আদালতের কাছে নির্দলীয় প্রধান উপদেষ্টা ও দশজন উপদেষ্টা নির্ধারণ করিবার জন্য অনুরোধ জানাবেন। সাংবিধানিক আদালত সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোকে উপযুক্ত শুনানির সুযোগ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং দশ উপদেষ্টার নাম রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাইবেন। এক্ষেত্রে বিচার বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কেউ থাকতে পারবেন না।
সাংবিধানিক আদালত : প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি সাংবিধানিক আদালত থাকবে। সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রধান বিচারপতি, আপিল বিভাগের তিনজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এবং হাইকোর্টর দুজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি লইয়া এই আদালত গঠিত হইবে। সাংবিধানিক আদালতে কেউ মামলা দায়ের করতে পারবে না। আদালত শুধু নিজ উদ্যোগে সংবিধান লঙ্ঘনের কোনো ঘটনা নিজ উদ্যোগে পর্যবেক্ষণ করিতে এবং এহেন কার্য হইতে বিরত রাখিতে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করিতে কিংবা এই ধরনের কোনো কার্য সম্পাদন হইলে তাহা অবৈধ ঘোষণা করিতে পারিবে। (৩) সংবিধানের কোনো ব্যাখ্যার প্রশ্ন উত্থাপিত হইলে রাষ্ট্রপতি, জাতীয় পরিষদ অধ্যক্ষ ও স্পিকার সাংবিধানিক আদালতের মতামত গ্রহণ করিতে পারিবেন। এমনকি নির্বাহী কর্তৃপক্ষ নির্বাচন কমিশনের কোনো চাহিদা পূরণে অনীহা দেখালে কমিশন সাংবিধানিক আদালতে অভিযোগ করতে পারবে।
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন : উচ্চ আদালতের বিচারক নিয়োগ দেবে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে কমিশনে সদস্য হবেন আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগের একজন এবং হাইকোর্টের একজন জ্যেষ্ঠ বিচারক। অ্যাটর্নি জেনারেল, আইনজীবী সমিতির সভাপতি, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান এবং সরকারি ও বিরোধী দল ও জাতীয় পরিষদের অধ্যক্ষ মনোনীত একজন করে সদস্য থাকবেন।
ভোটের অধিকার : প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ভোটের অধিকার নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করলে কিংবা ভোট প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করলে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটের ৫০ ভাগ প্রদত্ত না হলে নির্বাচন বাতিল হবে এবং পুনরায় ২ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। জš§সূত্রে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক দেশে ১৮ বছর পর্যন্ত বসবাস করলে জাতীয় সংসদ ও জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে অযোগ্য হবেন না।
রাজনৈতিক দল : রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক ও গঠনতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কমিটি গঠন হয় কিনা তা নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করবে। রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন বা ছদ্মনামে কোনো সংগঠন থাকবে না। কার নিকট হতে চাঁদা গ্রহণ করা হয় তার তালিকা এবং আয়-ব্যয়ের হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করবে।
জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল : সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণ রেখে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কাউন্সিলের প্রধান হবেন রাষ্ট্রপতি। সরকার প্রধান, আইন সভার অধ্যক্ষ, স্পিকার, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, তিন বাহিনী প্রধান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব কাউন্সিলের সদস্য হবেন।
৭০ অনুচ্ছেদ : সরকারের প্রতি আস্থা-অনাস্থা ভোট এবং অর্থ বিল ছাড়া আর সব কিছুতে স্বাধীনভাবে মত প্রদান ও ভোট দেওয়ার অধিকার আইন সভার সদস্যদের থাকবে।
আরও যা আছে : সরকারি দপ্তরে নেতানেত্রী বা সরকারপ্রধানের বদলে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় প্রতীক থাকবে। রাষ্ট্রের শত্র“ ছাড়া কোনো নিবর্তনমূলক আইন থাকবে না। রাষ্ট্রপতির দণ্ড মওকুফের কোনো স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা থাকবে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে নির্দলীয় ভিত্তিতে। এক ব্যক্তি সংসদের একাধিক আসনে নির্বাচন করতে পারবেন না। ন্যায়পাল থাকবে। সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং কার্যক্রমের তদন্তের অধিকার থাকবে ন্যায়পালের। সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর কোনো সংশোধনী কার্যকর করতে হলে গণভোট লাগবে।
খসড়া প্রস্তাবে এই পুনর্লিখিত সংবিধান আগামী জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার পর গণভোটের মাধ্যমে গৃহীত হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিডি/এন