ই-ক্যাবের  ভবিষ্যৎ কোন পথে  

ই-ক্যাবের  ভবিষ্যৎ কোন পথে  

মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মৃধা

Published : ১৩:৪৯, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ( ই-ক্যাব), ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের একমাত্র ব্যবসায়ী সংগঠন যা সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সংগঠন যা ২০১৪ সাল থেকে কাজ করে আসছে। উদ্যোক্তা উন্নয়ন, উদ্যোক্তা তৈরি সর্বোপরি বেকার জীবন থেকে উদ্যোক্তা বানিয়ে অন্যদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেতে সহায়তা করেছে সংগঠনটি। 

২০২৪ এর জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে নির্ধারিত সময়ে ইলেকশন না হওয়া, ৫ই আগস্টের পর পূর্বের ইসি কমিটির পদত্যাগের ফলে সাধারণ মেম্বারদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রশাসক মহোদয় নিয়োগপ্রাপ্ত হন। প্রশাসক মহোদয়ের কার্যকাল শুরুর দিন থেকে উনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সবাইকে সাথে নিয়ে আগামীতে একটু সুষ্ঠ সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবং যেহেতু গতবারের ভোটার লিস্ট নিয়ে সাধারণ মেম্বারদের একটা অভিযোগ ছিল তাই তার ফলশ্রুতিতে উনি দুইবার সহায়ক কমিটি গঠন করেন যাদের একমাত্র কাজই হচ্ছে ই-ক্যাবের  সদস্য তালিকা হালনাগাদকরণে সহায়তা করা। যা সহায়ক কমিটি গঠন অফিস আদেশে উল্লেখ আছে। 

কিন্তু প্রথমবার ১৫ সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক কমিটি গঠিত হওয়ার পর কমিটির কিছু কিছু সদস্যের (যারা তুলনামূলকভাবে ই-ক্যাবের  নতুন সদস্য) অসহযোগিতা,  উগ্রতা, দখলদারিত্বের মনোভাব, প্রভাব বিস্তার, সিনিয়র বা বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের সাথে বিনয়ী না হওয়া, প্রশাসক মহোদয়ের সাথে উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা সহ উনাদের কার্যপরিধির বাহিরে নানান কাজে হস্তক্ষেপ সহ বাধা দান করেন যার ফলশ্রুতিতে প্রথমবার ঘটিত সহায়ক কমিটি থেকে অধিকাংশ সদস্যই পদত্যাগ করেন, এবং দ্বিতীয়বার ১৪ ই জানুয়ারি গঠিত দ্বিতীয় ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট সহায়ক কমিটির অনেক সদস্যই পদত্যাগ করেন একই কারণে। কিন্তু পরপর দুবার ঘটিত সহায়ক কমিটিতে কিছু সদস্য গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে ই-ক্যাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন বা অকার্যকর করার লক্ষ্যে ই-ক্যাবের সেক্রেটারিয়েটকে  প্রভাব খাটিয়ে এবং ভীতি দেখিয়ে তাদের একমাত্র কার্য পরিধির বাহিরে নানান কাজে বা মেম্বারদের ব্যক্তিগত তথ্য হস্তক্ষেপ করা সহ অন্যান্য কাজের জোরপূর্বক লিপ্ত করেন। যা ই-ক্যাব, ই-ক্যাবের মেম্বার তথ্য সুরক্ষা এবং ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটা প্রতিবন্ধকতা মূলক কাজ এবং এটা কোন সুফল বয়ে আনবে না মেম্বারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টিছাড়া। 

অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে ই-ক্যাব তার ১১ তম বছরে এসে পরিবর্তিত বাংলাদেশে যে পরিমাণ সুনাম হারানোর জায়গায় এসছে, পারস্পরিক আস্থা হীনতা, বিশ্বাসহীনতা, আন্ত কলহ, রেস্পেক্ট হীনতার কারণে  ব্যক্তিগত অথবা গোষ্ঠীগত কিছু মানুষজনের জন্য। বৈষম্যহীন ভাবে তারা ব্যক্তিগতভাবে আসলে সব সদস্যদের ভালো চায় কিনা সেটা নিয়ে সব সদস্যদের মাঝেই ধীরে ধীরে প্রশ্ন জাগ্রত হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের জন্য আমরা আমাদের অ্যাসোসিয়েশনকে সরকার এবং অন্যান্য অংশীজনদের কাছে ছোট করতে পারিনা। বাংলাদেশের ৫০০ এর অধিক অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশকে মাথা উঁচু করে প্রথম সারির দিকে দেখতে চাই। 

আগামী একটি  সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচনের জন্য প্রশাসক  মহোদয় যেভাবে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন, সাথে ই-ক্যাবের সেক্রেটারিয়েট যেভাবে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তাতে আমাদের সবারই উচিত সহযোগিতা করা বাধা বা বৈরিতা তৈরি করা না। 

ই-ক্যাবের বর্তমান প্রশাসক মহোদয় গত ১৪ই জানুয়ারি ২০২৫ সালে নতুন সহায়ক কমিটি গঠন করেন এবং অফিস আদেশে সুস্পষ্ট ভাবে সহায়ক কমিটির কার্য পরিধি নির্ধারণ করেন তার মধ্যে "একমাত্র শুধুমাত্র একমাত্র কাজ ই-ক্যাবের  সদস্য তালিকা হালনাগাদকরণে সহায়তা করা।"

আগামী নির্বাচন যেন প্রকৃত ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয় সাথে অব্যবসায়ী কলাগাছ মেম্বার বা ভোটার যেন সদস্য তালিকা থেকে অপসারণ হয় যদি সদস্য তালিকা হালনাগাদ নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রপার ডকুমেন্টেশন না থাকে সাথে সাথে আগামী ভোটার লিস্ট তৈরিতে যেন ২০২৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মেম্বার হয়েছেন তাদেরকেই নবায়ন করে ভোটার লিস্ট হালনাগাদ করা হয়। 

সহায়ক কমিটির সক্রিয় মেম্বার যারা অবশ্যই তারা তাদের কার্য পরিধি সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, যেন ই-ক্যাবের সম্মানিত সকল মেম্বাররা  সহ বয়োজ্যেষ্ঠ সিনিয়র মেম্বাররা যেন আপনাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন। নিজেকে বড় ভাবার আর অন্যকে ছোট ভাবার বা করার যে রিপু নিজেদের মধ্যে বর্তমান থাকে তা পরিহার করে বিনয় আর শ্রদ্ধাশীল থেকে সবার সহযোগিতা নিয়েই এই মহান কাজ এগিয়ে নিতে হবে।  অরাজনৈতিক এবং প্রকৃত ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের নিয়েই হোক আগামীর ই-ক্যাব এটাই প্রত্যাশা।

ই-ক্যাবের মেম্বারশিপে পরিবর্তন করাটা খুবই জরুরী। গত দুইটা প্রত্যক্ষ ভোটের ইলেকশন এর আবহাওয়ায় যেটা প্রতিীয়মান হয়েছে বা দেখা গিয়েছে ভোটব্যাঙ্ক বাড়ানোর জন্য নিজ খরচে তফসিল অনুযায়ী ভোটার হওয়ার ১২০ দিন আগেই মেম্বার বানিয়ে  অব্যবসায়িক লোকজনকেও কলা গাছ মেম্বার বা ভোটার  বানিয়ে ফেলা হয়েছে যাতে করে সর্বোপরি অ্যাসোসিয়েশনের  প্রকৃত ব্যবসাহীদের সংগঠন না হয়ে একটা যা ইচ্ছে তাই সদস্য নির্ভর অ্যাসোসিয়েশন হয়েছে। যেটা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য তথা এই ই-ক্যাবের জন্য মোটেও ভালো বা সুফল বয়ে আনছে না এবং ভবিষ্যতেও যে আনবে না তার নমুনা বর্তমান সময়ে আমরা দেখতে পাচ্ছি। 

সেক্ষেত্রে আমার কিছু মতামত হলো। 
১. ই-ক্যাবকে সম্পূর্ণ বা শতভাগ অরাজনৈতিক একটি সংগঠন হিসেবে সব মেম্বারদেরই বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রত্যেকেরই রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে কিন্তু সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে। 
২. প্রকৃত ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের নিয়েই হবে ই-ক্যাব। ব্যবসায়ীদের মধ্যে থাকবে একে অপরের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ এবং রেস্পেক্ট।
৩. বর্তমান বছর থেকে কেউ ডিরেক্ট জেনারেল মেম্বার হতে পারবে না মানে মেম্বার হলেই ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে না। প্রথম দুই বছর অ্যাসোসিয়েট মেম্বার হিসেবে থাকতে হবে। দুই বছর মেম্বারশীপ  পূর্ণ হলে পরে জেনারেল মেম্বার হিসেবে উন্নীত হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে। 

৪. মেম্বার হতে হলে  ট্রেড লাইসেন্স, টিন এবং ব্যাংক একাউন্টের বয়স ন্যূনতম দুই বছর হতে হবে। 

৫. এবারের আসন্ন নির্বাচনে  ২০২৩ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মেম্বার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে যারা রিনিউ করে সকল তথ্যাদি এবং কাগজপত্র দিয়ে ভোটার হওয়ার যোগ্য হবেন। (কারণ ২০২৪ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত ৪৯২ জন মেম্বার হয়েছেন এবং ২৭ শে মার্চ ১৫০ এর অধিক মেম্বার হয়েছেন যা কারো কারো ভোটব্যাঙ্ক  হিসেবে কাজ করার জন্য  এবং অব্যবসায়ীই বেশি অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন) 

৬. ভোটার হলেই প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন না, অবশ্যই বিগত বছর গুলিতে ই ক্যাবের বিভিন্ন কমিটিতে কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকতে হবে যাতে করে একজন প্রার্থী হিসেবের সকল কাজ সম্পর্কে জ্ঞাত থাকেন। 

বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে আমি একজন ই-কমার্স ব্যবসায়ী এবং ই-ক্যাবের ফাউন্ডিং মেম্বার হিসেবে সকল মেম্বারদের পক্ষে এবং স্বার্থে আপনাদের কাছে অনুরোধ  করছি যে আরো বেশি নিজেদের মধ্যে বিভেদ বা বিদ্বেষ তৈরি হওয়ার পূর্বেই  সহায়ক কমিটি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত করে ই ক্যাবের সেক্রেটারিয়েটকে অধিকতর  শক্তিশালী এবং কার্যকর করে প্রশাসক মহোদয়ের নেতৃত্বে ই-ক্যাব এবং ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য  এবং কাজ করে যাওয়ার জন্য মাননীয় বাণিজ্য উপদেষ্টা মহোদয়ের দপ্তর। মাননীয় বাণিজ্য সচিব মহোদয়ের দপ্তর। মাননীয় মহাপরিচালক বাণিজ্য সংগঠন অনুবিভাগের দপ্তর। মাননীয় মহাপরিচালক ডিজিটাল সেল এর দপ্তর। মাননীয়  ই-ক্যাবের প্রশাসকের দপ্তর। মহাপরিচালক ডিজিএফআই দপ্তর। মহাপরিচালক এনএসআই  এর দপ্তর এব; ই-ক্যাবের সেক্রেটারিয়েটের দপ্তর কে অবহিতকরে যথাযথ  বেবস্থা নেওয়ার জন্ন্য বিনীত অনুরোধ করা হয়েছে। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃপক্ষ  এ বিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা নেবেন।

লেখক: ফাউন্ডার কিনলে ডটকম, ইমেইল : [email protected]

এনই

শেয়ার করুনঃ
Advertisement