ই-কমার্স নিয়ে ১৯ দফার বাস্তবায়ন চাই
Published : ০২:০৩, ১১ নভেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের ই-কমার্স ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শুরু হলেও নেতৃত্ব কখনোই ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের হাতে ছিল না। এমনকি ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ ই-ক্যাব এর প্রতিষ্ঠাতারাও মেইনস্টিম ই-কমার্স ব্যবসা এর সাথে জড়িত ছিলেন না কখনোই তেমন একটা। আহবায়ক কমিটিসহ যে পাঁচটা কমিটি গঠিত হয় গত দশ বছরে (৫ x৯=৪৫) জন ইসি মেম্বার এর মধ্যে হয়তো পাঁচজনকেও পাওয়া যাবেনা যারা মেইনস্টিম ই-কমার্স করেন।
ই-ক্যাবের মেম্বারশিপের মধ্যে ৯৫% এমএসএমই, এসএমই, ৪℅ মাঝারি, ১% বড় উদ্যোক্তা। কিন্তু আবার এই ১% এর ৯৯% ই বিদেশি অথবা বিদেশি ফান্ডেড কোম্পানি। এবং পলিসি মেকিং, সভা, সেমিনার, নিউজ বা নেতৃত্বের অনেকটা কেন্দ্রবিন্দুতে তারাই থাকেন সবসময়। এখানে দেশীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অবস্থান বা সংখ্যা পরিমাণ বেশি হলেও, সবাই একরকমভাবে ক্ষুদ্র অংশের কাছে এক প্রকার জিম্মি। এ সমস্ত বিদেশী ফান্ডেড বা বিদেশি কোম্পানিগুলো কখনো দেশীয় ক্ষুদ্র ছোট উদ্যোক্তাদের প্রতিবন্ধকতা, অসুবিধা, তাদের জন্য এপ্রোপিয়েড পলিসি নিয়ে কথা, তাদেরকে কিভাবে ফ্যাসিলিটাইজ করা যায়, কিভাবে বিভিন্নভাবে ফান্ড, ম্যান্টরশীপ দিয়ে তাদেরকে আরো সাসটেইননেবল করা যায় সে বিষয়ে কখনোই কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি বা গাইডলাইন তৈরি হয়নি বা করা হয়নি।
আমাদের বাংলাদেশ হলো ই-কমার্স এর জন্য ৩১তম লার্জেস্ট মার্কেট বিশ্বের সমস্ত দেশগুলোর মধ্যে। যার আর্থিক মার্কেট সাইজ আনুমানিক প্রায় ৫৬ হাজার কোটি টাকা, আনুমানিক প্রায় ১২ কোটির মত মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করেন এবং আনুমানিক প্রায় ১০ কোটি ফেসবুক ইউজার আছে, যার মধ্যে ১০% ইউজার মানে প্রায় ১ কোটি ইউজার ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে অর্ডার বা সেবা নিয়ে থাকেন। যার মধ্যে ১৫ লাখ মানুষজন ই-কমার্সে অর্ডার করে থাকেন প্রায় প্রতিদিন। দৈনিক প্রায় ৮ লাখের অধিক অর্ডার হয়, এবং প্রতি অর্ডারে বাস্কেট সাইজ ১২৫০ থেকে ১৪৫০ এর মত, এবং দৈনিক ই-কমার্স এর ট্রানজেকশন হয় প্রায় ১০০ কোটি টাকার মত । ই-ক্যাবের প্রায় ২৭০০ মেম্বার সহ আনুমানিক প্রায় সাড়ে তিন লাখ ফেসবুক পেইজ আছে যারা এফ কমার্স এবং ইনস্টাগ্রামে বিজনেস করে থাকেন। তিন লাখ ফেসবুক পেইজ যারা বিজনেস করেন তাদের ৯৭% এসএমই বা ছোট উদ্যোক্তা।
ই-কমার্স ব্যবসায়ী বা ফেসবুক উদ্যোক্তা ব্যবসায়ীদের সামগ্রিক দাবিগুলো আমার ব্যক্তি পর্যায় থেকে সরকারের বিভিন্ন মহলে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নিশ্চয়ই এগুলো বিবেচনা করবেন।
১. ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির উদ্যোক্তাদের স্বার্থে মৌলিক অধিকার হিসেবে নিরবিচ্ছিন্নভাবে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেটে নিশ্চিত করা। সেটা ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা দুই পক্ষের জন্যই নিশ্চিত করতে হবে।
২. ডিজিটাল বা অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসাকে ইন্ডাস্ট্রি বা শিল্প হিসেবে ঘোষণা দেওয়া।
৩. ট্রেড লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ই-কমার্স বা অনলাইন ব্যবসা কে সংযুক্ত করা।
৪. আগামী ১২ মাসের জন্য ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সংক্রান্ত এবং ব্যক্তিগত সমস্ত লোনের ইন্টারেস্ট মওকুফ করা অথবা একেবারে নমিনাল পর্যায়ে নিয়ে আসা। লোনের ইনস্টলমেন্টগুলোকে শুধুমাত্র মূল টাকাগুলো নিয়ে লোনকে সচল রাখা। এটাকে আমরা টুয়েলভ মানথ পেমেন্ট হলিডে হিসেবে আখ্যা দিতে পারি।
৫. ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের জামানত বিহীন লোনের ব্যবস্থা করা। চিরাচরিত অফলাইন ব্যবসার মতো ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অনেক সময় মেশিনারি, স্টাবলিশমেন্ট অনেক সময় থাকে না। এদের থাকে টেকনোলজি, গুড উইল, কাস্টমার ডাটা, কুরিয়ার ডাটা, ফেসবুক লাইক বা রিচ অথবা ওয়েবসাইটের গ্রহণযোগ্যতা। এগুলো বিবেচনা করেই লোনের ব্যবস্থা করা।
৬. চলতি অর্থ বছরের ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক সমস্ত ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা।
৭. ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ট্যাক্স মওকুফ করা। ফেসবুক অ্যাড এর জন্য প্রদত্ত ১৫% ভ্যাট সহ।
৮. ই-কমার্স ব্যবসাহীদের বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসএমই উদ্যোক্তা হিসেবে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনের ব্যবস্থা করা।
৯. ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত কার্ড, অনলাইন ট্রানজেকশন, এমএফএস এর ট্রানজেকশন গুলো আগামী ৬ থেকে এক বছর পর্যন্ত চার্জ মৌকুফ করা ।
১০. চলমান বছরের ট্রেড লাইসেন্স রিনিউর ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র রিনিউয়াল ফি নেয়া, উৎসে কর কর্তন বাদ দিয়ে।
১১. CLTS বা সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্রাকিং সিস্টেম এর মাধ্যমে সবার সেলস, ব্যবসায়ের গ্রোথ এবং কোম্পানি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়ার ব্যবস্থা করা।
১২. পৃথিবীর প্রায় অন্যান্য দেশে যেখানে ই-কমার্স গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে সেখানেই ই কমার্স ক্যাশলেস হয়েছে, বাংলাদেশে এখনো ক্যাশ অন ডেলিভারিতে হয় কিন্তু ক্যাশ লেস করার জন্য বাংলাদেশের এমএসএস কোম্পানি গুলির মাধ্যমেই লেনদেন বেশি করাতে হলে ই-কমার্সের ক্ষেত্রে এমএমএস কোম্পানির সার্ভিস চার্জ ০.৫ টাকাতে নামিয়ে আনা এবং পেমেন্টগেটওয়ের চার্জ ও ০.৬ টাকার মধ্যেই রাখার ব্যবস্থা করা। এটার ইফেক্ট আল্টিমেটলি কাস্টমার পাবে প্রাইস কমে যাবে।
১৩. ফেসবুক অ্যাড এর ক্ষেত্রে অ্যাড লিমিট প্রত্যেকটা ই-কমার্স ব্যবসায়ীর জন্য বাৎসরিক মিনিমাম ৩০০০০ ডলার করে দেয়া উচিত।
১৪. দেশীয় পণ্য দেশের বাইরে প্রচার-প্রসারের জন্য ক্রস বর্ডার ই-কমার্স কে উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত, সেক্ষেত্রে কুরিয়ার চার্জ ভ্যাট ট্যাক্স এর বিষয়গুলিকে ক্রস বর্ডারের জন্য শিথিল করা যেতে পারে। বাংলাদেশের ইন্টারন্যাশনাল পোস্টাল সার্ভিসকে আরো বেশি যুগোপযোগী এবং গ্রহণযোগ্য করে ক্রস বর্ডার কে উৎসাহিত করা উচিত।
১৫. ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং ব্যবসা পুনরায় নতুন উদ্যমে চালু করতে সহায়তা করার জন্য সরকারি অনুদান বা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা।
১৬. ভাঙচুরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়িক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা।
১৭. ই-কমার্স ব্যবসা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা সহজীকরণ করা।
১৮. ই-কমার্সের গুরুত্ব এবং এর অবদান সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
১৯. ই-কমার্স খাতের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
এনই