অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যে দাবি তাদের

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে যে দাবি তাদের

হোসাইন নূর

Published : ২০:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশে নির্বাচন ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সংস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। ওই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করে। এরপর থেকে রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারকে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। কোনো কোনো রাজনীতিবিদ অন্তর্বর্তী সরকারকে দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।

রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ দিলেও তা আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে দিচ্ছে না। বিভিন্ন জনসভা, মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকেই মূলত এসব দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতারা দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন। 

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন-পরবর্তী সময়ে জামায়াতের আমির বলেছিলেন, সরকার প্রয়োজনে যতদিন খুশি থাকবে। একই সমান্তরালে সুর চড়িয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বলেছিলেন দেশের স্বার্থে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকা নিয়ে সহযোগিতা করবে। এই নেতাদের সুরে এখন যেন চিড় ধরেছে। নির্বাচন ইস্যুতে তাদের সুরে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে।

দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে অন্তর্বর্তী সরকার আহ্বান জানিয়েছেন  জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গত ২১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কার জরুরি। তবে মাথায় রাখতে হবে, নির্বাচন বিলম্বিত হলে তার খেসারত গুনতে হতে পারে সরকারসহ পুরো জাতিকে।’

জাতীয় স্বার্থে সব মত ও পথের মানুষকে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ্য হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ‘সাম্য ও ন্যায়ের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চায় জামায়াতে ইসলামী।’

জামায়াত নেতার মতো একই দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। গত ১৬ সেপ্টেম্বর (সোমবার) রাজধানীর ডিআরইউ মিলনায়তনে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি)  আলোচনা সভায় বিএনপির এই নেতা  বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বেশিদিন থাকলে জনগণ তা মেনে নেবে না।’

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সূত্র ধরে ফখরুল বলেন, ‘একটি জরিপে বলেছে ৮০ শতাংশ লোক চায় যে যতদিন খুশি এই সরকার থাকবে। আমি জানি না এই কথা তারা কোথা থেকে পেল, কিভাবে পেলো। কিন্তু জনগণ এটা কোনোদিনই মেনে নেবে না।’

ওই জরিপের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল আরও বলেন,  ‘আমি পত্রিকার নাম বলছি না, একটা জরিপের বরাত দিয়ে লিখেছে। এই জরিপ কারা করেছে আমি ঠিক বলতে পারবো না। এ ধরনের কথা, রিপোর্ট করা থেকে আমার মনে হয় ভেবেচিন্তে করা উচিত; যেন বিভ্রান্তি সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়টা আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’

ফখরুল বলেন,  ‘বেশ কিছু সংগঠন, গোষ্ঠী তারা ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন যে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখা হোক। তারা একেবারেই পরিবর্তন করে দেবে। সব সংস্কার তারাই করে দেবে। তাহলে তো জনগণের দরকার নাই, পার্লামেন্টের দরকার নাই।’

পূর্ববর্তী দুই নেতার মতো একই দাবি জানিয়েছেন  বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক।  ২৩ সেপ্টেম্বর ( সোমবার) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে  জাতীয়তাবাদী নবীন দলের অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের এখন একটাই দাবি, আপনারা (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) জঞ্জাল পরিষ্কার করুন। কিন্তু জনপ্রতিনিধিদের সুযোগ দিন। যারা সংসদে গিয়ে সংবিধান প্রণয়ন ও পরিবর্তন করবে। তাই অনতিবিলম্বে একটি রোডম্যাপ দিন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘যত অস্থিরতাই তৈরি করুক আওয়ামী লীগ, তাদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র আছে, অজস্র টাকা আছে, তারা এখনো সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের চোখ, কান খোলা রাখতে হবে।’

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement