আজারবাইজানের প্রথম মসজিদ
Published : ২৩:৪৪, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
আজারবাইজানের সামাক্ষি শহরে ৭৪৩ সালে নির্মাণ করা হয় ‘জুমা মসজিদ’। একে রাশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ বলা হয়। এর বয়স ১২ শ’ ৮০ বছর। কাষ্পিয়ান ও কৃষ্ণ সাগরের মাঝে ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত আজারবাইজান ১৯২০ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। সে কারণে একে রাশিয়ার মসজিদও বলা হয়।
ইসলামের প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম প্রতীক আজারবাইজানের এ জুমা মসজিদ। গোটা ককেশাস অঞ্চলে এটি দ্বিতীয় প্রাচীন মসজিদ। এর মিনার, গম্বুজ, দেয়াল, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা, অলঙ্করণের পরতে পরতে প্রাচীন রাজকীয় আভিজাত্যের ছাপ।
সৌন্দর্য মাধুর্য আর বিশালত্বের ছোয়ায় পূর্ণ এ মসজিদ দর্শনে মানুষের মনে প্রভাব বিস্তার করে উদারতা আর প্রশস্ততা। তৃপ্ত হয় নয়ন। ভরে যায় মন। কাছ থেকে না দেখলে এর আভিজাত্য আর সৌন্দর্য লিখে প্রকাশ করা বেশ কঠিন। জাতিসংঘ বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে এর নাম।
এ মসজিদের ভেতর বাইরের সবকিছুই বিশ্বের প্রাচীন এবং আধুনিক অন্য সব মসজিদ থেকে অনেকটা ব্যতিক্রম। মসজিদের অবস্থান চারদিকে বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে ভল্ট প্রাচীর ঘেরা। সামনে বিশাল শাহান ছাড়াও দুই পাশে প্রশস্ত খোলা চত্বর রয়েছে। আর মসজিদের অভ্যন্তরে সিলিং, খিলান, দেয়াল এবং গম্বুজ ও মিনারের গায়ে যে অলঙ্করণ আর সাজসজ্জা সাধারণত বিশ্বের অন্য অনেক মসজিদের থেকে ব্যতিক্রম।
শুধু ব্যতিক্রম নয়, মনোমুগ্ধকর এর সাজসজ্জা আর অলঙ্করণ। উমাইয়া খলিফাদের সময় থেকে আজারবাইজানের সামাক্ষি দাগেস্তানের দারবান্দ গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসাবে বিবেচিত হয় এবং ইসলামি সংস্কৃতি বিকশিত হয়।
যুদ্ধ আর ভূমিকম্পে অমূল্য এ মসজিদ বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেকবার সংস্কার ও পুনর্নির্মাণ করা হয় এটি। ১৯৭০ সালে প্রত্মতাত্ত্বিক খননে ধরা পড়ে সংস্কার এবং পুনর্নির্মাণে মসজিদের মূল নকশার বেশ কিছু পরিবর্তিত হয়েছে। মসজিদ কমপ্লেক্সের বেশ কিছু স্থাপনা খননের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে পরবর্তী আরেক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় বলা হয়েছে মসজিদের প্রাচীন অবকাঠামো এখনো ঠিক আছে।
১৯০৯ সালে বর্তমানে মসজিদের যে অবকাঠামো দেখা যাচ্ছে তা পুনর্নির্মাণ শুরু হয়। নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই ১৯১৮ সালে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে সামাক্ষি শহর ধ্বংস হয়। এ সময় মসজিদটির অনেকাংশ ধ্বংস করা হয়।
স্টেফানের নেতৃত্বে আর্মানিয়ান পার্টির সশস্ত্র গ্রুপ এ ধ্বংসলীলা চালায় সামাক্ষি শহরে। মসজিদের সেই পোড়া চিহ্ন এখনো সংরক্ষিত আছে। শত শত বছরের ব্যবধানে এ মসজিদের আশপাশে নগরায়ন আর নানা স্থাপনা গড়ে উঠলেও একপ্রান্তে রয়েছে পার্বত্য অঞ্চল, যা এখনো সবুজে ঘেরা আর নয়নাভিরাম।
বিডি/এন