যাদের ওপর হজ ফরজ

যাদের ওপর হজ ফরজ

ধর্ম ডেস্ক

Published : ০০:০৬, ২৮ নভেম্বর ২০২৪

২০২৫ সালের হজ নিবন্ধনের কার্যক্রম শেষ হবে আগামী ৩০ নভেম্বর। আর হাতে সময় আছে মাত্র তিন দিন। এ সময়ে অনেকেই জানতে চান, আমার ওপর হজ ফরজ কি না?

হজ বিষয়ে জরুরি মাসয়ালা

মাসয়ালা হলো, পারিবারিক জরুরি খরচ ও আর্জেন্ট ঋণ পরিশোধের টাকা ব্যতীত যদি এ সপ্তাহে আপনার কাছে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা (নগদ টাকা বা ব্যাংকে জমানো বা স্বর্ণালংকার) বা সমমূল্যের নিত্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত অন্যকোনো সম্পদ থাকে। সেই সঙ্গে আগামী ৪-৫ মাসের মধ্যে আরও ৩ লাখ টাকা জমানো সম্ভব হয় এবং পরিবারের দেড় মাসে খরচ বাবদ প্রয়োজনীয় টাকার ব্যবস্থা থাকে, তাহলে আপনার ওপর হজ ফরজ।

তাই নিবন্ধন চলাকালীন সময়ের মধ্যে হজের জন্য নিয়ত, প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে। হজে যেতে বিলম্ব করলে, এ জন্য আপনি গোনাহগার হতে থাকবেন।

তবে সম্পদের হিসাবের ক্ষেত্রে আপনার সম্পদ থেকে বিয়োগ হবে- ১. আগামী এক বছরে যেসব ঋণ বাধ্যতামূলকভাবে পরিশোধ করতে হবে, তা আপনার সম্পদ থেকে বিয়োগ হবে। ২. মধ্যমমানের পারিবারিক ব্যয় সম্পদ থেকে বিয়োগ হবে।

হজ কেন গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত

ইসলামের বিধানে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে, এমন প্রত্যেক মুসলমান নারী-পুরুষের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা শর্ত। -ফাতাওয়া শামি : ২/৪৫৫

যাদের সঙ্গে কখনও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যায় না, তারাই মাহরাম। যেমন- পিতা, পুত্র, আপন ও সত্ভাই, দাদা-নানা, আপন চাচা ও মামা, ছেলে বা নাতি, জামাতা, শ্বশুর, দুধভাই, দুধছেলে প্রমুখ। তবে একা একা দুধভাইয়ের সঙ্গে এবং যুবতি শাশুড়ির জামাতার সঙ্গে যাওয়া নিষেধ। -রদ্দুল মুহতার : ২/৪৬৪

হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। এক. মুসলিম হওয়া। দুই. বিবেকবান হওয়া, পাগল না হওয়া। তিন. বালেগ হওয়া, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া। চার. স্বাধীন হওয়া। পাঁচ. দৈহিক ও আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়া। হজের ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হওয়ার বিষয়ে সমাজে নানা ভুল ধারণা রয়েছে।

যাদের ওপর হজ ফরজ

কারও ওপর জাকাত ফরজ না হয়েও তার ওপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। হজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ। -ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫২

একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। -ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫৩

জীবনে কেন একবার হজ ফরজ

জাকাত প্রতিবছর ফরজ হলেও হজ কেন একবারই ফরজ হয়? প্রথম উত্তর হলো, কোরআন-হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত বিধানগুলোর কারণ ও রহস্য তালাশ করা ঈমানের দুর্বলতার পরিচয়। দ্বিতীয়ত, যুক্তির দিক থেকে সমস্ত আমল পুনর্বার না হওয়া উচিত। কিন্তু আদেশের পুনরাবৃত্তির কারণে ফরজটিও পুনর্বার হয়েছে। হজ ফরজ হওয়ার কারণ হলো- বায়তুল্লাহ। যেহেতু কাবা একটি, তাই হজও একবার ফরজ হয়। তৃতীয়ত, হজের মধ্যে অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় কষ্ট বেশি। এ জন্য হজকে জিহাদ বলা হয়েছে। ঋতুবতী নারীকে নামাজ ও রোজার ক্ষেত্রে অবকাশ দেওয়া হয়েছে। -আহসানুল ফতোয়া : ৪/৫৫১

হজ ও জাকাতের ফরজের পার্থক্য

জাকাত ফরজ ও হজ ফরজের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাত সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর এক বছর গত হলে ফরজ হয়। এর মধ্যে যদি বছর শেষ হওয়ার পূর্বে সম্পূর্ণ সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় বা জাকাতের নির্ধারিত পরিমাণ থেকে কম হয়ে যায়, তাহলে জাকাত ওয়াজিব হবে না। তবে হ্যাঁ, যদি সম্পদ নিসাব (জাকাত ফরজ হওয়া পরিমাণ) পরিমাণ হয়ে বছর গত হয়, তখন জাকাত ওয়াজিব হবে। এভাবে যতকাল পর্যন্ত জাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদ বহাল থাকবে, প্রতিবছর জাকাত আদায় করতে হবে।

পক্ষান্তরে হজ হওয়ার বিষয়ে বক্তব্য হলো, মক্কা শরিফে যাওয়া-আসা, থাকা-খাওয়া, কোরবানি ইত্যাদি যাবতীয় খরচ এবং বাড়ি ফেরা পর্যন্ত পরিবারের যাবতীয় ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা কারো থাকলে তার ওপর হজ ফরজ হয়। এই পরিমাণ অর্থের মালিক যদি জীবনে একবারও হয়, এরপর তা কোনো কাজে ব্যয় হয় অথবা চুরি হয়ে যায়, তাহলেও হজের ফরজ তার ওপর বহাল থাকবে। এমনকি ভবিষ্যতে মৃত্যু পর্যন্তও যদি সে এই পরিমাণ অর্থ সঞ্চয় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে হজের ফরজ তার জিম্মায় বহাল থাকবে। মৃত্যুর সময় অসিয়ত করে যাওয়া তার জন্য আবশ্যক হবে। যেন তার মৃত্যুর পর তার পরিত্যক্ত সম্পত্তি হতে শরিয়ত মোতাবেক বদলি হজ করানো হয়।

তা ছাড়া হজ সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর জীবনে একবার ফরজ হয় আর জাকাত সামর্থ্যবান ব্যক্তির ওপর প্রতিবছর ফরজ হয়।

হজ ও ঋণ

ঋণগ্রস্তদের ওপর হজ ফরজ নয়। যদি কারো দীর্ঘমেয়াদী ঋণ থাকে এবং তাদের প্রতি মাসে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়, যদি তারা সমস্ত ঋণ পরিশোধ করে দেয় এবং হজ করার জন্য তাদের কাছে কিছুই অবশিষ্ট না থাকে তবে তাদের ওপর হজ ফরজ হবে না। কিন্তু যদি তারা শুধুমাত্র তাদের মাসিক পাওনা পরিশোধ করে এবং তারপর হজ করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ থাকে তবে তাদের হজ করা উচিত কারণ এটি তাদের ওপর ওয়াজিব। যদি কেউ ঋণগ্রস্ত হয় এবং তার পাওনাদার তাকে হজে যাওয়ার অনুমতি দেয় তবে তারা হজ করতে পারবে। যদি কেউ হজ করার জন্য ঋণ নেয় এবং হজ করে, তবে তার হজ বৈধ, যদিও তাদের এটি করা আবশ্যক ছিল না এবং তাদের ওপর হজ ফরজ ছিল না।

নিরাপত্তা

যদি হজের জন্য ভ্রমণ করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়, যেমন যুদ্ধ বা এরকম কিছু অবস্থা বিরাজ করে, তবে তখন হজ করতে হবে না কারণ তারা নিরাপদে তা করতে অক্ষম।

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement