থাই ভাষায় কোরআনের প্রথম অনুবাদক আবদুল্লাহ মোস্তফা
Published : ২৩:৩৩, ১ ডিসেম্বর ২০২৪
থাইল্যান্ডের বিশিষ্ট মুসলিম ব্যক্তিত্ব আবদুল্লাহ মোস্তফা। বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণে রাজকীয় মেহমান হিসেবে পবিত্র উমরা পালনের জন্য বর্তমানে তিনি সৌদি আরব অবস্থান করছেন।
সৌদি সফরে এসে সংবাদ মাধ্যম এসপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তার জীবন ও কর্মজীবন গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য সৌদি আরবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, আজ থেকে ঠিক পঞ্চাশ বছর আগের কথা। তখন আমি যুবক, মদিনার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পেয়ে সৌদি আরবে জীবন বদলের যাত্রা শুরু করি। তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সৌদি আরবে কাটানো সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করছিলেন।
মোস্তফা বলেন, এখনকার মদিনা মোনাওয়ারা যে চমৎকার কাঠামোয় দাঁড়িয়ে, তখন ছিল সম্পূর্ণ এর বিপরীত।
আবদুল্লাহ মোস্তফা সৌদি আরবে ১৬ বছর পড়াশোনা করেন। ধর্মীয় পণ্ডিতদের সান্নিধ্যে থেকে ইসলামি শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি ইসলামি আইনশাস্ত্র ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল, থাইল্যান্ডের প্রধান ধর্ম বৌদ্ধ ধর্ম বোঝার ওপর এবং ইসলাম প্রচারের জন্য কার্যকর কৌশল তৈরি সম্পর্কে।
পড়াশোনা শেষে থাইল্যান্ডে ফিরে এসে তিনি ইসলামের বাণী প্রচারের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। তিনি থাই ভাষায় পবিত্র কোরআন অনুবাদ করেন, তার এই মহান কাজ বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে তাকে ব্যাপক জনপ্রিয় করে তোলে। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে অসংখ্য মানুষ ধর্মান্তরিত হয়েছেন, যা থাইল্যান্ডে মুসলিম সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করেছে।
আলাপচারিতায় আবদুল্লাহ মোস্তফা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কল্যাণে সৌদি আরবের অবস্থান বিশেষ করে শিক্ষা ও ইসলামি আইনশাস্ত্রসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অবদান ও ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে মোস্তফা আশা প্রকাশ করেন, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তার মেয়ে ইসলামের সেবা করার উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখবে।
তিনি শিক্ষার প্রতি সৌদি আরবের প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির কথা স্বীকার করেন এবং নারী শিক্ষায় মুসলিম পণ্ডিতদের আরও ভূমিকা আশা করেন।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ডে মুসলিমরা ধর্মীয়ভাবে সংখ্যালঘু হলেও ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতিতে তাদের আছে সুদীর্ঘ ঐতিহ্য। থাইল্যান্ডে ইসলামের আগমন ঘটে দশম খ্রিস্টাব্দে আরব ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে।
থাইল্যান্ড মূলত বৌদ্ধদের দেশ। ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠী তেরাভাদা বৌদ্ধধর্মে বিশ্বাসী। ইসলাম এ দেশে বিকাশমান ধর্ম। সাত কোটি জন-অধ্যুষিত থাইল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ লাখ।
গোটা থাইল্যান্ডে মসজিদের সংখ্যা তিন হাজার ৪৯৪। শুধু ব্যাংককেই রয়েছে ১৭০টি মসজিদ। নামাজির সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতও চলছে পুরোদমে।
থাইল্যান্ডে সাংবিধানিকভাবে ধর্মচর্চা, ধর্মশিক্ষা ও ধর্মপ্রচারে কোনো বাধা নেই। রাজকীয়ভাবে পাঁচটি ধর্মকে সহযোগিতা করা হয়। এগুলো হলো- বৌদ্ধ, ইসলাম, খ্রিস্টান, হিন্দু ও শিখ।
থাইল্যান্ডের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে সুদমুক্ত ইসলামি ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ক্রমেই। ২০০২ সালের ২১ অক্টোবর ইসলামিক ব্যাংক অব থাইল্যান্ডের যাত্রা শুরু। রাজধানী ব্যাংককের সুকুমভিত বাণিজ্যিক এলাকায় এর সদর দপ্তর অবস্থিত। শরিয়া আইনের ভিত্তিতে ব্যাংকটি পরিচালিত হয়ে আসছে। গোটা থাইল্যান্ডে এর শাখা রয়েছে ১৩০টি। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এই ব্যাংকে লেনদেন করতে কোনো বাধা নেই।
বিডি/এন