দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম: অর্থায়ন ও নতুন উদ্যোগে সম্ভাবনা
Published : ১৩:৪০, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তরুণ উদ্যোক্তা ও নতুন উদ্যোগের সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২৩ সালে প্রায় ৩০০টিরও বেশি স্টার্টআপ সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, যেগুলো প্রযুক্তি, ফিনটেক, ই-কমার্স, এডুটেক এবং স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে উদ্ভাবনী সমাধান প্রদান করছে।
অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ ও নতুন প্রেক্ষাপট:
বাংলাদেশে স্টার্টআপগুলোর মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হল অর্থায়নের অভাব। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে, তথাপি প্রচুর স্টার্টআপ পর্যাপ্ত তহবিলের অভাবে টিকে থাকতে পারছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্টার্টআপরা সিড এবং সিরিজ এ অর্থায়নে সংগ্রাম করে।
প্রাথমিক পর্যায়ে সরকার এবং ব্যাংকগুলোর ভূমিকা এখনও সীমিত। তবে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনা এবং উদ্যোগের ঘোষণা আশার আলো জাগাচ্ছে।
নতুন স্টার্টআপগুলোর জন্য ব্যাংক এবং নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ পাওয়া সহজ না হলেও সাম্প্রতিককালে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এবং অ্যাঞ্জেল ইনভেস্টরদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ড্রাগন ক্যাপিটাল এবং গ্র্যাব ফিনটেকের মতো কিছু বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছে, যা স্থানীয় উদ্যোগগুলোকে উৎসাহিত করছে।
উন্নতির নতুন দিগন্ত:
বাংলাদেশে ই-কমার্স, ফিনটেক এবং এডুটেক খাতগুলোর প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যাচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে স্টার্টআপগুলোর মোট মূল্যমান ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, যেখানে ফিনটেক এবং এগ্রো-টেক খাতে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নয়নে কৌশলগত পদক্ষেপ প্রয়োজন। বিশেষত, টেকনিক্যাল দক্ষতা বৃদ্ধি, মানসম্পন্ন মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম এবং সরকারী সহায়তা—এই তিনটি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা জরুরি। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হলে সরকারকে ট্যাক্স এবং লাইসেন্সিং ব্যবস্থায় আরো উদার হতে হবে।
সরকারের ভূমিকা:
বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১০০টি স্টার্টআপে অর্থায়নের পরিকল্পনা করছে। এছাড়াও, বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করছেন, প্রযুক্তিগত শিক্ষা এবং মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের উন্নয়নে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এবং আইসিটি বিভাগের যৌথ উদ্যোগে সম্প্রতি ‘স্টার্টআপ ফান্ড’ চালু করা হয়েছে, যা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে।
অগ্রগতির পথে চ্যালেঞ্জ:
স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের অগ্রগতির পথে এখনও বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। উপযুক্ত ইনফ্রাস্ট্রাকচার, মানসম্পন্ন মেন্টরশিপ এবং বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করা- এগুলো এখনকার প্রধান বাধা। তবে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সরকারের সহায়তায় এই বাধাগুলোকে অতিক্রম করা সম্ভব।
বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এখন পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। অর্থায়ন ও সাপোর্ট সিস্টেমের উন্নতি হলে নতুন উদ্যোগগুলোর ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হতে পারে। তবে এজন্য সরকার, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তাদের একত্রে কাজ করতে হবে এবং একটি স্থায়ী ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
বিডি/ও