ময়ূর ও বিদেশি জাতের মুরগি পালন, বদলেছে জাহাঙ্গীরের ভাগ্য
Published : ১৬:২০, ১৩ নভেম্বর ২০২৪
উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর হোসেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। ছোট থেকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিল। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর আর্থিক সংকটের কারণে আর পড়ালেখা করতে পারেননি তিনি। পরে কাজের সন্ধানে মালদ্বীপে পাড়ি জমান। সেখানে তেমন সুবিধা করতে না পেরে অনেকটা নিঃস্ব হায়েই দেশে ফিরে আসেন।
এরপর আবার উন্নত দেশে যেতে চান তিনি। কিন্তু সেখানে দালালের খপ্পরে পড়ে প্রথমে ভারত যান। সেখানে যাওয়ার পর তার মনে হয় এই পথটা খুবই বিপজ্জনক। পরে সেখান থেকে তিনি আবারও দেশে ফিরে আসেন। এরপর জীবনের প্রয়োজনে দিনমজুর হিসেবে কাজ করেন অনেক দিন। বিভিন্ন মুরগির খামারে কাজ করে৷ খামারিদের কাছ থেকে মুরগি পালনের অভিজ্ঞতা অর্জন করে খামার থেকে উপহার পান দুই জোড়া বিদেশি জাতের মুরগি। সেই মুরগি দিয়েই নিজের বাড়িতে ২০১২ সালে শুরু করেন খামার।
কালুখালী উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের বাংলাদেশ হাট গ্রামে জাহাঙ্গীরের সেই খামারে ময়ূরের পাশাপাশি রয়েছে প্রায় ৭০ প্রজাতির বিদেশি মুরগি। এসব মুরগির মধ্যে রয়েছে উইন্ডোট, সেব্রাইট, ব্রাহামা, সিল্কি, পলিস ক্যাপ, সেরমাসহ বিভিন্ন জাতের মুরগি। এসব মুরগি ২০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে বিক্রি হচ্ছে লাখ টাকায়।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ২০১৬ সাল থেকে ব্যবসায়িকভাবে মুরগি পালন শুরু করি৷এখন আমার খামারে ৭০ জাতের ২০০ থেকে ৩০০ মুরগী রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জাতের হাঁস-পাখির পাশাপাশি আমার এখানে ৯টি ময়ূরও রয়েছে। তবে এখন ময়ূরের ডিম পাড়ার মৌসুম না। ময়ূর সাধারণত মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে ডিম দেওয়া শুরু করে। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রমও থাকে। আমার খামারে এখন দুটি ময়ূর ডিম দিচ্ছে। একদিন দুদিন পরপর ডিম দেয়। ময়ূরের দামটা বয়স অনুযায়ী নির্ধারণ করা হয়। দুই বছরের বেশি যেগুলো রয়েছে সেগুলো আশি থেকে এক লাখ টাকা জোড়া বিক্রি করি। আর ছোটগুলো ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা বয়স অনুযায়ী। প্রতি মাসে এক লাখ টাকার মতো খরচ আছে। খরচ বাদ দিয়ে কোন মাসে ৫০ হাজার, কোন মাসে ৭০ হাজার, কোনো মাসে এক লাখ টাকাও আয় হয়। যারা বেকার আছেন কাজকর্ম পাচ্ছেন না চাকরি পাচ্ছেন না, তারা ইচ্ছা করলে আমার মত এক থেকে দুই জোড়া মুরগি নিয়ে খামার শুরু করতে পারেন। আমি আশা করি এটা করলে বেকারত্ব দূর হবে।
রাজবাড়ীর কালুখালীর নবাগত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম রতন এ বিষয়ে বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেন সৌখিন খামারি হিসেবে খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমি ইতোমধ্যে তার খামারে গিয়েছি। বিদেশি মুরগি অনেকে পালন করেন, কিন্তু জাহাঙ্গীরের খামারে যে মুরগি রয়েছে তা ব্যতিক্রম। তিনি নিজেই মুরগির ডিম হ্যাচিং করে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করেন। যারা শিক্ষিত বেকার রয়েছে তারা জাহাঙ্গীরের থেকে পরামর্শ নিয়ে এভাবে বিদেশি মুরগি পালন করলে স্বাবলম্বী হতে পারেন। জাহাঙ্গীর আধুনিকভাবেই মুরগিগুলো লালন পালন করছে। আমরা উপজেলা প্রাণিসম্পদ থেকে তাকে যখন যা সহযোগিতা লাগবে পাখি লালনপালন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরামর্শসহ আমরা সব সেবা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
বিডি/এন