অস্থির ইলিশের বাজার, নেপথ্যে অসৎ উদ্দেশ্য

অস্থির ইলিশের বাজার, নেপথ্যে অসৎ উদ্দেশ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published : ১১:২৪, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজধানী ঢাকা সহ বাংলাদেশের ইলিশের বাজার অস্থির। জাতীয় এই মাছ দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্চ মূল্যে বিক্রিয় করা হচ্ছে। বাজার অভিযানে এসে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জানালো, ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির খবরে অসাধু ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে এর দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

দেশের অন্তর্বর্তী সরকার ভারতে রফতানি করা হবে না ঘোষণা দিয়েও অবশেষে দেশটিতে দুর্গাপূজা উপলক্ষে পাঠাচ্ছে ইলিশ । বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ২১ সেপ্টেম্বর ভারতে ৩ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ রফতানির অনুমোদন দেয়।

সরকার রফতানির ঘোষণা দেওয়ার পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। নেটিজেনরা পক্ষে-বিপক্ষে মতামত প্রকাশ করতে থাকেন। এ আলোচনা রাস্তাঘাট, কিংবা হাটেবাজারেও থেমে নেই। তবে এ সুযোগে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

রফতানির অনুমতি পাওয়ার পর ইলিশ মজুত করতে শুরু করেছেন আড়তদাররা। এ তথ্য জানিয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কেউ কেউ ভারতে পাঠাতে মজুত করছেন, কেউ আবার সংকটের সময় বিক্রির আশায়।

রাজধানীর রামপুরা বাজারের মাছ ব্যবসায়ী মতিন জানান, অনেকেই এখন ইলিশ মজুত করা শুরু করেছেন। সামনে দুর্গাপূজা, আর আগামী মাস থেকে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকবে ২২ দিনের জন্য। মাছটি মজুতের প্রবণতা শুরু হওয়ায় বাজারে কমছে এর সরবরাহ; ফলে বাড়ছে দাম।

এদিকে ক্রেতারা বলছেন, উচ্চমূল্যের কারণে মাছে-ভাতে বাঙালির কাছে বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য বস্তুতে পরিণত হয়েছে জাতীয় মাছ ইলিশ। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাজারে স্বস্তি ফেরাতে হবে।

বাজারে ইলিশের দাম আকাশ ছোঁয়া। খুচরা পর্যায়ে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ইলিশ ১৭০০-১৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা ও ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকা পর্যন্ত।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এই পরিস্থিতিতে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ভোরে বাংলাদেশের বিভিন্ন ইলিশের বাজার ও আড়তগুলোতে অভিযানে নামে। প্রতিষ্ঠানটির দুটি বিশেষ টিম রাজধানী কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ি পাইকারি মাছের আড়তে অভিযান চালায়।

বাজার অভিযানে এসে ইলিশের বাড়তি দামের বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, আড়তদাররা যে দামে ইলিশ বিক্রি করছেন, সেটি যৌক্তিক কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। বিক্রির পাকা রশিদও দেওয়া হচ্ছে না। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।

যৌক্তিক লাভ করেই ব্যবসায়ীদের ইলিশ বিক্রি করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার ভারতে ইলিশ মাছ রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ খবর জানা মাত্রই মাছ ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে কেজিপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এসব নির্মূল করতে হবে।

আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা ১৫৫০ টাকায় কিনে ২২০০ টাকায় ইলিশ বিক্রি করছেন। প্রায় ৬৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন। মুনাফার অতি লোভের করুণ চিত্র এখন মাছ বাজারে। সারা দেশে একই অবস্থা। এতে ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে ইলিশ ।

অভিযান শেষে আবার বাড়তি দামেই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের এই কর্মকর্তা বলেন, দামের পাশাপাশি ওজনেও কারসাজি করা হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা এর মাধ্যমেও ভোক্তাদের ঠকিয়ে আসছেন।

অভিযান শেষে জাতীয় ভোক্তা অধিকারের তদারকি দল জানায়, ‘কেনাবেচার রশিদ সংরক্ষণ করা গেলেই আবারও সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে এ মাছটি। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। জেল-জরিমানা করে এসব ঠিক করা যাবে না। আমরা অ্যাকশনে যেতে চাই না।’ 

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement