‘আমদানি করা খেজুরের মূল্য নির্ধারণ ত্রুটিপূর্ণ’

‘আমদানি করা খেজুরের মূল্য নির্ধারণ ত্রুটিপূর্ণ’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

Published : ১৩:৪৭, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

খেজুর আমদানিতে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) শুল্ক মূল্য বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। সেই সঙ্গে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শুল্কায়নযোগ্য মূল্য নির্ধারণকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে করে সংস্থাটি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।

বর্তমানে খেজুর আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের শুল্ককরের পরিমাণ ৬৩.৬০ শতাংশ। উচ্চ শুল্কহার ছাড়াও আজওয়া, মরিয়ম, মেডজুল, মাবরুর ও রেফার কনটেইনারে আমদানি করা সব ধরনের খেজুর শুল্কায়নে কেজিপ্রতি ১-৪ ডলার পর্যন্ত পরিশোধ করতে হয়। 

ট্যারিফ কমিশন বলছে, বাংলাদেশে উন্নত, মধ্যম ও সাধারণ মানের খেজুর আমদানি করা হয়। রেফার কনটেইনার ব্যবহার করলে মান ঠিক থাকায় এভাবেই খেজুর আমদানি হয়। বিদ্যমান ব্যবস্থায় রেফার কনটেইনারে আমদানির ক্ষেত্রে প্রতি কেজি খেজুর চার ডলারে শুল্কায়ন হচ্ছে, যা প্রকৃত আমদানি মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি।

সম্প্রতি সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি সাধারণ মানের ১৫৬০ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি করে। প্রতি মেট্রিক টনের দাম ৮১৫ ডলার। ১২২ টাকা ডলারের বিনিময় মূল্য হিসাব করলে প্রতি কেজির মূল্য দাঁড়ায় ৯৯.৪৩ টাকা, যা অনেক বেশি।

তাই আমদানি করা খেজুরের ক্ষেত্রে যথাযথ শুল্কায়ন বিধিমালা অনুসরণ করে প্রকৃত বিনিময়মূল্যকে প্রাধান্য দিয়ে শুল্কায়ন করা হলে স্থানীয় বাজারে পণ্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে থাকবে।

কমিশনের পাঠানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে বর্তমানে খেজুরের চাহিদা প্রায় এক লাখ মেট্রিক টন এবং এর ভেতর শুধু রমজান মাসেই এই চাহিদা প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

২০২২-২৩ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খেজুর আমদানির পরিমাণ যথাক্রমে ৮৬ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন ও ৮০ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন। যার আমদানি গড় মূল্য (শুল্ককর ব্যতীত) যথাক্রমে ৩৩৬ টাকা ও ৪৯৭ টাকা প্রতি কেজি।

অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে (জুলাই-অক্টোবর) খেজুর আমদানির পরিমাণ ২৮৯ মেট্রিক টন, যার গড় আমদানি মূল্য (শুল্ককর ব্যতীত) ৪৩৩ টাকা প্রতি কেজি। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে খেজুর আমদানির পরিমাণ কিছুটা কমেছে।

ট্যারিফ কমিশনের পর্যবেক্ষণ বলছে, দেশে বর্তমানে খেজুরের চাহিদা প্রায় এক লাখ থেকে এক লাখ ১০ হাজার টন। রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা প্রায় ৫০-৬০ হাজার টন। খেজুর মূলত সৌদি আরব, আরব আমিরাত, তিউনিশিয়া, মিসর, জর্দান, ইরাক, ইরান ও পাকিস্তান থেকে আমদানি করা হয়।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব ধরনের খেজুর আমদানিতে সিডি ২৫ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ, এআইটি ১০ শতাংশ, আরডি ৩ শতাংশ ও এটি ৫ শতাংশসহ মোট শুল্কের পরিমাণ ৬৩.৬০ শতাংশ।

খেজুর আমদানিতে উচ্চহারে অগ্রিম আয়কর (১০ শতাংশ) ও আগাম কর (৫ শতাংশ) বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক নয় বলে মনে করে ট্যারিফ কমিশন।

আসন্ন পবিত্র রমজান উপলক্ষে খেজুরের আমদানি শুল্ক ও অগ্রিম কর কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন। রোজায় খেজুরের দাম সহনীয় রাখতে কমিশনের সুপারিশ, খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫-১৫ শতাংশ এবং অগ্রিম কর ১০ থেকে ৩ শতাংশ করা হোক। এছাড়া আগাম কর (৫ শতাংশ) ৩১ মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত সময়ের জন্য অব্যাহতির সুপারিশ কমিশনের।

গত বছরের শুল্ক ছাড় প্রসঙ্গ টেনে কমিশন বলেছে, ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি এসআরও জারি করে খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছিল।

তবে রমজান শুরুর ঠিক কয়েক দিন আগে এই সুযোগ দেওয়ায় তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। তাই রমজান শুরুর তিন মাস আগে শুল্কছাড় দেওয়া প্রয়োজন। যাতে রেয়াতি সুবিধাপ্রাপ্ত খেজুরের সরবরাহ বাজারে থাকে।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement