ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপছেপড়া ভিড়

ছুটির দিনে বাণিজ্যমেলায় উপছেপড়া ভিড়

নিজস্ব প্রতিবেদক

Published : ০১:১৮, ৪ জানুয়ারি ২০২৫

গত ১ জানুয়ারি শুরু হয়েছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। মাসব্যাপী আয়োজিত মেলার ১ম ছুটির দিনে আজ শুক্রবার ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের ঢল নামে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে রাজধানীর পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারের মেলাপ্রাঙ্গণ ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে ছিল উপছেপড়া ভিড়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের আগমন। বিকাল ৫টায় বাণিজ্যমেলা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

মেলার প্রধান প্রবেশদ্বার তৈরি করা হয়েছে ‘৩৬ জুলাইয়ের’ স্মৃতির আদলে। প্রধান প্রবেশদ্বারের পূর্ব পাশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের প্রতি সম্মান রেখে তৈরি করা হয়েছে ‘জুলাই চত্বর’ ও মূল ভবনের উত্তর পাশে ‘৩৬ চত্বর’। ভেতরে রয়েছে ইয়ুথ প্যাভিলিয়ন (তারুণ্যের বাংলাদেশ)। দর্শনার্থীদের বসার জন্য রয়েছে তিনটি সিটিং জোন। ব্যাংকিং লেনদেনের জন্য রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের একাধিক বুথ।

মেলায় আসা শিশুদের জন্য রয়েছে শিশুপার্ক। পর্যবেক্ষণের জন্য ২৩৪টি সিসিক্যামেরার পাশাপাশি রয়েছে পাঁচটি ওয়াচ টাওয়ার। সতর্ক অবস্থায় রয়েছে পুলিশের একাধিক টিম। রাজধানীসহ নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার লোকজন যেন নির্বিঘ্নে মেলায় আসতে পারেন সেজন্য অন্যান্য বছরের মতো রয়েছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস।

বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মেলায় রয়েছে দেশি-বিদেশি ৩৬১টি স্টল। টেক্সটাইল, পাট ও পাটজাত পণ্য, কার্পেট, প্রসাধনী, চামড়া ও কৃত্রিম চামড়াজাত পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য বাণিজ্যমেলার স্টলে স্থান পেয়েছে।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) প্রথম সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অনেকেরই মেলায় আসার প্রস্তুতি ছিল। তাই অধিকাংশ দর্শনার্থীই অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করেছেন। ফলে মেলার প্রবেশদ্বারে ঠেলাঠেলি কিংবা চাপের মুখে পড়তে হয়নি। ছুটির দিন থাকায় সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা মেলায় আসতে শুরু করেন। জুমার নামাজের পর দল বেঁধে তারা মেলায় প্রবেশ করেন। বিকালে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নে উপচে পড়া ভিড় জমে। ক্রেতা ও দর্শনার্থীরা স্টলগুলোতে তাদের পছন্দের পণ্য ঘুরে দেখেন ও কেনাকাটা করেন। বেশি ভিড় ছিল কাপড়, অলংকার, শো-পিস, তৈজসপত্র, কুটির শিল্প ও ইলেতট্রনিক্স পণ্যের স্টলে। বিক্রিও হয়েছে প্রচুর।

আজ দর্শনার্থীদের পদচারণা ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুরের পর থেকে বাড়তে থাকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগম। স্টলগুলোতে নারীদের ভিড় ছিল বেশি। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেকেই মেলায় এসেছেন। পছন্দের জিনিস কিনেছেন। প্লাস্টিক পণ্য, ক্রোকারিজ, ইমিটেশনের গয়না, শাড়ি, থ্রি-পিস, কসমেটিকসের স্টলগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় ছিল বেশি। মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন অফার থাকায় ক্রেতারা আকৃষ্ট হচ্ছেন। মেলায় শিশুদের জন্য রয়েছে নজরকাড়া ডিজাইনের পোশাক, জুতা ও খেলনা। বিকাল ৩টার মধ্যেই মেলাপ্রাঙ্গণ ভরে যায়। নানা শ্রেণির ও নানা বয়সের মানুষের উপস্থিতিতে মুখর হয়ে ওঠে মেলাপ্রাঙ্গণ।

বাণিজ্য মেলায় রাজধানীর খিলগাঁও থেকে আসা মার্কিন প্রবাসী ফারুক আহম্মেদ বলেন, ছুটির দিন থাকায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলায় এসেছি। প্রাকৃতিক পরিবেশ আর খোলামেলা জায়গায় মেলার আয়োজন হওয়ায় প্রচুর লোকজনের সমাগম হয়েছে। মেলা উপভোগ করছি। পরিবারের সদস্যরা খুশি। আমারও ভালো লাগছে। মেলা কেন্দ্র করে তার আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে আসা সার্থক হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

কুমিল্লা থেকে আসা ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ভুলতা থেকে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যানজট থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছি। এখানে ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা প্রয়োজন। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন রানি বেগম। গৃহস্থালি পণ্য কিনেছেন তিনি। প্রথম দিকে দর্শনার্থীদের চাপ কম থাকবে এমন আশায় মেলায় এসেছেন। কিন্তু লোক সমাগম এত বেশি ছিল যে, চলাচল করতে তার কষ্ট হয়েছে বলে জানান।

গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে আসা গৃহবধূ নারগিস আক্তার বলেন, মেয়েটি কয়েক দিন ধরে মেলায় আসতে চাচ্ছে। কনকনে শীত আর কুয়াশার জন্য মেলায় আসিনি। ছুটির দিন পেয়ে শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে মেলায় এসে আনন্দ পাচ্ছি।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, ব্যবস্থাপনা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থাকায় এবার মেলার পরিবেশ অনুকূলে রয়েছে। শুরুতেই সাপ্তাহিক ছুটি পড়ায় শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের সমাগম বেড়েছে। কাক্সিক্ষত দর্শনার্থীদের আগমনে সবাই খুশি। অবশ্যই বাণিজ্যমেলা ব্যবসা সফল হবে।

বিডি/এন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement