৩৫০০ বছর আগেও ব্যবহার হতো কনডম!
Published : ১৩:২২, ৭ জানুয়ারি ২০২৫
জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্যতম উপাদান কনডম। বিশ্বের অনেক দেশে জন্মনিয়ন্ত্রণের স্বার্থে কনডম ব্যবহারের উৎসাহিত করে সরকার। ‘কনডম’ (Condom) এই শব্দটি শুনলেই অনেকেই রীতিমতো সঙ্কোচের মধ্যে পড়ে যান। এমনকি, এই সংক্রান্ত আলোচনাতেও ‘অদ্ভুত অস্বস্তি’-র মুখোমুখি হন কেউ কেউ। যদিও, বর্তমান সময়ে এই সংক্রান্ত রাখঢাক কাটাতে এবং কনডমের ব্যবহারের সুফল সম্বন্ধে জানাতে সচেতনতামূলক প্রচার করা হচ্ছে সর্বত্র। এমতাবস্থায়, অনেকেই মনে করতে পারেন যে, কনডমের আবিষ্কার হয়তো আধুনিক যুগেই ঘটেছে। যদিও, ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা।
ইতিমধ্যেই একাধিক ঐতিহাসিক দাবি করেছেন যে, ১১ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে ফান্সের গুহাচিত্রে কনডম ব্যবহারের প্রথম নিদর্শন পাওয়া গেছিলো। অর্থাৎ, তখনো জন্ম নিয়ন্ত্রণ এবং যৌন রোগ থেকে বাঁচতে কনডমের ব্যবহার ছিল।
এদিকে, প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে বিখ্যাত রাজা তুতেনখামেনের নাম শোনেননি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ১৯২২ সালের ৪ নভেম্বর তুতেনখামেনের সমাধির আবিষ্কার করে ফেলেন এক শ্রমিক। এমতাবস্থায়, ওই সমাধিস্থল আবিষ্কারের পর তার ভেতরে ঐশ্বর্য দেখে রীতিমতো স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক হাওয়ার্ড কার্টার।
এমতাবস্থায়, ওই সমাধিতে মমির সঙ্গেই পাওয়া গিয়েছিল একটি ছোট চামড়ার থলি। পাশাপাশি, সেটিকে কোমরে বেঁধে নেওয়ার ফিতেও ছিল। গবেষণার পরে বোঝা গিয়েছিল যে, ওই জিনিসটি আসলে একটি আদি কনডম। অর্থাৎ, কয়েক হাজার বছর আগে প্রাচীন মিশরীয়রাও কনডমের ব্যবহার জানতেন।
শুধু তাই নয়, ওই কনডমের মধ্যে পাওয়া DNA পরীক্ষা করে জানা যায় যে, সেটি স্বয়ং তুতেনখামেনেরই ব্যবহৃত। পাশাপাশি, ওই কনডমটি গরুর পাতলা চামড়া দিয়ে তৈরি ছিল। অর্থাৎ, সেটি গর্ভনিরোধক সরঞ্জাম হিসাবেই মমির সঙ্গে সমাধিতে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, তুতেনখামেনের মমিতে সন্ধান মেলা এই কনডম ইতিহাসের প্রাচীনতম আবিষ্কৃত কনডম হিসাবে বিবেচিত হয়।
জানা যায়, প্রাচীন কালেই মিশরবাসী বিভিন্ন রঙের কনডমের ব্যবহার শুরু করেছিলেন। মূলত, তৎকালীন যুগে বিভিন্ন সামাজিক স্তরের লোকজনের জন্য নির্দিষ্ট বর্ণের কনডমের প্রচলন ছিল। পাশাপাশি, কায়রো লাইব্রেরি এবং পুরোনো কিছু গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, প্রাচীনকালে গ্রিসের ক্রিট দ্বীপের রাজা মিনোস এক গভীর সমস্যায় পড়েছিলেন। ওই রাজার সঙ্গে সঙ্গমের পরেই মারা যাচ্ছিলেন রানিরা। সেই এই সময় রাজার বুদ্ধিমতী রানি পাসিফি একটি দুর্দান্ত উপায় বার করেন। তিনি শুয়োরের পাতলা চামড়া নিজের যৌনাঙ্গে লাগিয়ে রাজার সঙ্গে মিলিত হতেন। যার ফলে প্রাণে বাঁচার পাশাপাশি ৮ টি সন্তানের জন্মও দেন তিনি।
এদিকে, প্রাচীন মিশরীয়রা ‘কাহুন মেডিক্যাল প্যাপিরাস’ পুঁথি অনুসরণ করে কুমিরের মলের সঙ্গে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঔষধি মিশিয়ে তৈরি করতেন গর্ভনিরোধক পদার্থ। পাশাপাশি, প্রাচীন ভারতীয়রা অবশ্য কুমিরের বদলে হাতির মল দিয়ে গর্ভ নিরোধনের চেষ্টা করতেন বলে জানা গিয়েছে। এদিকে, রোমানরা যৌন রোগ সিফিলিসের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে প্রাণীর চামড়ার ব্যবহার শুরু করেন।
তবে, নিউগিনির প্রাচীন বাসিন্দারা আবার গর্ভনিরোধক হিসেবে কিছু নির্বাচিত উদ্ভিদের নির্যাস স্ত্রীদেহে ব্যবহার করতেন। ধীরে ধীরে সপ্তদশ শতকে ইংল্যান্ডে বহুল ভাবে গর্ভনিরোধক ব্যবস্থা হিসাবে কনডমের প্রচলন শুরু হয়। পাশাপাশি, ১৮৫৫ সালে প্রথম রাবার কনডম তৈরি হয়। যদিও, সেই সময়ে কনডমের দাম অনেক বেশি হওয়ায় শুধুমাত্র সমাজের অবস্থাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই তা ব্যবহার করতেন।
এদিকে, এটি তৈরির পর রাবার কনডমের ত্রুটি রয়েছে কি না জানতে কনডমের মধ্যে গ্যাসোলিন এবং বেঞ্জিন ভরা হতো। যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর ছিল। এমতাবস্থায়, ১৯২০ সালে ল্যাটেক্স আবিষ্কারের পরই অনেকটা বদল আসে কনডমের।
বিডি/এন