জীবনসঙ্গী খুঁজতে ২০০ বছর ধরে যেখানে আসেন তরুণ-তরুণীরা

প্রথমে আলাপচারিতা, তারপর অভিভাবকদের জানানো এবং শেষে ধুমধাম করে শুরু হয় বিয়ের আয়োজন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মেয়েরা হাতে চুড়ি, কপালে টিপ, খোঁপায় গোঁজা ফুল ও রঙিন শাড়িতে অপরূপ সাজে মেলায় জড়ো হন। পছন্দের জীবনসঙ্গীর খোঁজে দূর-দূরান্ত থেকে মেলায় আসেন তরুণ-তরুণীরা। পরস্পরের পছন্দ হলেই বেজে ওঠে সানাইয়ের সুর।

জীবনসঙ্গী খোঁজার ব্যতিক্রম এ মেলা বসে দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জের গোলাপগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে। স্থানীয় লোকজনের কাছে মেলাটি বাসিয়াহাট বা বউমেলা নামে পরিচিত।

প্রায় ২০০ বছর ধরে ঐতিহ্যবাহী এ মেলার আয়োজন করছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। সাধারণত দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরদিন এ মেলা বসে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীদের পাশাপাশি সনাতন ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষও উপস্থিত হন এ মেলায়।

স্থানীয় প্রবীণদের থেকে জানা যায়, আগে মেলায় তরুণ-তরুণীরা পছন্দের মানুষ খুঁজে পেলে পরিবারের কাছে জানাতেন। পরের বছর মেলায় তাঁদের নাম-পরিচয় তুলে ধরে বিয়ের আয়োজন করা হতো। এখনো অনেকেই মেলায় ছেলেমেয়ের জীবনসঙ্গী খুঁজে পেলে হয়তো বিয়ে দেন। তবে আগের মতো বিয়েশাদির ব্যাপারগুলো এখন আর নেই। তবুও আয়োজকেরা ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

বউমেলা ঘিরে নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বিদ্যালয়ের মাঠসহ পুরো গোলাপগঞ্জ বাজার এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। জিলাপি, নিমকি, পিঠা, ফুচকা, চটপটিসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর দোকানের পাশাপাশি মেয়েদের অলংকারের দোকান, শিশুদের খেলনাসামগ্রী, গৃহস্থালির নানা সরঞ্জাম, তৈজসপত্র, মাটির তৈরি জিনিসসহ দেড় সহস্রাধিক দোকান বসে এ মেলায়।

মেলা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। দিনাজপুর ছাড়া পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলা থেকেও অনেক মানুষ মেলায় আসেন। মেলা উপলক্ষে বিদ্যালয়ের মাঠে বসে নাচ-গানের আসর। ঢোল, মন্দিরা, কাঁসর, কাড়া, হারমোনিয়ামের তালে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েরা দলীয় ও এককভাবে তাঁদের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করেন।